You dont have javascript enabled! Please enable it! 1981.05.15 | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়ছেন | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৫ মে ১৯৮১ - সংগ্রামের নোটবুক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়ছেন | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৫ মে ১৯৮১

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম     মোঃ আতাহারুল ইসলাম       আবদুল মান্নান

[ তথ্য সংগ্রহকারী ] ফোরাম সদস্যঃ মোঃ মিজানুর রহমান চুন্নু, মীর হোসেন চৌধুরী, মাহবুবুল ইসলাম, শরীফ আশরাফ-উজ-জামান, এ. এইচ. এম. রফিক, আলতাফ হোসেন ভূঁইয়া, আমজাদ হোসেন বুলবুল, জয়েনউদ্দিন বাবলু, আলীনুর হাজারী, আবু তাহের খোকন, রূপরেখা বানু, শাহিনা পারভীন, লুৎফা বেগম, সেলিনা আহমেদ মনি, মিজানুর রহমান, মীর ইউসুফ আলী, সানাউল হক খান, মোস্তফা কামাল, ফারুক আহমেদ, হোসনে-আরা বেগম, সালমা জাহান, রোকেয়া আফরোজা, রেহানা ইয়াছমীন, সুরাইয়া, প্রণতি দত্ত, দিল-এ-রুবা, রাশেদা বেগম, নাহিদ আমিন খান, ফেরদৌসী বেগম, মোঃ মাহবুবুল আলম, মোঃ সেলিম, ইউনুছ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির মানিক ও মোঃ শামসুল হক টগর।

ভূমিকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক অবস্থার প্রতিচিত্র তুলে ধরবার জন্য বিচিত্রা ফোরমি ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যরা এই নমুনা জরিপের উদ্যোগ নেয়। নমুনা জরিপ সীমাবদ্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। তথ্য সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ফোরাম ক্লাবের তথ্য সংগ্রহকারী পাঠিয়ে। নমুনা জরিপের নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার ভিত্তিতে মোট ৪১৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর নিকট থেকে চূড়ান্তভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ( ১৯৭৮-৭৯)  ১১,৯৪৪

( ছাত্র ৮,৩৯২+ ছাত্রী ৩,৫৪৮) জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ( ইনস্টিটিউট বাদে)  ৪১৬ (৩.৪৮%)  জন নিতান্ত অপ্রতুল হলেও তথ্য এমনভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে যে, এই সংখ্যা যথেষ্ট মাত্রায় প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র অর্জনে সক্ষম।

জরীপের সমস্যা

এ ধরনের কাজে আমাদের কিছুটা সমস্যা ছিলো। বিশেষ ক’রে মহিলা হলে আমাদের যেসব সদস্যা ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার আনতে গিয়েছেন, বেশ কিছু ছাত্রী সহযোগিতা করেননি। আবার ডিপার্টমেন্টে ছাত্রদের কাছে ছাত্ররা তথ্যের জন্য গেলে অনেক ছাত্রই তথ্য প্রদানে উৎসাহ বোধ করেননি। কেউবা নিজের আর্থিক পরিচয় অবাস্তবভাবে বাড়িয়ে বলে তদন্তকারী সদস্যার সামনে নিজের মূল্য বাড়াবার প্রয়াস পেয়েছেন। যেমন, সমাজকল্যাণে আমাদের সুন্দরী এক সদস্যা এক ছাত্রের নিকট তথ্য আনতে গেলে তিনি পিতার আয় দেখিয়েছেন মাসিক লক্ষাধিক টাকা এবং নিজে মন্তব্য করেছেন, তার বাবার আয় সাবেকি জমিদারের মতো। অন্যদিকে, ছেলেরা ছাত্রীদের কাছে গেলে অনেক ছাত্রী এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। কেউবা পরিবারিক গোপনীয়তা প্রকাশ করতে ইতস্ততঃ করছেন।

প্রেমের সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই ছেলেরা বেশী মুখর। তবে অনেক মেয়েও সাহসিকতার সঙ্গে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। একজন ছাত্রী বলেছেন তার প্রেমিকার জন্য মাসে এক হাজার টাকা খরচ করেও (উপহারদহ) প্রেমিকের মন পাচ্ছে না। তিনি বিশেষ সমস্যা হিসেবেও এটাকে উল্লেখ করছেন।

জরিপের উদ্দেশ্য

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা এ জরিপের মূল উদ্দেশ্য। সমাজবিজ্ঞানী ছাত্রসমাজকে মন-মানসিকতার দিক থেকে পেটি বুর্জোয়া চরিত্রের বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ জরিপ থেকে কথাটার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। দরিদ্র কৃষক পরিবার থেকে আগত ছাত্ররাও বুর্জোয়া মানসিকতা পোষণ করেন এবং পারিবারিক পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করেন। আমরা জানি, এমন অনেক ছাত্র আছে, যাদের পড়ার খরচ বাড়ি থেকে আসে না— এলেও খুব সামান্য টিউশনি করে যাদের পড়ার খরচ যোগাড় করতে হয় তারাও নিজেদেরকে সচ্ছল বলে চালিয়ে দেন। গোপন রাখেন তাদের আত্মপরিচয়। ছাত্রদের মধ্যে অধিকাংশই নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আগত। ছাত্রীদের মধ্যে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্ত পারিবারিক প্রতিনিধিত্বই বেশি।

অর্থ দিয়ে মানুষের শ্রেণীচরিত্র ও সামাজিক পরিচিতি নির্ধারিত হয়। পরিবেশের প্রভাব মানুষের ওপর যথেষ্ট কার্যকর। আর্থিক মানদন্ডে শ্রেণী চরিত্র বিশ্লেষিত হলেও পরিবেশ তাকে নিজ শ্রেণী অবস্থানের প্রতিকূলে ভূমিকা নিতে বাধ্য করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় একজন স্বল্প আয়ের কৃষক, হোটেল ইন্টারকনের নামও শোনেনি। কিন্তু তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বন্ধুদের সৌজন্যে ঐ হোটেলে ব্যালেনৃত্য উপভোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে তার মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য পরিবেশ দায়ী। ছাত্রীদের ব্যাপক অংশ যেহেতু একটা বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণী থেকে এসেছে, তাদের শ্রেণী চরিত্র তাদের মন-মানসিকতা সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা করে। অর্থাৎ সাধারণভাবে তারা একটি বিশেষ সুবিধাবাদী চিন্তা পোষণ করে।

এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো সমস্যা ছাত্র সমাজের সামগ্রিক মূল্যায়ন এবং অন্য যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে আমাদেরকে ছাত্রদের এসব সামাজিক প্রেক্ষাপট ও কার্যকারণ আগে খুঁজে বের করতে হবে। প্রবেশ করতে হবে সমস্যার গভীরে। পাস করার পরেও চাকরির নিশ্চয়তা নেই বলেই অনেক ছাত্র একাধিক ডিগ্রী নেয়ার ছুতোয় আটকে রাখে হলের সীট, জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে কিম্বা কোন অপরাধমূলক কাজে। এর ফলে ব্যাহত হয় শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশ। যার প্রভাব পড়ে সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও। 

শিক্ষার্থীদের পরিবার

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় কারা? উচ্চশিক্ষা প্রসঙ্গে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় অবধারিত ভাবেই। কারণ উচ্চ শিক্ষার নিমিত্তে অর্থ ব্যয়— যাও অনেক সময় পরিকল্পনাসম্মত নয়— আসে এই দরিদ্র দেশ থেকে। নমুনা জরিপের ৪১৬ জন শিক্ষার্থীকে অভিভাবকের পেশা অনুযায়ী ভাগ করে ১ নং সারণীতে দেখানো হলো। 

