মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশকে নীতিগতভাবে স্বীকার করে নিয়েছে
যুক্তআরব প্রজাতন্ত্র, সুদান এবং সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ রাষ্ট্রই নীতিগত ভাবে বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিদানই বাকি আছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ব্যাপারে বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া সম্পূর্ণভাবে ঐক্যমতে পৌছেছে। তিনি বলেন, এছাড়া দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া প্রতিনিধি দল বিনিময়ের প্রশ্নেও একমত হওয়া গেছে। জনাব সামাদ তার সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়া সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মন্তব্য করে বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের অর্ন্তভুক্তির প্রশ্নে ইন্দোনেশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন যে, ইন্দোনেশিয়ার সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে পাকিস্তানে আটকে পরা বাঙালিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইন্দোনেশিয়া সরকার বাংলাদেশে ক্রুড অয়েল সরবরাহ করতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ইন্দোনেশিয়া ক্রুড অয়েল আমাদের রিফাইনারীতে পরীক্ষা করে দেখা হবে- যদি ভাল হয় তাহলে ক্রয় করা হবে। জনাব সামাদ বলেন, তাঁর ইন্দোনেশিয়া সফরের পরে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি তার মনোভাবের পরিবর্তন না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না। জনাব সামাদ প্রকাশ করেন, বিলম্বিতভাবে মূল্য পরিষদের ভিত্তিতে থাইল্যান্ড সরকার বাংলাদেশকে ৪০ হাজার টন চাল সরবরাহ করতে রাজী হয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় তা পরীক্ষা করে দেখেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুনরায় ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, আমরা আঞ্চলিক সহযোগীতার কোনো জোটে যাব না। তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে আমরা থাকব তবে প্রত্যেকের সাথে সহযোগীতা করব। এ প্রসঙ্গে জনাব সামাদ সুস্পষ্ট ভাষায় বলেন, বাংলাদেশ একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিন্তু কোনো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাথে জোটভুক্ত নয়। তিনি বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার কার্যে যে কোনো দেশের শর্তহীন সাহায্য গ্রহণ করব। তবে, জাতীয় স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সাহায্য গ্রহণ করব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নকে বাংলাদেশে নৌঘাটি স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, বরং সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধক্রমেই সোভিয়েত জাহাজ বিভিন্ন বন্দরে মাইন পরিষ্কার করার কাজ চালাচ্ছে।১০৩
রেফারেন্স: ২৭ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