You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকিস্তান দালালদের বিচারের জন্য গণআদালত গঠন কর

জাতীয় শ্রমিক লীগ পাকিস্তান দালালদের বিচারের জন্য গণ আদালত স্থাপনের দাবি জানিয়েছে। শনিবার জাতীয় শ্রমিক লীগের উদ্যোগে পাকিস্তান দালাল বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বায়তুল মোকারমের এক গণসমাবেশে বিভিন্ন বক্তা এ দাবি জানান। তারা অবিলম্বে দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্যে কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করেন। এ সভায় দেশে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করা হয়। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ গণ সমাবেশে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক সচিব জনাব তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আবদুর রাজ্জাক এবং শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আবদুল মান্নান। এ সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব জনাব তোফায়েল আহমেদ দেশের কৃষক ও শ্রমিক সমাজকে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা- রাষ্ট্রীয় এ মূল ৪ নীতির তথ্য মুজিববাদ কায়েমের মাধ্যমেই জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। জনাব তোফায়েল আহমেদ দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, বাংলাদেশে শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম তথা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের জনগণ কঠোর হস্তে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ লোক আত্মাহুতি দিয়েছেবঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নেও তারা পিছপা হবেন না। জনগণ রক্তের বিনিময়েই মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করবেই। তিনি জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিদেশি এজেন্টরা বহু দামে কেনা বাংলার স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য অঢেল টাকা ছড়াচ্ছে। জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেন, এসব বিদেশি এজেন্টদের কবরের ওপরই ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে মুজিববাদ কায়েম করবো। জনাব আহমেদ বলেন, পাকিস্তান দালালদের অবশ্যই বিচার হবে। কারণ যারা পাকিস্তান বর্বরবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করেছে তারা দেশদ্রোহী। দেশদ্রোহীদেন বিচার অবশ্যই হবে।
আবদুল মান্নান : জনাব মান্নান দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ সম্পর্কে বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভন্ডুল করার জন্য এক শ্রেণির মানুষ পরিকল্পিত ভাবে দেশের কৃত্রিম অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। জনাব মান্নান দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক রাজ কায়েম হবে। তিনি বলেন- বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব সম্পর্কে দ্বৈত মত বরদাশত করা হবে না। তিনি অবিলম্বে গণ আদালত স্থাপন করে পাকিস্তান দালালদের বিচার করার দাবি জানান।
আবদুর রাজ্জাক : জনাব আবদুর রাজ্জাক বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে অতিবিপ্লবী এবং চরম ডান পন্থীরা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ম্লান হয়ে যাবে। জনাব রাজ্জাক বলেন, একমাত্র মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। তিনি পাকিস্তান দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, গণহত্যা যোগসাজসকারীদের শাস্তি ব্যতিরেকে রেহাই নাই। জনাব রাজ্জাক জনগণকে দেশের চরম প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিণ পন্থী আর অতিবিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে উপদেশ দেন। সমাবেশে একটা মিছিল বের করা হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী থেকে বিপুল সংখ্যাক শ্রমিক এই সভায় যোগদান করেন।৮২

রেফারেন্স: ২২ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!