সারণী নং ১

অভিভাবকের পেশা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বন্টন

অভিভাবকের পেশা      মোট শিক্ষার্থীদের শতকরা হার

 কৃষি                    ২৪.০৪

 শিক্ষকতা                 ৮.৩৫

 ব্যবসা                   ২০.৯১

 চাকরি                   ৩১.৯৭

 আইন ব্যবসা               ২.৮৯

 ডাক্তারী                   ১.৯২

 ইঞ্জিনিয়ারিং                 ০.৯৬

 অবসরপ্রাপ্ত                  ৫.০৫

 অন্যান্য                    ৩.৬১

 মোট                      ১০০

ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারিদের যদিও চাকরির পর্যায়ে দেখানো যায় তবু যারা ডাক্তারী ও ইঞ্জিনিয়ারিংকে ভিন্ন পেশা হিসেবে

                           মোট     প্রযুক্তিবিদ    প্রশাসন ও ব্যবস্থাপ্না

                        

                          ২০,০২০     ৩৭৫          ৩১

                          (১০০)    (১.৮৭)      (০.১৫)

চিহ্নিত করেছেন সারণীতে তাদের ক্ষেত্রে আলাদাভাবেই রাখা হয়েছে ( সেলফ এমপ্লয়মেন্ট হিসেবে) সম্ভাব্য ত্রুটি এড়াবার জন্য। এই সারণী থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, চাকুরিজীবীদের ছেলেমেয়েরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন বেশি। তারপরেই আসে যথাক্রমে কৃষিজীবী ও ব্যবসায়ীদের ছেলেমেয়েরা। অর্থাৎ শুধু কৃষিজীবী পরিবারের শিক্ষার্থী ২৪.০৪% এবং অন্য সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থী ৭৫.৯৬%।

ছাত্র ও ছাত্রীদের অভিভাবকের পেশা অনুযায়ী আলাদা ভাবে ভাগ করা হলে ওপরের সারণীটি আরো স্পষ্ট হবে।

সারণী নং ২

অভিভাবকের পেশা অনুযায়ী ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা বন্টন

অভিভাবকের পেশা      ছাত্রদের শতকরা হার      ছাত্রীদের শতকরা হার

  কৃষি                ৩০.৩৮                 ১০.৫৩

  ব্যবসা               ১৯.৭৯                  ২৩.৩১

  চাকরি               ২৮.৬২                  (অস্পষ্ট)

  শিক্ষকতা              ৭.০৭                   ১২.০৩

  আইন ব্যবসা            ২.৮৩                  ৩.০১

  ইংজিনিয়ারিং            ০.৩৫                   ২.২৬

  ডাক্তারী               ১.৭৭                    ২.২৬

  অবসরপ্রাপ্ত             ৪.২৪                    ৬.৭৭

  অন্যান্য               ৪.৯৫                    ৪.৭৫

  মোট                 ১০০                     ১০০

২ নং সারণী থেকে এদেশের কৃষিজীবী পরিবার থেকে যে কি দুর্ভাগ্যজনকভাবে কম ছাত্রী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আসেন তাই প্রমাণিত হচ্ছে। অবশ্য ছাত্রদের মধ্যে বেশির ভাগই আসেন কৃষিজীবী পরিবার থেকেই। ছাত্রীদের মধ্যে চাকরিজীবী পরিবারের শিক্ষার্থীই তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। আমাদের উচ্চশিক্ষা যে কতটা বৃত্তাবদ্ধ হয়ে আছে— বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আওতার বাইরে ক্রমশঃই বিচ্ছিন্ন হয়ে উঠছে উপরের সারণী দু’টো থেকে তার কিছুটা আভাস অনায়াসেই পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিবরণ থেকে তা স্পষ্টতর হয়। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রধান পেশায় নিয়োজিত কর্মক্ষম মানুষের শতকরা হার ৩ নং সারণীতে দেখানো হলো।

সারণী নং ৩

প্রধান কয়েকটি পেশাজীবী শ্রেণী, ১৯৭৪

রসায়নবিদ  সেলসম্যান  চাকরি     কৃষিজীবী  শিল্প পরিবহন

 ২০৮      ৯৩৪    ৩৮৬     ১৫,৮৩৮   ২,২৪৭

(১.০৪)   (৪.৬৭)  (১.৯৩)    (৭৯.১১)   (১১.২২)

       ৩ নং সারণী থেকে দেখা যায় যে মোট কর্মজীবী মানুষের মধ্যে শতকরা ৭৯.১১ জন পেশায় কৃষিজীবী, উৎপাদন ও যানবাহনের সঙ্গে জড়িত শতকরা ১১.২২ জন। প্রফেশনাল ও টেকনিক্যাল ১.৮৭% ইত্যাদি। কিন্তু নমুনা জরিপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃষিজীবী অভিভাবক শতকরা ২৪.০৪ জন এবং চাকরিজীবী অভিভাবক শতকরা ৩১.৯৭ জন (বাংলাদেশের জন্য প্রশাসক ও ব্যবস্থাপক (কিংবা সংশ্লিষ্ট)+ করণি+ চাকরি= ০.১৫%+ ১.০৪%+ ১.৯৩%= ৩.১২%)

৪ নং সারণীতে ১৯৬১-৬২ সালের বাংলাদেশের বিভিন্ন লাভজনক পেশায় নিয়োজিত পরিবার প্রধানদের শতকরা হার দেয়া হলো।

সারণী নং ৪

শহর গ্রামের পেশাওয়ারী বন্টন (শতকরা হার)  ১৯৬১-৬২

পেশা      গ্রাম       শহর

কৃষি      ৫১.৫৪      ২.১৯

সাধারণ শ্রমিক     ২১.৬৯        ১১.৭২

দক্ষ শ্রমিক        ০.৯৭          ৭.১১

বাণিজ্য           ৭.৫৩         ১৯.০৫

চাকরি            ৫.৮৩         ৩৬.৯৬

কুটিরশিল্প          ৫.১৭          ৫.৯৭

লবণ ব্যবসা         ২.৮৮         ৫.৮২

স্বাধীন ব্যবসা        ১.১৫          ২.১২

শিক্ষকতা            ১.০৮         ১.৭৪

অন্যান্য             ১.৭৫          ৭.৩২

উপরের সারণীর সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে যে ১৯৬১-এর আদম শুমারী অনুযায়ী শতকরা ৫.১৯ জন ছিল শহরের বাসিন্দা।

শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা

এবার আসা যাক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রসঙ্গে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে প্রচলিত ধারাকে আঁকড়ে ধরে অনিশ্চয়তার পথে চলছে এবং অনেকটা উদ্দেশ্যবিহীন ভাবেই তা প্রতিভাত হয় ছাত্র সমাজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়। ভবিষ্যতে কি হতে চান— এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫৪ জন (১২.৯৮%)। ছাত্র-ছাত্রী উত্তর দিয়েছেন ‘অনিশ্চিত’। এই অনিশ্চিত  ভবিষ্যতের কঠিন প্রতিযোগিতার কথা মনে রেখেই হয়তো বা। উচ্চ শিক্ষার বিষয় ও কর্মক্ষেত্রের মধ্যে ভ্যারিয়েশনের যে বৈচিত্র‍্যের সন্ধান আমরা পাই তা আমাদের অপচয়ের খাতকে প্রশস্ত করছে— অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে। তার প্রতিফলন ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের মতামতে কিছুটা হলেও পড়বে— তাই স্বাভাবিক।

ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেছেন যে তারা সুগৃহিনী হতে চান। এমন আশাবাদ ব্যক্তকারী ছাত্রীর সংখ্যা শতকরা ৩.৮৫ জন। এদের মধ্যে ৯ জনই আবার এসেছেন ব্যবসায়ী পরিবার থেকে। অর্থাৎ মোট ‘সুগৃহিনী হতে চাওয়া’ ছাত্রীদের মধ্যে ৫৬.২৫%-এর অভিভাবকের পেশা ব্যবসা। একজন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী যদি ভবিষ্যতে পরিকল্পনা করেন সুগৃহিনী হবেন— তা মূলতঃ অনিশ্চয়িতারই নামান্তর। আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতা মহিলাদের এক বিরাট অংশ এমনি করেই শুধুমাত্র ‘সুগৃহিনী হওয়ার স্বপ্নই দেখেন। অর্থাৎ বিয়ের পর তাদের উচ্চশিক্ষার সব প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। এমনি করেই এ দেশের জনগণের এক বিপুল অংশ যথাযথ ক্ষেত্রে তাদের পঠিত বিষয়কে কাজে না লাগিয়ে ‘মানব শক্তির’ অপচয় করছেন, অন্যদিকে অপচয় হচ্ছে বিপুল অর্থেরও।

সবচেয়ে বেশি ছাত্র-ছাত্রী বলেছেন যে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা হচ্ছে চাকরি করা ( নমুনা জরিপের মোট ছাত্র-ছাত্রীর শতকরা ২৯.০৮ জন)। দ্বিতীয় স্থানে আসে গবেষণা ও শিক্ষকতায় জড়িত থাকার ইচ্ছা পোষণকারী ছাত্র-ছাত্রীরা, (শতকরা ২৮.০৮ জন) এবং তৃতীয় স্থানেই আছেন যারা নিজেদের কর্মপন্থা নির্ধারণে ‘কপালে যা জোটে’ এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তথ্য হিসেবে যা চমকপ্রদ তা হলো কৃষিজীবী পরিবার থেকে আগত শিক্ষার্থীদের কেউ কৃষিতে ফিরে যাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেননি, যদিও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ১২ জন (শতকরা ১২ জন, কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে)। শুধুমাত্র ব্যবসায়ী অভিভাবকের দু’জন শিক্ষার্থী ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ভবিষ্যতে তাঁরা কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবেন বলে। এবার অভিভাবকের পেশা অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত কর্মপন্থাকে দেখানো হলে— প্রত্যেকটি শ্রেণীকে সেই শ্রেণীর মোট ছাত্রের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা যাবে এবং প্রত্যেক শ্রেণীর বৈশিষ্ট্যসমূহ অন্যশ্রেণীর সঙ্গে তুলনামূলকভাবে যাচাই করা যাবে। 

কৃষিজীবী ও চাকরিজীবী পরিবার থেকে আগত শিক্ষার্থীরা চাকরি (১) করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন সর্বাধিক তাঁদের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় সংখ্যার অধঃক্রম অনুযায়ী পরের দু’টি স্থানও অভিন্ন, যথাক্রমে গবেষণা ও শিক্ষকতা (২) এবং অনিশ্চিত (৩)। কিন্তু ব্যবসায়ী অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সংখ্যা গবেষণা ও শিক্ষকতায়, দ্বিতীয় স্থানে চাকরি এবং তৃতীয় স্থানে ব্যবসা। শিক্ষক অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি গবেষণা ও শিক্ষকতায় থাকতে চেয়েছেন। তাহলে চাকরিজীবী ও শিক্ষক অভিভাবকদের শিক্ষার্থীরাই তাদের অভিভাবকদের পেশাকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। (৫ নং সারণী দ্রষ্টব্য)

সারণী নং ৫

অভিভাবকের পেশাকেই আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি শিক্ষার্থীদের পারিবারিক অবস্থানের (স্ট্যাটাস) সূত্র হিসেবে। প্রশ্নমালায় অভিভাবকের আয় সম্পর্কে প্রশ্ন ছিল কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা বিশ্বাসযোগ্য না হওয়াতে আমাদের অভিভাবকের আয় অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অবস্থানকে নির্ণয় করার আশা ছাড়তে হয়েছে।

ছাত্র রাজনীতি

রাজনীতির সম্পর্কিত প্রশ্নে আমাদের জিজ্ঞাসা ছিল যে শিক্ষার্থী রাজনীতি পছন্দ করেন কি না এবং কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য কিংবা সমর্থক কিনা। আমরা তাদের মধ্যে দুটো ভাগ করে নিয়েছে। (ক) রাজনীতি করা পছন্দ করেন /সমর্থন করেন এবং (খ) রাজনীতি করা পছন্দ করেন না /সমর্থন করেন না। কারণ অনেকে রাজনীতি করা পছন্দ করেন না উল্লেখ করেও বিশেষ কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কর্মপন্থা সমর্থন করেন বলে জানিয়েছেন। তথ্য হিসেবে আমাদের যা চমকে দিয়েছে তা হলো সংখ্যায় কম হলেও কিছু শিক্ষার্থী বলেছেন, যদিও তারা রাজনীতি পছন্দ করেন না তবুও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সদস্য। তাহলে তারা কেন রাজনীতি করেন। এ প্রশ্নের উত্তর বিশ্ববিদ্যালয় অনেক প্রচ্ছন্ন সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারতো। 

রাজনীতি করা পছন্দ করেন/ সমর্থন করেন এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে (মোট শিক্ষার্থীর ৬০.৩৪%) ৮০ জন সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন, ১৫২ জন সমর্থক এবং রাজনীতি করা পছন্দ করেও সদস্য কিংবা সমর্থক নন ১৯ জন। নীচে শতকরা হার দেয়া হলো।

রাজনীতি করেন পছন্দ করেন বা সমর্থন করে

সদস্য     সমর্থক     সদস্য নন     মোট

৩১.৮৭   ৬০.৫৬%    ৭.৫৭%     ১০০.০০%

রাজনীতি করেন পছন্দ করেন বা কিংবা সমর্থনও করেন না। এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৪ জন ছাত্র এবং ৯১ জন ছাত্রী। অর্থাৎ নমুনা জরিপের মোট ছাত্র— ২৮৩ এবং মোট ছাত্রী— ১৩৩- এর মধ্যে যথাক্রমে ২৬.১৫% এবং ৬৮.৪২% রাজনীতি করা পছন্দ করেন না কিংবা সমর্থন করেন না। তাহলে মোট ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে রাজনীতি করা পছন্দ করেন না কিংবা সমর্থন করেন না। (অস্পষ্ট)  মোট ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে রাজনীতি করা পছন্দ করেন/ সমর্থন করেন এবং ছাত্র সংগঠনের (রাজনীতিক) সদস্য এমন শিক্ষার্থীর হার শতকরা ১৯.২৩। অর্থাৎ সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন না এমন ছাত্র-ছাত্রূর সংখ্যা অনেক বেশি৷ এখন দেখা যাক কোন শ্রেণীর পরিবার থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে বেশী শিক্ষার্থী আসছে (অবশ্যই যারা রাজনীতি পছন্দ করেন/ সমর্থন করেন এই শ্রেণীর)ঃ

সারণী নং ৬

অভিভাবকের পেশা          রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সদস্য (%)

কৃষি                            ১৯.০০

ব্যবসা                           ২৬.৪৪

চাকরি                           ১৩.৫৩

শিক্ষকতা                          ১৬.৬৭

আইন ব্যবসা                        ৫০.০০

ইঞ্জিনিয়ারিং                           ০

ডাক্তারী                            ২৫.০০

অবসরপ্রাপ্ত                          ১৪.২৮

অন্যান্য                            ২০.০০

নমুনা জরিপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আইন ব্যবসায়ী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি রাজনীতি পছন্দ করে এবং সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে। তারপরই আসে ব্যবসায়ী (২), ডাক্তার (৩) ও কৃষিজীবী (৪) পরিবারের শিক্ষার্থীরা। অন্যান্যদের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবকই কৃষি ও ব্যবসায় পেশায় নিয়োজিত। (৭ নং সারণী)

