You dont have javascript enabled! Please enable it! গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি- প্রতিক্রিয়া | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৫ মে ১৯৮১ - সংগ্রামের নোটবুক

গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি- প্রতিক্রিয়া

সংকীর্ণতা ও অনুদারতা/ জামাতের রাজনীতি

‘গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি’ সংক্রান্ত বিচিত্রার বিশেষ প্রতিবেদনটি পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। জামাতের রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কার্যকলাপের যে চিত্র আপনারা তুলে ধরেছেন তার কী জবাব জামাতওয়ালারা দেন, তা শুনবার ও দেখবার জন্যে আমরা উদগ্রীব। ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের একচেটিয়া ইজারাদারীর মনোভাবের জন্য গোটা ইসলামপন্থী সমাজ তাদের প্রতি বিক্ষুব্ধ। আজ আমি এ সম্পর্কেই কয়েকটি তথ্য আপনার মাধ্যমে সমাজকে অবহিত করতে চাই।
প্রথমতঃ জামাতে ইসলামী নামকরণের মধ্যেই একটা উদগ্র অহংবোধের পরিচয় সুস্পষ্ট। ‘জামাতে ইসলামীর’ বাইরের সবাই যে অ-ইসলামী একথাই কি তাদের সাইনবোর্ডের পাঠকমাত্রেরই মনে একটা পীড়াবোধের উদ্রেক করে না? জামাত কর্তৃপক্ষ এ প্রশ্নের জবাবে বলে থাকেন আমরা তো আমাদের জামাতকে ‘আল-জামাত’ বা একমাত্র ইসলামী জামাত বলি না। কিন্তু আরবী ভাষাজ্ঞান যাদের আছে তাদের অজানা নেই যে, কোন বিশেষণের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত শব্দের সঙ্গে ‘আল’ যোগ না করলেও তার অর্থ ঐ বিষয়ের একমাত্র ইজারাদারদের জন্যেই কেবল প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তাহলে দেশের আলেম সমাজের শতকরা ৯৭ ভাগ যে জামাত ইসলামীর ঘোর বিরোধী তারা সবাই কি অনৈসলামী শক্তি বা ইসলামের শত্রু?
অথচ ভাগ্যের পরিহাস, আলেম সমাজ তাদের বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও যখন তাদের কোন অপকর্মের জন্যে তারা জনগণের রোষের মধ্যে পড়েন, তখন তার মাশুল দিতে হয় দাড়িটুপিধারী এই বেচারা আলেম সমাজকেই। স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকার জন্যে তাদের যেখানে মাত্র ১৭ জন রুকন ‘শহীদ’ হলেন সেখানে নিরীহ এবং কোনভাবেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এমন নিহত আলেমের সংখ্যা কয়েক শতেরও বেশি হবে। ‘মওদুদী সাহেব জবাব চাই’ পুস্তিকার মলাটে মুদ্রিত দু’টি পংক্তির কথাই আজ আমাদের বারবার মনে পড়ছেঃ
‘ মওদুদীতে দোষ করে টুপীওয়ালা মার খায়—
কান্ডজ্ঞানহীন রাজনীতি আর বিভ্রান্তির শেষ কোথায়?’

