You dont have javascript enabled! Please enable it!

চারটি জেলা মুক্ত সকল রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি যশাের দুর্গের মুক্তি আসন্ন

জয়বাংলার প্রতিনিধি] বাংলাদেশের বীর মুক্তিযােদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যদের আত্মরক্ষার শেষ উপায় হিসেবে ক্যান্টনমেন্টের শক্তি আরও বৃদ্ধি করার জন্য ক্যান্টনমেন্ট ও গ্যারিসনে সৈন্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা কার্যতঃ মুক্ত হয়েছে। অপরদিকে মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলাও শকবল মুক্ত করেছেন। দখলীকৃত বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম ও শক্তিশালী যশাের ক্যান্টনমেন্টের পতন আসন্ন। মুক্তিবাহনী চারদিক থেকে যশাের ক্যান্টনমেন্টকে ঘিরে রেখেছে এবং মর্টার ও কামান থেকে অবিরাম গােলাবর্ষণ করে চলেছেন। ঢাকার সাথে যশাের ক্যান্টনমেন্টের যােগাযােগ বিচ্ছন্ন করে ফেলা হয়েছে। ফলে বাইরে থেকে শত্রু বাহিনীর রসদ বা অস্ত্রশস্ত্র লাভের পথ কার্যতঃ বন্ধ হবার পথে। ওদিকে খুলনা ও কুষ্টিয়ার সাথেও যশাের ক্যান্টমেন্টের যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে যশাের ক্যান্টনমেন্টের অবরুদ্ধ পাকিস্তানী সৈন্যদের হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে নয়তাে যুদ্ধে প্রাণ দিতে হবে। তবে যশাের ক্যান্টনমেন্ট যে অদূর ভবিষ্যতেই মুক্ত হবে তাতে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।

নােয়াখালী সেক্টরেও মুক্তিবাহিনী এলাকার পর এলাকা দখল করে বর্তমানে ফেনী শহরের পরে হামলা চালাচ্ছেন। সেখানে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণে বিপর্যস্ত এক ব্যাটেলিয়ান বালুচ সৈন্য। অস্ত্রশস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় ফেনী শহরের মুক্তি ও আসন্ন। | সিলেট সেক্টরে মুক্তিবাহিনী তাহেরপুর, রাধানগর ও গৌরিনগর থানা দখলের পর বর্তমানে সিলেট শহরের একেবারে কাছে এসে গিয়েছে। জানা গিয়েছে যে, বাইরের সাহায্য লাভে বঞ্চিত পাক-বাহিনীর পক্ষে আর বেশী দিন সিলেট রক্ষা করা সম্ভব হবে না।  দিনাজপুর-রংপুর সেক্টরে পঁচাগড় দখলের পর মুক্তিবাহিনী দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই সেক্টরে গত কয়েকদিনে প্রায় সাড়ে ৪ শত বর্গমাইল এলাকা শত্রুমুক্ত হয়েছে। কুষ্টিয়া সেক্টরে মুক্তিবাহিনী মেহেরপুর ও নাতুদহ থেকে শত্রু সৈন্যদের বিতাড়িত করেছে। মুক্তিবাহিনীর অপর একটি দল দশনা ষ্টেশন এলাকা মুক্ত করেছে। | সাতক্ষীরা সেক্টরে একমাত্র সাতক্ষীরা শহর ছাড়া প্রায় বাদবাকী সমস্ত এলাকা মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরা শহরে শত্রু সৈন্যদের অবরােধ করে রেখেছে। | মুক্তিবাহিনীর জনৈক অতি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান যে, বাংলাদেশের যে সমস্ত এলাকায় শত্রু বাহিনীকে অবরােধ করা হয়েছে বাহির থেকে সেসব স্থানে কোনও সৈন্য আমদানী করতে দেয়া হবে না অথবা অবরুদ্ধ সৈন্যদের অন্যদিকে যেতে দেয়া হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আত্মসমর্পণ না করলে প্রতিটি শত্রু সৈন্যকে হত্যা করা হবে।

জয়বাংলা (১) ১: ৩০ ০

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!