সারণী নং ৭

শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত অর্থের উৎস

ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার খরচ আসে কোন উৎস থেকে তা আমরা সবিশেষে গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকের আয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যায়ের খাত অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় সেবিষয়ের গভীরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবুও তথ্য হিসেবে যা আমাদের হাতে এসেছে তাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের উচ্চশিক্ষা যে কতটা শুধু পরিবার নির্ভরতার হার দেখে অনায়াসে ধারণা করা যায়, উচ্চশিক্ষা কত সীমাবদ্ধ হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বর্ষপত্র ১৯৭৮-১৯৭৯ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ৭৫% লোকই দারিদ্র সীমার নীচে। (৪) এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার জন্যে শুধু পরিবারের ওপর নির্ভর করে কতজন শিক্ষার্থী পড়তে পারেন তা সহজেই অনুমান করা না গেলেও তার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। যেখানে শতকরা ৭৫ জন লোকের অবস্থান দারিদ্রয সীমার নীচে (৫) সেখানে উচ্চ শিক্ষা একটা কষ্টকল্পিত চেষ্টা। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার খরচের জন্য যেসব উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয় সেগুলোকে ভাগ করা হয়েছে নিম্নোক্তভাবে- (১) পরিবার (২) গৃহশিক্ষকতা (৩) পরিবার ও গৃহশিক্ষকতা (৪) পরিবার ও বৃত্তি (৫) বৃত্তি ও গৃহশিক্ষকতা (৬) পরিবার ও চাকরি (৭) অন্যান্য। অন্যান্যের মধ্যে কয়েকজন খেলাধুলা থেকে আয় করেন বলে জানিয়েছেন। শুধু চাকরি করেন এবং শুধু চাকরির আয়ই প্রাপ্ত অর্থের উৎস এমন কথা কেউ বলেননি যদিও পরিবার ও চাকরির ওপর নির্ভরশীল পাওয়া গেছে ক’জনকে।

৮ নং সারণীতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অভিভাবকের শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত অর্থের উৎস অনুযায়ী বিন্যস্ত করা হয়েছেঃ

সারণী নং ৮

পরিবারের ওপর নির্ভরশীল ( বৃত্তি পায় না, গৃহশিক্ষকতা করে না, চাকরি করে না ইত্যাদি)  শিক্ষার্থীদের তাদের অভিভাবকের পেশানুযায়ী শতকরা হারে প্রকাশ করলে দেখা যায় যে তুলনামূলকভাবে প্রকৌশলী অভিভাবকের  শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি পরিবারের ওপর নির্ভরশীল। তারপর শতকরা হারের ক্রমানুযায়ী আইনজীবী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীলতা। তুলনামূলকভাবে কৃষিজীবী পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরাই পরিবারের ওপর অনেক কম সংখ্যায় নির্ভরশীল। শুধু গৃহশিক্ষকতায় নির্ভরশীলদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কৃষিজীবী পরিবারের শিক্ষার্থীই বেশি। পরিবার ও বৃত্তির উপর নির্ভরশীলতা সবচেয়ে বেশি কৃষিজীবী পরিবারের শিক্ষার্থীর। তারপর শতকরা হারের ক্রমঃ অনুযায়ী শিক্ষক অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের স্থান।  বৃত্তি ও গৃহশিক্ষকতা থেকে পড়ার খরচ আসে এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে শিক্ষক পরিবারের স্থান সর্বাগ্রে। তারপর আসে যথাক্রমে অন্যান্য ও কৃষিজীবী পরিবার। পরিবার ও চাকরির উপর নির্ভরশীলদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত অভিভাবকদের পরেই আইনজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের স্থান। অন্যান্যদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে সর্বোচ্চ হার ডাক্তার অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের। তারপরই আসে যথাক্রমে শিক্ষক ও কৃষিজীবী পরিবারের শিক্ষার্থীদের স্থান। উপরোক্ত তথ্যকে আমরা চূড়ান্ত বিশ্লেষণে যেভাবে বলতে পারি, তা সহজ ভাষায় আমাদের উচ্চ শিক্ষার বৃত্তাবদ্ধ অবস্থাকেই পরিস্ফুট করে। অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীদের অবসর সময়ে কাজের মাধ্যমে উপার্জন করার তেমন কোনো উৎসাহ নেই যা তাদের উচ্চ শিক্ষায় পরিবারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করতো এবং পারতপক্ষে যা দেশের মানব সম্পদকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতো। বৃত্তির পরিমাণও তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয় যা দিয়ে একজন গরীব মেধাবী ছাত্র পড়ার খরচ নির্বাহ (শুধু বৃত্তির টাকায়) করতে পারে। ছাত্রদের জন্যে চাকরিও সহজলভ্য নয় সঙ্গত কারণেই। অন্য যে মাধ্যমে অর্থোপার্জন ছাত্রদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত তা গৃহশিক্ষকতা। নমুনা জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪১৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে গৃহশিক্ষকতা করেন ৩৫ জন ( অন্যান্য এর ২০ জনের মধ্যেও বেসজ ক’জন গৃহশিক্ষকতা করেন) 

যা শতকরা হিসেবে ৮.৪১%- এর বেশি। এদের মধ্যে ৮ জন (১.৯২%) শুধু গৃহশিক্ষকতার উপরই নির্ভরশীল বলে জানিয়েছেন। ১৬ জন (৩.৮৫%) শিক্ষকতার সঙ্গে পরিবার থেকেও পড়ার খরচ পেয়ে থাকেন এবং অন্য ১১ জন (২.৬৪%) বৃত্তি ও গৃহশিক্ষকতার টাকায় পড়ার খরচ চালান।

শিক্ষার্থীর ব্যয়

শিক্ষার্থীর পারিবারিক আয় নিয়ে যেমন দ্বিধা দ্বন্দের মুখোমুখি হতে চেয়েছে তেমনি অনেকের ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য ও আমাদের ধাঁধায় ফেলেছে। বিশেষ করে চাকরিজীবী পরিবারের কয়েকজন এতো বেশি ব্যয় দেখিয়েছেন যা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। অথবা বিশ্বাস করলে অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে ধরে নিতে হয়, সে পরিবারের আয়ের অবৈধ উপায় (ঘুষ) আছে। যাদের মাসিক ব্যয় দু’শ টাকা কিংবা তিনশ টাকার কম তাদের অধিকাংশই বাসায় থাকেন। যেমন ইঞ্জিনিয়ার অভিভাবকদের চারজন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন ছাত্র, বাকি তিনজন ছাত্রী। সবাই বাসায় থাকেন। দু’জন তাদের ব্যয় সম্পর্কে উত্তর দেননি। বাকি দু’জনের মধ্যে ছাত্রটি মাসে একশ’ পঞ্চাশ টাকা ব্যয় হয় বলে জানিয়েছেন। তিনি বৃত্তি পান না। পরিবারের উপর নির্ভরশীল এবং ভবিষ্যতে সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। অন্যজন ছাত্রী। বৃত্তি পান না। মাসে ব্যয় দেখিয়েছেন তিনশ’ টাকা। প্রাপ্তির উৎস পরিবার। তার আশা তার ভাষায় ‘চাকরিজীবী মহিলা হওয়া ‘।

 পেশা             ০-২৯৯          ৩০০-৪৯৯

 কৃষি               ৮               ৬৩

                 (৮.০০)          (৬৩.০০)

 ব্যবসা              ৪                ৩৮

                 (৪.৬০)           (৪৩.৬৮)

 শিক্ষকতা             ১                ২৬

                 (২.৭৮)            (৭২.২২)

আইন ব্যবসা           ১                 ৬

                 (৮.৩৩)            (৫০.০০)

