বাণিজ্যমন্ত্রী কর্তৃক নতুন আমদানি নীতি ঘোষণা
বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এম, আর সিদ্দিকী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক মাস বিলম্বে জুলাই-ডিসেম্বর বাণিজ্য মওসুমের আমদানি নীতি ঘোষণা করেন। নয়া মওসুমের নয়া আমদানি নীতিতে শিল্প তৎপরতা বৃদ্ধি এবং অধিকসংখ্যক নিত্যব্যবহার্য পণ্য আমদানির ব্যবস্থা রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে, এর ফলে ব্যবহারকারী ক্রেতা সাধারণের সমস্যা সংকুচিত হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এম, আর সিদ্দিকী বেতার ও টেলিভিশন যোগে আমদানি নীতি ঘোষণা করতে যেয়ে বলেন যে, ট্রেডিং কর্পোরেশনের মাধ্যমে আরও বহুসংখ্যক পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কর্পোরেশনের মাধ্যমে আমদানির এই ব্যবস্থাকে তিনি পর্যায়ক্রমে বৈদেশিক বাণিজ্যিক সামাজিকীকরণের পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।
আমদানির নীতির অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এইবার আমদানির তালিকাকে শিল্প এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রের জন্য আমদানিযোগ্য পণ্যের দুইটি পৃথক তালিকায় বিভক্ত করা হয়েছে। পূর্ববর্তী মওসুমে আমাদানীযোগ্য পণ্যের একটি মাত্র তালিকা প্রকাশ করায় যে অসুবিধা ও অসঙ্গতি সৃষ্টি হয়, তাহা দূর করার জন্যই এই মওসুমে দুইটি তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তিনি বলেন যে, চলতি মওসুমে এক মাস বিলম্বে আমদানি নীতি ঘোষণা করা হলেও একে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের আমদানি নীতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনিয়ম দূর করে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে জানুয়ারি-জুন বাণিজ্য মওসুমের আমদানি নীতির মেয়াদ এক মাস বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন যে, রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রেরণা দানের জন্য কাঁচামাল পরিপূরণ কর্মসূচি নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান যে, নতুন আমদানি নীতির বিস্তারিত বিবরণ প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং শীঘ্রই সাধারণ্যে প্রকাশ করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তার বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে নতুন আমদানি নীতির বৈশিষ্ট্য ও মূল লক্ষ্যগুলি নিম্নরূপে নির্দেশ করেন :
১. শিল্পক্ষেত্রে তৎপরতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানিতে উদারতা অবলম্বন।
২. রপ্তানি তৎপরতাকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে বিশেষ কতকগুলি রপ্তানিভিত্তিক শিল্পের জন্য কাঁচামাল পরিপূরণ পরিকল্পনা প্রবর্তন।
৩. জরুরি প্রয়োজন পরিপূরণের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের তালিকায় অতিরিক্ত কতকগুলি পণ্যের অন্তর্ভুক্তি
৪. বৈদেশিক বাণিজ্যকে ধাপে ধাপে সমাজতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে নেওয়ার জন্য ট্রেডিং করপোরেশনের আমদানি তালিকায় অতিরিক্ত পণ্য সংযোজন। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি মোটর-ভ্যান, পিকআপ, পশমীবস্ত্র বাস এবং ট্রাকের চ্যাসিস, মাইক্রোবাস ও জীপ, গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি বাদে অন্যান্য খুচরা যন্ত্রপাতি, চলচ্চিত্র ও কাচের দ্রব্যাদি প্রভৃতি কিছু কিছু অতিরিক্ত পণ্যকে নতুন আমদানি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান যে, চলতি মওসুমে ট্রেডিং করপোরেশন নিম্নলিখিত অতিরিক্ত পণ্যসমূহ যৌথভাবে আমদানি করতে পারবেঃ ড্রাইসেল ব্যাটারী, ছাপার কালি, ঘরে ব্যবহার্য সেলাই কল, লোহার সরঞ্জাম, তালা, খুচরা যন্ত্রপাতি, ভাড়ার মিটারসহ ৩ চাকার অটোরিক্সা, ফটো ফিল্ম, তাঁত শিল্পের জন্য রং এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য, চামড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় রং এবং চামড়া পাকা করার দ্রব্যাদি, ঘনীভূত দুধ, বুনোনের উল, জীবনরক্ষাকারী ঔষধপত্র, টায়ার ও টিউব, রেজার, ব্লেড, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ এবং টর্চ লাইট।
পশমী বস্ত্রকে ট্রেডিং কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট তালিকায় রাখা হয়েছে। মিশ্র লৌহকে ট্রেডিং কর্পোরেশনের বিশেষ তালিকা হতে বাদ দেয়া হয়েছে। এটা ইস্পাত কর্পোরেশন আমদানি করবে। মন্ত্রী মহোদয় প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করেন যে, জানুয়ারি-জুন বাণিজ্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এছাড়া পুরাতন আমদানিকারকদের তালিকা সরকার পরীক্ষা করে দেখছেন। এর ফলে ভুয়া ও অবাঞ্ছিত লাইসেন্সবিরোধীদের বাদ দেওয়া হবে এবং আরও কিছুসংখ্যক নবাগতকে গ্রহণ করার বিষয় বিবেচনা করা হবে।
মোটরগাড়ী, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, হিমায়ন, প্রসাধনী সামগ্রী ইত্যাদি বিলাস দ্রব্যের আমদানি পূর্ববৎ নিষিদ্ধ থাকবে। বাণিজ্যমন্ত্রী জনান যে, রংপুর ও সিলেটে দুইটি নতুন আমদানি রপ্তানি অফিস স্থাপনের ব্যবস্থা হচ্ছে।৪
রেফারেন্স: ১ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