You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.07.05 | সেনাবাহিনীকে জনগণের সেবায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকতে হবে-বঙ্গবন্ধু | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সেনাবাহিনীকে জনগণের সেবায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকতে হবে-বঙ্গবন্ধু

ময়নামতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ দেশের সশস্ত্রবাহিনীর কাছে আহ্বান জানান যে, তারা যেন সব সময় জনগণের পাশে থাকেন- যে জনগণের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে তারা এক দিন স্বাধীনতার গৌরবদীপ্ত সংগ্রাম চালিয়েছেন। তিনি তাদের বলেন,“ বহু শক্তি আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে চায়। কিন্তু দেশবাসী যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, সশস্ত্রবাহিনী যদি সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য তৈরি থাকে তাহলে এই হুমকি সফল হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু আজ ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে এক প্যারেড অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন। এই প্রথম তিনি এখানে এসেছেন। সেনাবাহিনীর কোনো আনুষ্ঠানিক প্যারেডেও এটাই তার প্রথম উপস্থিতি। এই প্যারেড অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে, ত্যাগ ছাড়া কোনো জাতিই উন্নতি করতে পারে না। বিপুল আত্মত্যাগের মধ্যে বাংলাদেশের জন্ম। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ টিকে থাকবেই- কেউ এর স্বাধীনতা বিপন্ন করতে পারবে না।
সেনাবাহিনী আদর্শচ্যুত হবে না : প্রধানমন্ত্রী তাদের ওপর দৃঢ় আস্থা রেখে বলেন যে, সেনাবাহিনী ত্যাগের ঐতিহ্যমণ্ডিত আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা যে অবিচল দেশপ্রেম দেখিয়েছেন তা থেকে সরে যাবেন না। এই কথা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বীর সৈনিকরা স্লোগান তোলেন- “বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ”“জয় বাংলা”। এই সঙ্গে তাদের ঘন ঘন করতালিতে ব্রিগেড প্যারেড ময়দান মুখর হয়ে ওঠে। এরপর আবার বক্তৃতা শুরু করে বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানিরা বাঙালিদের দ্বিতীয়। শ্রেণির নাগরিক মনে করত। বাঙালিদের ভাবতো তাদের ক্রীতদাসের মতো। তিনি বলেন, ১৮৫৮ সালে ব্যারাকপুরে প্রথম সিপাহী বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। এরপর থেকে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা বাঙালিদের ভয়ে আর ফৌজে নেয়নি। এরপর পাকিস্তানি শাসকচক্র এসে তারাও বাঙালিদের ফৌজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখলো। অপবাদ দিল বাঙালিরা যোদ্ধার জাত নয়। কিন্তু অপবাদের এই প্রবাদ গত যুদ্ধে চিরতরে ভেঙে পড়েছে। কাজেই সশস্ত্রবাহিনীকে এখন জনসেবার ঐতিহ্য গঠনে নামতে হবে।
আগে গ্রামের মানুষের দূর্দশা দূর করব : প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব জওয়ানদের বলেন যে, সেনাবাহিনী এখনও সজ্জিত নয়। তাদের ভালোভাবে রাখা যাচ্ছে না। কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্থায় আর কোনো উপায়ও নেই। তিনি বলেন, তাদের খেয়াল রাখতে হবে, গ্রামে তাদের বাপ-মা’রা বড় কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আগে তাদের দুর্দশা দূর করতে হবে।
রাষ্ট্রের চার মুলনীতিতে উদ্বুদ্ধ হবার আহ্বান : বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় তাদের কাছে রাষ্ট্রের চার মূলনীতি বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চার নীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের জনগণের সেবা করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের প্রতি তাদের অনুগত থাকতে হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ক্যান্টনমেন্টের অদূরে কোর্ট-বাড়িতে বাংলাদেশ বাহিনীর ১টি অংশের প্যারেড পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি তাদের সীমান্তের চোরাচালান রোধ করতে বলেন। যাতে দেশের সম্পদ বাহিরে পাচার হয়ে না যায়। আজ তার কুমিল্লায় ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শনের সময় চীফ অব স্টাফ কর্ণেল শফিউলাহ, কর্ণেল জিয়াউর রহমান, কর্ণেল খোরশেদ উদ্দিন ও কর্ণেল তাহের তার সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া সেচমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং শ্রমমন্ত্রী জনাব জহুর আহমদ চৌধুরী তার সঙ্গে ছিলেন।১৭

রেফারেন্স: ৫ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