ইঞ্জিনিয়ারিং            ১                  ১

                 (২৫.০০)             (২৫.০০)

ডাক্তারী               ৩                   ৪

                 (৩৭.৫০)             (৫০.০০)

অবসরপ্রাপ্ত              ২                   ১৩

                  (৯.৫২)              (৬১.৯১)

চাকরি                 ২১                   ৬৬

                   (১৬.০৯)             (৪৯.৬২)

অন্যান্য                 ১                    ৬

                    (৬.৬৭)              (৪০.০০)

মোট                   ৪২                   ২২৩

%                   ১০.০৯                 ৫৩.৮১

শিক্ষার্থীদের ব্যয়ের ছক থেকে আমরা প্রথমেই দেখবো সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী কতকটা ব্যয় করেন। শতকরা হারের অধঃক্রম অনুসারে সাজালে প্রথম তিনটি ব্যয়ের পরিমাণ ৩০০-৪৯৯ টাকা ও ৫০০-৫৯৯ টাকা। অর্থাৎ শতকরা ২৮.৬১ জন ছাত্রছাত্রী খরচ করেন ৩০০ টাকা থেকে ৩৯৯ টাকা, শতকরা ২৫ জন খরচ করেন ৪০০ টাকা থেকে ৪৯৯ টাকা এবং শতকরা ১৭.৫৫ জন ছাত্র-ছাত্রী খরচ করেন ৫০০ টাকা থেকে ৫৯৯ টাকা। এবার প্রধান কয়েকটি অভিভাবকের পেশানুযায়ী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীর (৩৪%) ব্যয় ৩০০ টাকা থেকে ৩৯৯ টাকার মধ্যে। ব্যবসায়ী অভিভাবকের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীর (২৫.২৯%) ব্যয় ৫০৯ টাকা থেকে ৫৯৯ টাকার মধ্যে। চাকরিজীবী (২৫.৫৬%), শিক্ষক (৩৮.৮৯%) ও আইন ব্যবসায়ী (৪১.৬৭%) অভিভাবক শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩০০ টাকা থেকে ৩৯৯ টাকার মধ্যে খরচ করেন।

৪১৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৮০০ টাকার উপরে ব্যয় দেখিয়েছেন শতকরা ৬.২৫ জন শিক্ষার্থী।  তাদের অভিভাবকের পেশা অনুযায়ী হার (৬.২৫%- এর মধ্যে) যথাক্রমে কৃষিজীবী ১.৪৪%, ব্যবসা ১.৯২%, চাকরি ২.৪০%।  একই বক্তব্যকে প্রত্যেক অভিভাবকের পেশার মোট শিক্ষার্থী অনুসারে যদি দেখা হয় তাহলে কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১.৯৪% এবং চাকরিজীবী পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১.৯৪% এবং চাকরিজীবী পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭.৫২% শিক্ষার্থীর ব্যয় মাসিক ৮০০ টাকা কিংবা তারও বেশি।

এবার নীচের সারণী থেকে অভিভাবকের পেশানুযায়ী শিক্ষার্থীর ব্যয় সম্পর্কে নমুনা জরীপের ৪১৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর বক্তব্যকে তুলে ধরা হল। সারণীর মধ্যে শতকরা হার দেখানো হয়েছে— প্রত্যেক পেশার অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের ১০০ ধরে।

সারণী নং ৯

অভিভাবকের পেশানুযায়ী শিক্ষার্থীর ব্যয়

৫০০-৬৯৯     ৭০০-৮৯৯     উত্তর দেননি      মোট

২০              ৯                      ১০০

(২০.০০)       (৯.০০)                  (১০০)

  ৩৩            ৯          ৩           ৮৭

(৩৭.৯৩)       (১৩.০৯)     (৩.৪৫)      (১০০)

৯                                       ৩৬

(২৫.০০)                                (১০০)

৫                                        ১২

(৪১.৬৬)                                (১০০)

                             ২            ৪

                           (৫০.০০)      (১০০)

১                                         ৮

(১২.৫০)                                  (১০০)

৫                  ১                      ২১

(২৩.৮১)          (৪.৭৬)                  (১০০)

২৫                 ১৬         ৫           ১৩৩

(১৮.৮০)          (১২.০৩)    (৩.৭৬)       (১০০)

৭                   ১                       ১৫

(৪৬.৬৭)           (৬.৬৭)                  (১০০)

১০৫                 ৩৬         ১০          ৪১৬

২৫.২৪                ৮.৬৫      ২.৪০          ১০০

এখন দেখা যাক গৃহশিক্ষকতায় কোন পেশার অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা বেশী সংখ্যায় নিয়োজিত। নীচের সারণী থেকে তা বোঝা যাবেঃ

সারণী নং ১০

অভিভাবকের পেশা         গৃহশিক্ষকতা, গৃহশিক্ষকতা+চাকরি, গ্রিহশিক্ষকতা+পরিবার

                                  শতকরা

কৃষি                                ১৭.০০

ব্যবসা                               ১১.১১

চাকুরী                                ২.৩০

আইন ব্যবসা                              ০

ডাক্তারী                                 ০

প্রকৌশলী                                 ০

অবসরপ্রাপ্ত                              ৯.৫২

অন্যান্য                                ২০.০০

আগেই বলেছি ‘অন্যান্য’ পেশার বেশির ভাগই এসেছে কৃষি ও ব্যবসা এবং কৃষি ও শিক্ষকতা থেকে। ‘অন্যান্য’ পেশা ছাড়া কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশী গৃহশিক্ষকতায় নিয়োজিত ( মোট কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীর শতকরা হার অনুযায়ী)। কোন অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বৃত্তি পান এমন কৌতুহল হয়েছে বিশ্লেষণের সময় (এ ক্ষেত্রেও ‘অন্যান্য’- এর কয়েকজনও ব্যক্তি পান। কাজেই এখানে সামান্য বিচ্যুতি হতে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে)। প্রত্যেক অভিভাবকের পেশা অনুযায়ী যদি দেখা হয় তাহলে নীচের সারণী থেকে বৃত্তিপ্রাপ্ত মোট শিক্ষার্থীর শতকরা হারের তুলনা করা যায়। 

সারণী নং ১১

অভিভাবকের পেশা        অর্থের উৎস         মোট ছাত্রের ক্রমিক মান

                   পরিবার ও বৃত্তি

                   গৃহশিক্ষকতা ও বৃত্তি

                       শতকরা

কৃষি                     ৩৪.০০                 ২

শিক্ষকতা                  ৩৬.১১                 ১

ব্যবসা                    ২৬.৪৪                 ৪

চাকুরী                    ২৩.৩০                 ৭

আইন ব্যবসা                ৮.৩৩                 ৮

ডাক্তারী                    ২৫.০০                 ৫

ইঞ্জিনীয়ারিং                      ০                 ৯

অবসরপ্রাপ্ত                    ২৩.৮১                ৬

অন্যান্য                      ৩৩.৩৪                ৩

বৃত্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে শিক্ষক অভিভাবকের শিক্ষার্থীরাই শতকরা হার অনুযায়ী ‘অন্যান্য’ পেশার অভিভাবকের শিক্ষার্থীর তুলনায় বেশী বৃত্তি পেয়েছেন ( ৩৬ জনের মধ্যে ১৩ জন). তারপর কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীর স্থান (১০০ জনের মধ্যে ৩৪ জন)। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছেন যথাক্রমে ‘অন্যান্য’ পেশা ( যা মূলতঃ কৃষি ও শিক্ষকতার সমন্বয়)  ও ব্যবসায়ী অভিভাবকের শিক্ষার্থী। 