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য পল্টনের জনসভায় যেদিন জামাত-বনাম-জনতার লড়াইয়ে ৬০০ জন আহত হলেন স্বয়ং মওদুদী সাহেবের উপস্থিতিতে সেদিন কিন্তু এ পংক্তি দু’টি সম্বলিত ‘মওদুদী সাহেব জবাব দিন!’ পুস্তিকাটি অনেক জামাত কর্মীরও চমৎকার ঢাল বনে গিয়েছিল।
এই বিভ্রান্তি জামাত যেমন সৃষ্টি করে ইচ্ছে করেই নিজেদের আত্মগোপন করার স্বার্থে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মীরাও তেমনি করেন অজ্ঞতার জন্যে। তারা জানেনা যে তাবলীগী জামাত দেশের দাড়ি টুপিধারী শতকরা ৯০ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতিনিধিত্ব করে তারা সবাই ‘জামাতে ইসলামীর’ রাজনীতি এমনকি তারা ধর্মীয় দর্শনেরও ঘোর বিরোধী। মসজিদ-মাদ্রাসা খানকায় উলামা ও পীরসূফী তরীকত পন্থী সমাজে তারা একান্তই অপাংক্তেয়। যে সুফীবাদের দ্বারা বাংলা- ভারত পাকিস্তানসহ দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পর্যন্ত ইসলামের প্রচার প্রসার হলো আর যা আজো কোটি কোটি মানুষকে ধর্মের কোলে লালন করছে সেই সুফীবাদ হচ্ছে জামাতের প্রতিষ্ঠাতা দার্শনিক মওদুদী সাহেবের দৃষ্টিতে ‘রোগ জীবাণু’। মওলানা আবদূর রহীমের দৃষ্টিতে বেদাআ’ত— ধর্মের নামে ধর্মদ্রোহিতা। ( মওদুদী সাহেবের তাজদীদে ও এহইয়ায়ে দ্বীন উর্দু এবং আঃ রহীম সাহেবের সুন্নাত ও বেদআত’ পুস্তক দ্রষ্টব্য।) এমতাবস্থায় সুফীবাদের ধর্মপ্রাণ জনতা ‘জামাতে ইসলামী’র প্রতি যে বীতশ্রদ্ধ তা রাজনৈতিক কারণে যারা তাদের বিরোধী, তাদের বিরোধিতার চাইতে তীব্র। অথচ, সুফীবাদে বিশ্বাসী এই বিশাল ধর্মপ্রাণ জনতাও আজ ‘জামাতে ইসলামী’- এর উগ্রতায় বিশ্বাসী অনুদার ইসলামের ধারকদের সমপর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য হচ্ছেন— যাঁদের কল্যাণে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে দেশপ্রেমের সনদ ‘ডান্ডিকার্ড’ নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন।
ধর্মীয় মহলের জামাতের বিরোধী হওয়ার আর একটা বড় কারণ হচ্ছে ধর্মকর্মে তাদের একচেটিয়া ইজারাদারীর মনোভাব। ইসলামের নামে যেখানে যত প্রতিষ্ঠান বা কর্মকোলাহল, সবটাতেই জামাতের একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা বা একে জামাতের কীর্তিরূপে দেখানোর একটা অসহনীয় মনোভাব তাদের মধ্যে সর্বদা লক্ষ্য করা যায়— যদিও বা তাতে তার ন্যূনতম দানও না থাকে। এর একটা অর্থকরী দিক অবশ্য আছে— আর যা হয়ত তাদের একান্তই কাম্য, কিন্তু এতে আসল ইস্যুটাই মারা যায়, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নিঃস্বার্থ ইসলাম সেবী মানুষদের নিখাঁদ ধর্মীয় প্রচেষ্টা।।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আমাদের সৃষ্ট ১৯৬১-৬২ সালের ঐতিহাসিক ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনে জামাতের কোন দানই ছিল না, ছিল না তাদের কোন অর্থ সাহায্যও— আমি নিজে সে ঐতিহাসিক আন্দোলনের অন্যতন স্রষ্টা ও নিয়ামক ছিলাম বলেই একথা জোর করে বলতে পারছি— অথচ আমাদের মিছিল থেকে গ্রেফতার হলেন ‘নিখিল পাক ইসলামী ছাত্র সংঘের নাযিমে আলা মহাবুব আলী’ যিনি করাচী থেকে এসেছিলেন। আমরা কেউ তার উপস্থিতির কথা জানতাম না, অথচ আমাদেরই মিছিলের একেবারে সম্মুখের কাতার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনটি চিহ্নিত হলো জামাতীদের আন্দোলন বলে। এতে জামাতের অর্থাগমের পথ হয়তো সুগম হয়েছিল, কারণ এক লাখ ছাত্রের মিছিলে জামাতীদের অংশগ্রহণের সুযোগ ইতিপূর্বে বা পরে কোনদিনই হয়নি কিন্তু ব্যর্থ হলো আমাদের আন্দোলন। চিহ্নিত হলো একড়া রাজনৈতিক দলের উস্কানীর ফলরূপে।

