You dont have javascript enabled! Please enable it!

দুর্নীতিবাজদের দমনে আর একদিনও দেরি নয়

ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ মঙ্গলবার বলেন যে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কিংবা সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তোলার জন্য জনগণ প্রয়োজন হলে বঙ্গবন্ধুকে তিন বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর সময় দিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু দুর্নীতি পরায়ণ এমসিএ ও আমলাদের দমনের জন্য বাংলার মানুষ আরো একটি দিনও সময় দিতে রাজি নন। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার সাড়ে ছয় মাস পরেও বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি নেই কেন- তার জবাব প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে দিতে হবে। ৭ জুনের জনসভায় জনগণ বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেও সে কথা শুনতে চায়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির উদ্যোগে দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস পালন উপলক্ষে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের অনুষ্ঠিত এক জনসভায় অধ্যাপক মোজাফর আহমদ একথা বলেন। সভায় তিনি সভাপতিত্বের ভাষণ দিচ্ছিলেন। দুর্নীতি, অরাজকতা ও দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েই জনসভায় বক্তৃতা দেন। ন্যাপের সহ-সভাপতি পীর হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শ্রী পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাংগঠনিক সম্পাদিকা বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ঢাকা শহর ন্যাপ সভাপতি জনাব আব্দুল হালিম। ভাষণের শুরুতে ন্যাপ প্রধান বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস বর্ননা করে বলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও প্রতিক্রিয়াশীলদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। তিনি আরো বলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখনও রাহুমুক্ত হয়নি। সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভেতরে ও বাহিরে ষড়যন্ত্র করছে। জ্বালাও, পোড়াও, ঘেরাও ও সমাজতন্ত্রের নামে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতে আমাদের শত্রু ছিল। ভবিষ্যতেও তাদের ভূমিকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। মুখে বললেও মার্কিন সাহায্য কখনো স্বার্থহীন হতে পারে না। তিনি এ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতীত ভূমিকা বিশ্লেষণ করেন।
ভাসানীর সমালোচনা : তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সমালোচনা করে বলেন যে, স্বাধীনতার বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি পিডিপি, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, রাজাকার আলবদর বাহিনীর পেতাত্মারা অতিবিপ্লবীদের সাথে জোট বেধেছে। এরা বাংলাদেশকে সুকৌশলে বন্ধুহীন করে মার্কিন-চীন চক্রান্তের ভেতরে ফেলে দিতে চায়। বিপ্লবী সরকার গঠনের দাবি প্রসঙ্গে : তিনি বলেন দ্বায়িত্বহীন দাবি যারা তুলছে, আবোল তাবোল বিবৃতি যারা দিচ্ছে, বিপ্লবী সরকার গঠনের আওয়াজ তুলছে তারা স্বাধীনতা ও জনগণের শত্রু। তারা মুখরোচক ভাষায় বিপ্লব ও সমাজতন্ত্রের নামে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা থেকে উৎখ্যাত করতে চায়।
অতি বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি : তথাকথিত অতিবিপ্লবীদের সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকার জন্যে তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের চলার পথ বড়ই কঠিন। ধীরে সুস্থে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের এগোতে হবে। কারণ জাতি আজ তার ক্রান্তিলগ্নে দাড়িয়ে আছে। সাহায্য পেয়ে যেনো আমরা অতীতের ইতিহাস ভুলে না যাই। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে চীন সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত বলে আখ্যায়িত করেছিল। কিন্তু এই স্বাধীনতার সংগ্রামকে গুটিকয় প্রতিক্রিয়াশীল বাদে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বিস্তারিতভাবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অবিলম্বে জাতীয় সংকট মুহূর্ত ঘোষণা ও দেশপ্রেমিক শক্তির সক্রিয় সহযোগিতা আহ্বান করার জন্যে সরকারের নিকট দাবি জানান। তিনি বলেন যে, দেশ আজ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এমসিএদের একটি অংশ দুর্নীতি পরায়ণ হয়ে উঠেছে। জিনিসপত্র ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, অরাজকতা চলছে। একদল লোক আওয়ামী লীগের নামে এসব করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। গত ৬ মাসের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে আওয়ামী লীগকে নতুন করে সাজানো ও গড়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তিনি সাচ্চা কর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগকে নতুন করে গোড়া তোলার আবেদন জানান। তিনি বলেন যে, সমাজতন্ত্র কায়েমের পথে ন্যাপ আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা দেওয়ার এই অর্থ নয় যে, দুর্নীতি ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে। তিনি আরো বলেন, একমাত্র মন্ত্রী পর্যায়ে ছাড়া ন্যাপ সরকারকে সকল পর্যায়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কারণ, এককভাবে দেশের বর্তমান সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। ন্যাপকে সমাজতন্ত্র ও জাতীয়করণের নামে বিপরীতমুখী কার্যকলাপ দিয়ে ধোকা দেয়া যাবে না বলে তিনি আরো ঘোষণা করেন যে, ন্যাপ কাউকে ভয় করে না। তিনি প্রতিক্রিয়াশীল আমলাচক্র ও এমসিএদেরও তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি ঘোষণা করেন যে, জাতির সামনে আগামি দিনের সংগ্রাম হচ্ছে সমাজতন্ত্র গড়ার সংগ্রাম। তিনি বলেন যে, দেশে দুর্ভিক্ষের কালো ছায়ার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় মানুষ না খেয়ে মরতে শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন যে, সমাজতন্ত্র জাতীয়করণ ও জোট নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে কমিউনিস্ট পার্টিও সরকারের সাথে সহযোগিতা করবে।২৩

রেফারেন্স: ৬ জুন ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!