শিক্ষাঙ্গনে যা খারাপ লাগে

শিক্ষাঙ্গনে যা খারাপ লাগে এমন কয়েকটি কারণ দেখিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত চাওয়া হয়েছিল। প্রশ্নমালায় যে সাতটি কারণ দেখানো হয়েছিল, ছাত্র-ছাত্রীদের তার কোনো একটি বা একাধিক কারণ সনাক্ত করতে বলা হয়েছিলো টিক চিহ্ন দিয়ে। কারণ হিসেবে যা সর্বাধিক পয়েন্ট পেয়েছে ( ফ্রিকোয়েন্সী (গণসংখ্যা) পিছু এক) তাকেই শিক্ষাঙ্গনের এক নম্বর খারাপ লাগার কারণ এবং পরেরটাকে দ্বিতীয় কারণ এইভাবে র‍্যাঙ্কিং করা হয়েছে। নীচের সারণীতে বিষয়টি দেখানো গেলঃ

সারণী নং ১২

শিক্ষাঙ্গনে খারাপ লাগে          মোট গণসংখ্যা       র‍্যাংক

ক                           ২৩৩           ৩

খ                            ২৪১           ২

গ                            ১৯৩           ৫

ঘ                            ১৯৭            ৪

ঙ                             ৯৯            ৬

চ                             ২৫৯            ১

ছ                              ৭৬            ৭

র‍্যাঙ্ক অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নমুনা জরিপের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে খারাপ লাগে ‘ছাত্র-ছাত্রীর অনুশীলন উক্তি’। ছাত্রীরাই একচেটিয়াভাবে এই কারণটিকে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু ছাত্রদের প্রতি অশ্লীল উক্তি ছাত্রীরা করেছে না ছাত্ররাই করেছে তা বের করা অবশ্য সম্ভব নয়। যেমন ছাত্রীদের প্রতি অশ্লীল উক্তি করার ক্ষেত্রে ছাত্ররাত আছেই, ছাত্রীরাও থাকতে পারে। যা হোক শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের খারাপ লাগার কারণ হিসেবে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে ‘ক্লাশ চলাকালে মিছিল/ সভা’ এবং তৃতীয় গুরুত্ব পেয়েছে ‘শিক্ষকের অনুপস্থিতি’। কারণ হিসেবে চতুর্থ স্থানে আছে ‘ দেয়াক লিখন/ পোষ্টারিং’। (১৩ নং সারণী দ্রষ্টব্য)

সারণী নং ১৩

শিক্ষাঙ্গনে খারাপ লাগে     ছাত্র     র‍্যাংক    ছাত্রী    র‍্যাংক

ক                  ১৬৫     ১      ৬৮      ৩

খ                  ১৬১     ২       ৮০      ২

গ                  ১৩০     ৫       ৬৩      ৪

ঘ                  ১৪৪      ৪       ৫৩      ৫

ঙ                   ৮০     ৬       ১৯      ০

চ                  ১৪৮      ৩       ১১৯     ১

ছ                   ৪৯      ৭        ২৭      ৬      

ছাত্রদের খারাপ লাগার কারণসমূহ গুরুত্বের ক্রমঃ অনুসারেঃ

প্রথম— শিক্ষকের অনুপস্থিতি 

দ্বিতীয়— ক্লাশ চলাকালে মিছিল/ সভা

তৃতীয়— ছাত্র/ছাত্রীর অশ্লীল উক্তু

চতুর্থ — দেয়াল লিখন/ পোষ্টার

ছাত্রীদের খারাপ লাগার কারণসমূহ গুরুত্বের ক্রমঃ অনুসারেঃ

প্রথম— ছাত্র/ ছাত্রীর অশ্লীল উক্তি

দ্বিতীয়— ক্লাশ চলাকালে মিছিল/ সভা

তৃতীয়— শিক্ষকের অনুপস্থিতি 

চতুর্থ — ধর্মঘট।

তাহলে দেখা যাচ্ছে উভয় ক্ষেত্রে প্রথম তিনটি কারণ প্রথম তিনটি স্থান অধিকার করে আছে যদিও ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে।

এবার রাজনীতির সঙ্গে শিক্ষাঙ্গনের খারাপ লাগা কারণগুলোকে যদি বিশ্লেষণ করা হয়, স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে রাজনীতি করা পছন্দ করেন/ সমর্থন করেন এমন শিক্ষকদের সঙ্গে রাজনীতি করা পছন্দ করেন না/ সমর্থন করেন না এমন শিক্ষার্থীদের ব্যবধান আছে কি? নীচে এই প্রশ্নের প্রতি লক্ষ্য রেখে একটা ছক দেয়া হলোঃ

সারণী নং ১৪

শিক্ষাঙ্গনে    রাজনীতি করা পছন্দ করেন/ র‍্যাংক  রাজনীতি করা পছন্দ করেন না/ র‍্যাংক

খারাপ লাগে      সমর্থন করেন                  সমর্থন করেন না 

ক              ১৫৪             ১              ৭৯            ৪

খ              ১৪১             ৩             ১০০            ২

গ              ১১২                            ৮১            ৩

ঘ              ১২৮             ৪              ৬৯        

ঙ               ৭১                            ২৮

চ              ১৪৮             ২              ১১১            ১

ছ               ৫০                             ২৬      

সারণী নং ১৫

উপরের ছক থেকে রাজনীতি করা পছন্দ করে/ সমর্থন করে এমন শিক্ষার্থীদের মতানুযায়ী গুরুত্বের ক্রমঃ অনুসারে যে কারণগুলো আসেঃ

প্রথমঃ শিক্ষকের অনুপস্থিতি 

দ্বিতীয়ঃ ছাত্র-ছাত্রীর অশ্লীল উক্তি

তৃতীয়ঃ ক্লাশ চলাকালে মিছিল/ সভা

চতুর্থঃ দেয়াল লিখন/ পোষ্টার

রাজনীতি করা পছন্দ করেন না/ সমর্থন করেন না এমন শিক্ষার্থীদের মত কিন্তু কিছুটা ভিন্নতর।

প্রথমঃ ছাত্র-ছাত্রীর অশ্লীল উক্তি

দ্বিতীয়ঃ ক্লাশ চলাকালে মিছিল/ সভা

তৃতীয়ঃ ধর্মঘট

চতুর্থঃ শিক্ষিকের অনুপস্থিতি।

এবার পুরো তথ্যকে নীচের ছকে দেখানো হল ( বন্ধনীর মধ্যে খারাপ লাগার কারণগুলোকে গুরুত্ব অনুসারে র‍্যাঙ্ক দেখানো হয়েছে।

অভিভাবকের পেশা           গণতন্ত্র           ইসলামী

কৃষি                     ৩৬             ১৬

                     (৩৬.০০)        (১৬.০০)

শিক্ষকতা                   ১৯              ৬

                     (৫২.৭৮)         (১৬.৬৭)

ব্যবসা                     ৪১             ১০

                     (৪৭.১৩)          (১১.৪৯)

চাকরি                     ৮০             ৮

                      (৬০.১৫)         (৬.০১)

আইনজীবী                    ৬            —

                      (৫০.০০)

ডাক্তার                      ৪             —

                       (৫০.০০)

ইঞ্জিনিয়ার                     ৩

                        (৭৫.০০)

অবসরপ্রাপ্ত                     ৮             ৩

                         (৩৮.০৯)       (১৪.২৮)

অন্যান্য                       ৩              ৩

                         (২০.০০০)       (২০.০০০)

মোট                        ২০০             ৪৬

(%)                      (৪৮.০৭)        (১১.০৫)

শিক্ষার্থীদের ভাবাদর্শগত মতামত

শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয়েছিল তারা কোন পদ্ধতির সরকার পছন্দ করেন তা উল্লেখ করতে। আমরা এখানে পাঁচটা ক্লাশ করেছি (১) গণতান্ত্রিক (২) ইসলামী (৩) সমাজতান্ত্রিক (৪) অন্যান্য এবং যারা উওর দেননি তাদের জন্যে একটা কলাম। এইভাবে ৪১৬ জন শিক্ষার্থীর মতামত অনুযায়ী গণতন্ত্রের প্রতিই সর্বাধিক শিক্ষার্থীর পছন্দ ব্যক্ত করেছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে সমাজতন্ত্র পছন্দকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং তৃতীয় স্থানে আছে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা পছন্দ করেন এমন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। অভিভাবকের পেশানুযায়ী বিশ্লেষণ করলে প্রথম তিনটি স্থান সংখ্যার নিম্নক্রম অনুযায়ীঃ

সারণী নং ১৬

পেশা                    র‍্যাংক

               গণতন্ত্র       ইসলামী      সমাজতন্ত্র

কৃষি              ১          ৩           ২

শিক্ষকতা           ১          ৩           ২

ব্যবসা             ১          ৩           ২

চাকুরী             ১          ৩           ২

আইন ব্যবসা         ১                      ২

ডাক্তারী            ১                       ২

প্রকৌশলী            ১                      ২

অবসর প্রাপ্ত          ১                      ২

অন্যান্য             ২           ২           ১

১৭ নং সারণীতে অন্যান্য তথ্য দেখানো হলো

অভিভাবকের পেশানুযায়ী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ 

সারণী নং ১৭

সমাজতন্ত্র            অন্যান্য        উওর দেননি       মোট

৪৩                  ৫             —        ১০০

(৪৩.০০)           (৫.০০)                      (১০০)

৭                   ২               ২           ৩৬

(১৯.৪৪)            (৫.৫৬)         (৫.৫৬)       (১০০)

৩০                  ১               ৫           ৮৭

(৩৪.৮৯)            (১.১৫)         (৫.৭৫)        (১০০)

৩৫                   ৭               ৩           ১৩৩

(২৬.৩২)             (৫.২৬)         (২.২৬)        (১০০)

৪                     ২              —           ১২

(৩৩.৩৩)             (১৬.৬৬)        —          (১০০)

৩                     ১             —            ৮

(৩৭.৫)               (১২.৫)          —           (১০০)

১                     —            —            ৮

(২৫.০০)               —            —            ১০০

৬                     ৪              —            ২১

(২৮.৫৭)             (৩০.০৪)           —           ১০০

৭                                      ২             ১৫

(৪৬.৬৬)                            (১৩.৩৩)         (১০০)

১৩৬                    ২২              ১২            ৪১৬

(৩২.৬৯)             (৫.২৮)          (২.৮৮)         (১০০)

সারণীটিকে শ্রেণী অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলে দাড়ায়ঃ কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা সমাজতন্ত্রকে পছন্দের প্রথম স্থান দিয়েছেন (৪৩%), দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে গণতন্ত্র (৩৬%) এবং তৃতীয় ইসলামী (১৬%)।  শিক্ষম অভিভাবক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা প্রথম স্থান দিয়েছেন গণতন্ত্রকে (৫২.৭৮%)। দ্বিতীয় সমাজতন্ত্র ( ১৯.৪৪%) এবং তৃতীয় স্থান দিয়েছেন ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে (১৬.৬৭%)। ব্যবসায়ী অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রথম স্থান পেয়েছে গণতন্ত্র (৪৭.১৩%), দ্বিতীয় সমাজতন্ত্র (৩৪.৮৯%) এবং তৃতীয় ইসলামী (১১.৪৯%)। চাকুরীজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা এক নম্বরে স্থান দিয়েছেন গণতন্ত্রকে (৬০.১৫%), দ্বিতীয় সমাজতন্ত্র (২৬.৩২%) ও তৃতীয় ইসলামী (৬.০১%)।  আইনজীবীর ছেলেরা সর্বাধিক পছন্দ করেন গণতন্ত্র (৫০.০০%), দ্বিতীয় সমাজতন্ত্র (৩৩.৩৩%) এবং ইসলামী শাসনের পক্ষে এদের কোন সমর্থন পাওয়া যায়নি। ডাক্তারদের সন্তানেরা অধিকাংশ পছন্দ করেন গণতন্ত্র (৫০%), দ্বিতীয় সমাজতন্ত্র (৩৭.৫%)।  এবং এদের ক্ষেত্রেও ইসলামী শাসনের সমর্থন পাওয়া যায়নি। ইঞ্জিনীয়ার অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রথম গণতন্ত্র (৭৫%) দ্বিতীয় সমাজতন্ত্র (৩৭.৫%)

এবং এরাও ইসলামী ব্যবস্থা পছন্দ করেননি। অবসরপ্রাপ্ত অভিভাবকের সন্তানেরা গণতন্ত্রকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন (৩৮.০৯%), তারপর সমাজতন্ত্র (২৮.৫৭%) সবশেষে ইসলামী (১৪.২৮%)। অন্যান্য পেশার অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র প্রথম (৪৬.৬৬%), গণতন্ত্র ও ইসলামী সমান সমান (২০%)।  ৪১৬ জন ছাত্রের পছন্দের গড় করলে অবস্থা দাঁড়ায়— প্রথম গণতন্ত্র (৪০.০৭%), দ্বিতীয় সমাজতন্ত্র (৩২.৬৯%) এবং তৃতীয় ইসলামী (১১.০৫%)।  উওর দেননি ২.৮৮% এবং অন্যান্য পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা করেন ৫.২৮%। কিন্তু অন্যান্য  শাসন পদ্ধতি কি তা জানা সম্ভব হয়নি।

শিক্ষার্থীদের প্রেম

শিক্ষার্থীদের প্রেম সম্পর্কিত বিষয়ে সোজাসুজি প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো তারা প্রেম করেন কিনা। এ প্রশ্নের উওরে ৩৯.১৮% ছাত্র-ছাত্রীর উওর হ্যাঁ বাচক (১৬৩ জন) এবং ৫৬.৪৯%-এর উওর নেতিবাচক (২৩৫ জন)। ১৮ জন এ ব্যাপারে নীরব থেকেছেন। প্রেম করেন যারা তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে শীর্ষস্থানে আছেন ডাক্তার অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা 

সারণী নং ১৮

অভিভাবকের পেশানুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রেম

অভিভাবকের/প্রেম সম্পর্কিত  প্রেম করেন       প্রেম করেন না     উওর দেননি  মোট

      পেশা/তথ্য       সংখ্যা(%)  র‍্যাংক   সংখ্যা(%)  র‍্যাংক  সংখ্যা(%)

কৃষি                  ৩৭              ৫৮             ৫      ১০০

                   (৩৭.০০)         (৫৮.০০)         (৫.০০)  (১০০)

ব্যবসা                 ৩৬              ৪৭             ৪        ৮৭

                    (৪১.৩৮)        (৫৪.০২)          (৪.৬০)  (১০০)

চাকরি                  ৫২              ৭৪             ৭       ১৩৩

                   (৩৯.১০)          (৫৫.৬৪)       (৫.২৬)    (১০০)

শিক্ষকতা                 ১৫              ২০             ১        ৩৬

                   (৪১.৬৭)           (৫৫.৫৬)       (২.৭৭)    (১০০)

আইন ব্যবসা               ৩               ৯             ০         ১২

                    (২৫.০০)           (৭৫.০০)                (১০০)

চিকিৎসক                  ৪               ৪             ০         ৮

                    (৫০.০০)           (৫০.০০)               (১০০)

প্রকৌশলী                   ১               ৩             ০        ৪

                     (২৫.০০)           (৭৫.০০)               (১০০)

অবসরপ্রাপ্ত                  ১০              ১১            ০        ২১

                     (৪৭.৬২)           (৫২.৩৮)              (১০০)