১৯৬৯ সালের ‘ ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ’ ও জামাতীদের গড়া কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না, ছিল একান্তই ইসলামী জনতার প্রাণের আওয়াজ। আমরা একান্তই কতিপয় অরাজনৈতিক সমাজকর্মী ছিলাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা। অথচ স একটু শক্ত হয়ে উঠতে না উঠতেই জামাতীতা তা দখল করে নেয়। দখল করে নেয় এর নেতা একান্তই সহজ সরল মাসুম প্রকৃতির লোক মাসুম মওলানাকে। এমনকি তারা দখল বসিয়ে দেয় তার বাড়িতেও। স্বয়ং মওদুদী সাহেব এসে মোলাকাত করেন মাসুম মওলানার সঙ্গে। দেখতে দেখতে ‘ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ’ একেবারে জামাতে ইসলামের খাস তালুকে পরিণত হয়ে গেল আর আমরা যারা প্রাণের সব আবেগ আর ত্যাগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলাম তারা কে কোথায় ছিটকে পড়লাম তার কোন পাত্তাই রইলো না। জামাতীরা আমদের চিহ্নিত করলো বামপহ্নী কম্যুনিষ্ট রূপে। মওলানা মুফতী মাহমুদ- এর মত পরবর্তীকালে পাকিস্তানের সম্মিলিত বিরোধী ঐক্যজোটের (জামাতসহ) নেতা ও প্রগতিশীল আলেম পর্যন্ত কম্যুনিস্টদের দোসররূপে চিহ্নিত হলেন জামাতীদের পত্র-পত্রিকায় বক্তৃতা-বিবৃতিতে।
এমনকি যে আমি ইসলামী সংগ্রাম পরিষদের প্রাণস্বরূপ ছিলাম চকবাজার মসজিদের সভায় মরহুম মুফতী মাহমুদ ও মওলানা মোস্তফা মাদানী কর্তৃক বক্তৃতায় প্রথম আমাকে পেশ করার জের স্বরূও সে সভা থেকে বেরোবার পথেই জামাতের কর্মীরা আমাকে চিহ্নিত করলো কম্যুনিস্ট বলে। ফলে আমি শিকার হলাম জনতার রুদ্ররোষের। সেদিন যদি আজিমপুর গোরস্তান মসজিদের ইমাম মওলানা আবদুল্লাহ সাহেব আমাকে সরিয়ে নিয়ে না যেতেন তবে নিশ্চিতভাবেই আমাকে সেদিন নাজেহাল হতে হতো। মোট কথা, আমরা যারা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত তার কেউই আর রইলাম না তাদের সঙ্গে, কিন্তু তারা এর ফায়দা লুটলো। প্রকাশিত হলো দৈনিক সংগ্রাম— পূর্ব এলাকায় জামাতের নিজস্ব দৈনিক।
এই ‘সংগ্রামের’ কথায়ই আসা যাক। জামাত ছাড়া এ বাংলাদেশে তৎকালের পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামো কোন সংগঠন আছে বা ছিল এর কোন আলামত পাওয়া যায় বা গিয়েছে কোনকদিন তাদের কাগজে পড়ে? ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে স্বয়ং আমারই হাতে গড়ে ওঠেঃ বাংলাদেশ সীরত মজলিস ও ইসলামী শিক্ষা সংস্কার সংস্থা।
এই দুটো সংস্থারই আমি ছিলাম প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ছিলেন এ দুটি প্রতিষ্ঠানেরই সভাপতি। ঐ সময় ‘বাংলাদেশ জমিয়তুল মুদারিসীনের’ সদস্যাদের উপর্যুপরি অনুরোধে ঐ প্রতিষ্ঠানের সভাপতিত্বও আমাকেই গ্রহণ করতে হয়। আমাদের আহ্বানে স্বয়ং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বায়তুল মোকাররমে উদ্বোধন করেন নবী দিবসের সভার। আমারই চেষ্টায় চালু হলো বেতারে কোরান তেলাওয়াত, প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ মাদ্রাসাবোর্ড। বলাবাহুল্য, আমি এবং আমার অনুজ মওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী উক্ত মাদ্রাসাবোর্ডের প্রথম টার্মের (৭২-৭৪ই) সদস্যও