শৃঙ্খলা বজায় রাখুন- অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী
অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু বিদেশে অবস্থানকালে সর্বক্ষেত্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী গতরাতে প্রদত্ত এক ভাষণে এই আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, আজ বঙ্গবন্ধুর অস্ত্রপচার হবে বলে খবর পাওয়া গেছে। বেতার ও টেলিভিশন যোগে প্রদত্ত ভাষণে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, কারা নির্যাতনে বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্যের ওপর আঘাত পড়ে। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীন বাংলাদেশের পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে বঙ্গবন্ধুর অসুখ বেড়ে যায় এবং পরিশেষে বাধ্য হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে হয়েছে। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, আজ লন্ডন ক্লিনিকে রাণীর চিকিৎসক বঙ্গবন্ধুর অস্ত্রপচার করবেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণের ধন নয়নের মণি আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধু যাতে সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন সেজন্য তিনি খোদার কাছে প্রার্থনা করতে আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাকেই সব রকম সহযোগিতা দানের জন্য তিনি জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের নবজাতক স্বাধীনতাকে অনুকূল পরিবেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যবোধের মাধ্যমে সার্থক করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বাজেটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, ৩০ লক্ষ টন ঘাটতি রেখে খাদ্যের জন্যে পরনির্ভর হয়ে কোনো জাতি আর মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে না। সেজন, খাদ্যের পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা আনার জন্যেই খাদ্যের বরাদ্দ করা হয়েছে সবচাইতে বেশি টাকা। তিনি সরকারি প্রচেষ্টার সঙ্গে জনগণের নিজেদের প্রচেষ্টাকে মিলিয়ে বাংলার সোনার মাটি থেকে আবার সোনার বাংলা সোনার দেশ ফুলে ফলে ফসলে ভরে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। সৈয়দ নজরুল বলেন, সরকার ব্যাপক শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করছেন। এ বছর শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। উন্নয়শীল কোনো দেশের বাজেটে শিক্ষাখাতে এতো বিপুল অর্থ বরাদ্দ এই প্রথম। কারণ, সরকার বিশ্বাস করে, ঘরে ঘরে জ্ঞানের আলো পৌছে দিতে না পারলে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা কখনও স্বার্থক হয়ে উঠবে না। বাংলাদেশের মেহনতী মানুষের কাছে শিল্পের শান্তি বজায় রেখে অধিক উৎপাদনের কাজে নিজেদেরকে সর্বশক্তি নিয়োগ করার আবেদন জানান। তিনি বলেন, পাট, বস্ত্র, চিনি প্রভৃতি বৃহৎ শিল্পের রাষ্ট্রায়াত্ত করণের মাধ্যমে সরকার যে, সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছেন তাকে সফল করার জন্যে শ্রমিক ভাইদেরকে সৈনিকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশের সকল কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি দেশের শ্রমিক সমাজের কাছে আকুল আবেদন করেন। জনাব নজরুল বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে সম্পূর্ণ সন্তোষজনক। সরকার এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সচেতন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী সক্রিয়। স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী ৬ মাসে যেটুকু সামাজিক স্থিতি ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাবোধ ফিরে এসেছে সশস্ত্র সগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী যে কোনো দেশের পক্ষে দৃষ্টান্ত স্বরূপ, তবে এখনও কিছু অস্ত্রশস্ত্র দুস্কৃতিকারীদের হাতে রয়ে গেছে বলে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার ভাষণে ছাত্রদের ত্যাগ তিতিক্ষা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের বীর বিক্রম ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামি দিনের একটা প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তোলার জন্য তোমরা আজকে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাও।” পরিশেষে তিনি সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগের জন্য দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানান।১০৮
রেফারেন্স: ২৯ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