অন্যান্য                    ৫                ৯             ১      ১৫

                     (৩৩.৩৩)          (৬০.০০)      (৬.৬৭)  (১০০)

মোট                     ১৬৩              ২৩৫          ১৮     ৪১৬

%                    (৩৯.১৮)          (৫৬.৪৯)              (১০০)  

(৫০%— প্রত্যেক পেশার অভিভাবকের মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা হিসেবে আলাদাভাবে বের করে)। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছেন অবসরপ্রাপ্ত অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা (৪৭.৬২%) এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছেন শিক্ষক অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা (৪১.৬৭%)।  তারপর ক্রমানুযায়ী চতুর্থ ব্যবসায়ী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা (৪১.৩৮%), পঞ্চম চাকরিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা (৩৯.১০%), ষষ্ঠ কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা (৩৭%) এবং সপ্তমে প্রকৌশলী ও আইন ব্যবসায়ী অভিভাবকের শিক্ষার্থীদের স্থান (২৫%)। অর্থাৎ প্রেম করেন না যারা তাদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে আছেন যৌথভাবে প্রকৌশলী ও আইন ব্যবসায়ী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা, দ্বিতীয় স্থানে ‘অন্যান্য পেশার’ এবং তৃতীয় স্থানে কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা। উত্তর দেননি যারা তাদের মধ্যে প্রথম স্থানে ‘ অন্যান্য পেশায়’ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে চাকরিজীবী ও কৃষিজীবী অভিভাবকের শিক্ষার্থীরা।

অন্য একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো— ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা তুলনামূলকভাবে বেশি প্রেম করেন। আবার ছাত্রীদের মধ্যে বাসার চেয়ে হলে অবস্থানকারী ছাত্রীরাই অধিক প্রেম করছেন। যারা প্রেম করছেন না তারা অধিকাংশই প্রেম করতে মনের মত মানুষ পাচ্ছেন না। পেলেও তার মন পাচ্ছেন না। অতি নগন্য সংখ্যকের প্রেম করার আদৌ ইচ্ছে নেই।

সেমিষ্টার পদ্ধতি

সেমিষ্টার পদ্ধতি সম্পর্কে যে প্রশ্ন রাখা হয়েছে তাতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মত দিয়েছেন যে তারা সেমিস্টার পদ্ধতি পছন্দ করেন। বাসা কিংবা হলে থাকা না থাকা এ ব্যাপারব কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে ছাত্র রাজনীতিও এ ব্যাপারব ছাত্র-ছাত্রীদের মতামতে বিশেষ প্রভাব ফেলেনি, যা ১৯ নং সারণী থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

সারণী নং ১৯

সেমিষ্টার পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মতামত

         রাজনীতি করে/সমর্থন করে          রাজনীতি করে না/সমর্থন করে না      মোট

         সেমিস্টার পদ্ধতি  সেমিস্টার পদ্ধতি     সেঃ পঃ পছন্দ    সেঃ পঃ পছন্দ       %

         পছন্দ করে      পছন্দ করে না      করেন          করেন না

হলে থাকে     ১৯৬              ২২        ৯১           ১৮       ৩২৭  ৭৮.৬১

         (৬১.২৫)        (৬.৮৮)       (২৮.৪৪)     (৫.৬৩)

বাসায় থাকে    ২৮              ৮         ৪৮            ৭        ৮৯   ২১.৩৯

         (৩১.৪৬)        (৮.৮৯)       (৫৩.৯৩)     (৫.৬২)

মোট         ২২৪             ৩০         ১৩৯           ২৩      ৪১৬    ১০০

%        ৫৩.৮৫            ৭.২১          ৩৩.৪১       ৫.৫৩      ১০০

যারা রাজনীতি করেন/ সমর্থন করেন এই রকম ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সেমিস্টার পদ্ধতি পছন্দ করেন হলে অবস্থানকারীরা ৬১.২৫%, সেমিস্টার পদ্ধতি পছন্দ করেননা ৬.৮৮% এবং বাসায় অবস্থানকারী রাজনৈতিক ছাত্র-ছাত্রীরা ৩১.৪৬% সেমিস্টার পদ্ধতি পছন্দ করেন, ৮.৮৯% পছন্দ করেন না। অন্যদিকে রাজনীতি করেন না, সমর্থন করে না এইরকম ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সেমিস্টার পদ্ধতি পছন্দ করেন ( রাজনৈতিক ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে একসঙ্গে শতকরা হিসেবে) হলে ২৮.৪৪%, পছন্দ করেন না ৫.৬৩% এবং বাসায় পছন্দ করেন ৫৩.৯৩%, পছন্দ করেন না ৫.৬২%। অর্থাৎ সেমিস্টার পদ্ধতি পছন্দ করেন মোট রাজনৈতিক শিক্ষার্থী ৫৩.৮৫% এবং অরাজনৈতিক শিক্ষার্থী ৩৩.৪১%। পছন্দ করেন না রাজনৈতিক ৭.২১% ও অরাজনৈতিক ৫.৫৩%।

অন্যভাবে বললে মোট ১৬২ জন অরাজনৈতিক ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে সেমিস্টার পদ্ধতি পছন্দ করেন ১৩৯ জন (৮৫.৮০%) এবং পছন্দ করে না ২৩ জন (১৪.২০%)।  পক্ষান্তরে,  মোট ২৫৪ জন রাজনৈতিক ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে সেমিস্টার পদ্ধতি পছন্দ করেন ২২৪ জন (৮৮.১৯%) এবং পছন্দ করেন না ৩০ জন (১১.৮১%)

মন্তব্য

এই নমুনা জরিপের ফলাফল দেখে ধারণা করা যায়, সাধারণভাবে উদ্দেশ্যহীন শিক্ষার ফলশ্রুতি হিসেবে একটা হতাশা ছাত্র সমাজকে গ্রাস করছে। তারা ডিগ্রী নেয়ার জন্যেই পড়ছে। পড়াশেষ করে বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে সমাজ অপরাধে অথবা হতাশায় জড়িয়ে পড়বেন। এভাবেই অপচয় হচ্ছে বিপুল মেধা, জনসম্পদ শ্রম এবং অর্থের। মহিলাদের সংখ্যা ছাত্রদের অর্ধেক হয়েও তারা প্রায় অধিকাংশই কোনো সামাজিক উৎপাদনে অংশ নিতে পারেন না। পরিকল্পনাবিহীন এ শিক্ষার প্রকৃতই কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। 

রাজনীতির ক্ষেত্রে অর্ধেকের বেশি কথায় কথায় ধর্মঘট, ক্লাশ চলাকালে মিছিল পছন্দ করেন না। ছাত্র রাজনীতি এখানে যত না ছাত্রদের একাডেমিক সমস্যা নিয়ে আবর্তিত, তারচে বেশি রাজনৈতিক তথা জাতীয় ইস্যুতে পরিচালিত। যা অধিকাংশ ছাত্র পছন্দ করেন না। যদিও অনিচ্ছাকৃতভাবেও কিছু ছাত্র রাজনীতি করছেন। তার কারণ সম্ভবতঃ হলে সীট দখল,বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধার ইত্যাদি। শিক্ষামানের যে অবনতি ঘটছে তার প্রমাণ, আমরা প্রশ্ন রেখেছিলাম ক’জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদেরকে বিশেষ মন্তব্য করার সুযোগও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এমন সব ছেলেমীপূর্ণ ও অবাস্তবকিছু মন্তব্য কয়েকজন শিক্ষার্থী করেছেন যা তাদের অজ্ঞতাই প্রমাণ করে। তবে কিছু ছাত্র-ছাত্রী চমৎকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। 

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1981.05.15-bichitra.pdf” title=”1981.05.15 bichitra”]