ছিলাম– যা সেদিনের ‘জাতীয় সংসদের কার্য বিবরণীতেও’ স্থান পেয়েছিল। সবারই জানা সেসব কথা। জাতীয় পত্রপত্রিকায় পুরনো পাতা উল্টালেই এসব কথার সত্যতা পাঠকের সম্মুখে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আমাদের তৎকালের ইসলামী তৎপরতা’ সম্পর্কে স্বয়ং সংগ্রাম সম্পাদক আখতার ফারুক আমাকে বলেছিলেন, এ বিপদকালে আমরা সকলেই যখন জেলে ঠিক এ দুঃসময়েই ইসলামের সেবার জন্যেই বুঝি আল্লাহ তোমাদের দু’ভাইকে রিজার্ভ রেখে দিয়েছিলেন। আল্লাহর কোন কাজই হেকমত শূন্য নয়। এর আগে আমাদের (জামাতের) বিরোধিতা করার জন্য আমরা কিন্তু অত্যন্ত বিব্রত ছিলাম!’ কিন্তু এহেন সংগ্রাম পত্রিকা জামারে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজমের ভগ্নীপতি মওলানা আলাউদ্দীন আযহারীর মৃত্যুর পর এসব কৃতিত্বই মওলানা আযহারীকে দিয়ে রীতিমত উপসম্পাদকীর প্রবন্ধ ফেঁদেছিলেন যা তাদের কাগজে দু’কিস্তিতে ছাপা হয়। আমি স্বয়ং পত্রিকা অফিসে পৌছে এ মিথ্যার প্রতিবাদ করলে প্রবন্ধ লেখম জুলফিকার আহমদ কিসমতীর সঙ্গে কোন কাগজে যেন আমি এর প্রতি বাদ না করি, স্বয়ং তিনিই তা ঠিম করে দেবেন বলে অনুনয় বিনয় করেন, কিন্তু পরে তিঞ্জ তার কথা রেখেছিলেন বলে আমার জানা নেই।
৭২ সালে জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী দিবসে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আলেমদের পক্ষ থেকে একটা স্মারকলিপি দিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ ও জাতীয় সংসদ সদস্যদেরকে যা পুস্তিকাকারে মুদ্রিত ছিলো। প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদকেও আমরা আরেকটা স্মারকলিপি দিতে মনস্ত করি। সময়াভাবে তা স্বতন্ত্র পুস্তিকা আকারে ছাপাতে না পারায় এই সরল বিশ্বাসে আমরা তা সংগ্রামে দিয়ে দেই যে, যেহেতু বক্তব্য শতকরা একশ ভাগ ইসলামী, জামাতের কাগজে তা ছাপতেও পারে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি! সংশ্লিষ্ট সম্পাদক তা ছাপবেন বলে ওয়াদা দিলেও সময়মত কিন্তু তা ছাপা হলো না। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন আপনার সব বক্তব্য ইসলামী হলেও ‘ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের’ ব্যাপারে আমরা একমত না। এ জন্য ছাপতে পারিনি। অথচ কে না জানে, পত্রের বক্তব্যের সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকের সব মতের মল খুব কমই হয়ে থাকে।
বছর দুয়েক আগের কথা। কাবা শরীফের ইমাম সাহেব আসবেন ঢাকায়। বলাবাহুল্য খবরটা সবার আগে এলো সচিবালয়েই। মসজিদ সমাজের একজন জাঁদরেল কর্মকর্তা ( প্রাণই বলতে পারেন) তখন সচিবালয়ে যুগ্ম-সম্পাদক।। নেহাৎ মসজিদ সমাজের শুভাকাঙ্ক্ষী।

আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী
পেশ ইমাম এবং খতিব, গণভবন মসজিদ,
প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ
মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি।

।। ২।।

