কুষ্টিয়ায় বিশাল ট্রাইব্যুনাল
কুষ্টিয়ার দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সদস্য শ্ৰী আব কে বিশ্বাস গত বৃহস্পতিবার রাজাকার চিকন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের ১১(ক) ধারা বলে চিকন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় দালাল আদেশের অধীনে এইপ্রথম একজনকে দণ্ড প্রদান করা হলো। মামলার বিবরণ প্রকাশ, বাংলাদেশে দখলদার সেনাবাহিনীর শাসন আমলে মীরপুর গ্রামের চিকন আলী রাজাকার তালিকাভুক্ত হয়। সে হত্যা, লুটতরাজ, ঘরজ্বালানী এবং মেয়েদের মর্যাদা হানীর কাজে অংশগ্রহণ করে। গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধ সংগঠনে সে সক্রিয়ভাবে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে সহযোগিতা করে। ১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর অভিযুক্ত চিকন আলী তার গ্রামের বাড়িতে কামাল উদ্দিন মন্ডল নামক এক ব্যক্তিকে বলে সে জনৈক ইয়াজউদ্দিনের বাড়ি থেকে দুলালী বেগমকে বের করে আনতে ইচ্ছুক। পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের হামলা থেকে রক্ষার জন্য আবদুল গফুরের মেয়ে দুলালী বেগমকে ইয়াজউদ্দীনের বাড়িতে রাখা হয়। এর পরেই চিকন আলী ইয়াজউদ্দীনর বাড়িতে যায়। মেয়েটি তখন তার বাড়িতেই ছিল। সে ইয়াজউদ্দীনের কাছ থেকে দুলালী বেগমকে দাবি করে। কিন্তু ইয়াজউদ্দীন দুলালী বেগমকে দিতে অস্বীকার করায় চিকন আলী রাইফেলের সাহায্যে গুলি করে ইয়াজউদ্দীনকে হত্যা করেন। আদালতে বিবাদী চিকন আলীর উকিল বলেন যে, চিকন আলী কখনোই রাজাকার ছিল না। সে মুক্তি বাহিনীর সদস্য ছিল। কিন্তু বিচারক বিবাদীর কৌশুলীর বক্তব্য গ্রহণ করেনি। এবং অভিযুক্ত চিকন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ফাঁসির হুকুম প্রদান করেন।একই বিচারক দণ্ডবিধি ১২১ ধারা এবং দালাল আদেশের ১১(ক) ধারার আরো কতকগুলো অভিযোগের ভিত্তিতে চিকন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু কোনো দণ্ড প্রদান করেন নি। কারণ আগের অভিযোগই তার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে তাকে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব আমজাদ হোসেন সরকার পক্ষে এবং মীর আতাউর রহমান অ্যাডভোকেট বিবাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।৩৮
রেফারেন্স: ১০ জুন ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