১৭.-৪-৮১ বিচিত্রায় প্রকাশিত ‘গোলাম আযজ ও জামাতের রাজনীতি শীর্ষক প্রতিবেদনটির জন্য ধন্যবাদ। প্রতিবেদনটি অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বিচিত্রার রিপোর্টের প্রতিবাদে জামাতের যুগ্ম-সম্পাদক ইউসুফ আলী এবং ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবু তাহেরের বিবৃতি আমার চোখে পড়েছে। জনাব ইউসুফ আলী বিচিত্রায় উত্থাপিত মৌলিক কোন তথ্য খন্ডন করতে পারেননি। এবং উল্টো বিচিত্রাকে দোষারোপ করে গা বাঁচাতে চেয়েছেন। তার উচিত ছিল প্রতিটি তথ্য যুক্তি এবং প্রমাণের মাধ্যমে খন্ডন করা। জামাতে অন্য মুসলমান সম্পর্কে কি মত পোষণ করে তা আর কারো অজানা নয়, জামাতের একজন সাধারণ কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করলে পরিস্কার বোঝা যায় তারা জামাতের বাইরের লোকদের লোকদেরকে কতটুকু মুসলমান মনে করেন। এর জন্যে আর বেশি কিছু তথ্য প্রমাণ হাজির করার প্রয়োজন পড়ে না।
এরপর অংগ সংগঠনগুলো সম্পর্কে যে ডাহা মিথ্যা কথা তিনি বলেছেন যা একমাত্র গেঁয়ো বলদের প্রেতাত্নাদের পক্ষে সম্ভব। বিচিত্রায় উল্লেখিত অংগসংগঠনের বাইরে আরও অনেক অঙ্গ সংগঠন তাদের আছে’ প্রতিটি অংগ সংগঠনের প্রধান কর্মকর্তাগণ জামাতের রোকন। এটা কি তিনি বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অস্বীকার করতে পারেন? এসব অংগ সংগঠন থেকে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তিদের ছলে বলে কৌশলে অপসারণ করা হয় কেন? জামাত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলেছে এটা মিথ্যা নয়। বরং বাস্তব সত্য। লন্ডন হাউজ আধুনিক প্রকাশনী, জামাতের কার্যালয়সমূহে যে কমান্ডো বাহিনী ছদ্মবেশে অবস্থান করছে তারা কারা? তারা কি জামাতের সশস্ত্র বাহিনীর লোক নয়? এছাড়া জনাব ইউসুফ আলী বিচিত্রায় প্রকাশিত অন্যান্য তথ্যগুলোর কোন জবাব দেননি। মানে তার কোন জবাব তাদের কাছে নেই। এগুলো একেবারে বাস্তব সত্য। জামাতের কোটি কোটি টাকার উৎস সম্পর্কে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে তারা নীরব। ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবু তাহেরও একই কায়দায় তথ্য খন্ডন না করে বিচিত্রাকে দোষারোপ করেছেন। তিনি নিযে খুনী আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন এটা অস্বীকার করেননি? শুধু তিনি নন তার পূর্বসূরী শিবিরের সকল কর্মকর্তাই আল-বদর বাহিনীর মূল সংগঠক পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের দায়িত্বশীল এবং আলবদরের সংগঠক ছিলেন। এটাও তিনি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেননি। এ থেকে কি প্রমাণিত হয় না ঘাতক ইসলামী ছাত্রসংঘ আর ইসলামী ছাত্র শিবির একই সংগঠন।
জনাব তাহের আর একটি মিথ্যা কথা বলেছেন ছাত্র শিবির জামাতের অংগ সংগঠনের নয়। এর চেয়ে জ্বলন্ত মিথ্যা আর কি হতে পারে? ছাত্র শিবির জামাতের অঙ্গ সংগঠন কিনা তা প্রমাণ করার জন্য তার কর্মধারা, কর্মী এবং নেতৃবৃন্দের চিন্তাধারা পর্যালোচনা করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। জামাতে যেভাবে ইসলামের ব্যাখ্যা পেশ করে ছায়্র শিবিরে সেভাবে ইসলামের ব্যাখ্যা পেশ করে— প্রতিটি সচেতন ব্যক্তি এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। জামাতে যেভাবে তার কর্মীদের তৈরি করে ছাত্র শিবির ও জামাতের চিন্তাধারার ছাঁচে নিজেদের সংগঠন গড়ে তোলে। ছাত্র শিবিরের কর্মীরা ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলে জামাতেই যোগদান করে। অন্যকোন সংগঠনে যায় না। কারণ ছাত্র জীবনে তাদেরকে জামাতে মন-মেজাজে গড়ে তোলা হয়। জামাত আবুল আল মওদুদীর বই পড়ে, তা থেকে ইসলামের ব্যাখ্যা পেশ করে অন্যকে পড়ায়। ছাত্র শিবিরেও তাই করে। তাহলে জামাত এবং ছাত্র শিবিরের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা