You dont have javascript enabled! Please enable it!

আরও দশ লাখ টন খাদ্যশস্য দিচ্ছে জাতিসংঘ

বাংলাদেশকে জাতিসংঘ আরও ৮টি মালবাহী বিমান ও ৪টি হেলিকপ্টার দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অংশে খাদ্যশস্যের ত্বরিৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধানের এ সব বিমান দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের রিলিফ পরিচালনার প্রধান ড. ভিক্টর এন উব্রাইখট সাংবাদিকদের এ কথা জানান। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট যে বাণী পাঠিয়েছেন তা ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অর্পনের জন্য ড. উমাইখট শুক্রবার বিকেলে গণভবনে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি প্রায় আধ ঘণ্টাকাল প্রধানমন্ত্রীর সাথে অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য আনার ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রচেষ্টার বিষয়ে তাকে অবহিত করেন। এনার খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্যে আরও দশ লাখ টন খাদ্যশস্য আসার পথে রয়েছে। এর অধিকাংশই আগামি ২/৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরে এসে পৌঁছবে। আনরড প্রধান ড. উমাইখট শুক্রবার ঢাকায় এ কথা বলেন।
জাতিসংঘের আশাবাদ : বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে বলে স্যার রবার্ট জ্যাকসন সতর্ক আশাবাদ উচ্চারণ করেছেন। স্যার রবার্ট জ্যাকসন ঢাকায় জাতিসংঘ সাহায্য পরিচালনার সার্বিক দায়িত্বে নিযুক্ত আছেন। তিনি সাংবাদিকদের নিকট বলেন, সেক্রেটারি জেনারেল ড. কুর্টওয়াল্ড হেইম আরো দশ লাখ টন খাদ্যশস্য দানের যে আবেদন জানিয়েছেন তা যদি পাওয়া যায় তাহলে বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। স্যার রবার্ট আরও বলেন দু’মাসের সরবরাহ জুনের জন্য প্রায় ৪ লাখ টন ও জুলাইয়ের জন্য ২ লাখ টনের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। নতুন করে খাদ্য শস্য দান করা না হলে পরবর্তী ৪ মাসকালে বিদেশ থেকে জাহাজে খাদ্য সরবরাহ দ্রুত হ্রাস পাবে। বিভিন্ন অসুবিধা প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রকৃত প্রস্তাবে যা আশা করা গিয়েছিল তার ১০ দিন আগেই বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে।
বাঙালিদের প্রশংসা : অপরদিকে এখন পর্যন্ত ব্যাপক পর্যায়ে বেকারত্ব থাকা সত্ত্বেও বাঙালিরা তাদের নতুন দেশ পুনর্গঠনে কঠোর পরিশ্রম করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার হিসেবে সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ লোক বর্তমানে বেকার রয়েছে। পরিস্থিতির কতিপয় বাস্তব বৈশিষ্ট্য তিনি উল্লেখ করেন। তা হলো, ভারত এখানেও বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। ২৫ টি সোভিয়েত জলযান চট্টগ্রাম বন্দরের শতকরা ৭৫ ভাগ আবিস্কার করেছে। প্রাথমিকভাবে যা অনুমান করা গিয়েছিল, ক্ষুদ্র নৌযান খুবই সন্তোষজনক। দেশের অভ্যান্ত রীন ভাগে খাদ্যশস্য পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে এখনও ৩ লাখ ছোট নৌকা এবং অন্যান্য নৌযান রয়েছে। এ সত্ত্বেও খাদ্য শস্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত জাতিসংঘের ৭৫ টি মিনিবালকার ও অপরাপর নৌযান চালু রাখার জন্য অর্থের যোগান অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর : তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে মাত্র ৩০ হাজার টন খাদ্য শস্য অবশিষ্ট আছে। অথচ এর মজুদ ক্ষমতা হলো ৩ লাখ ৭০ হাজার টন। ড. ওয়াল্ড হেইম গত বুধবার আরো ১০ লাখ টন খাদ্য শস্য দানের যে আবেদন জানিয়েছেন তা দান করতে সক্ষম এমন। কতিপয় দেশের নিকট জানিয়েছেন।
আগামি পাঁচ মাসের হিসেব : ঢাকায় জাতিসংঘের রিলিফ অপারেশন সংস্থা যে হিসেব দিয়েছে, তৎসম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ড. ওয়ার্ল্ড হেইম আগামি পাঁচ মাসে বাংলাদেশের খাদ্য শস্যের নিম্ন লিখিত হিসেব প্রদান করেন। আগামি জুলাই মাসের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টন, আগস্ট ২ লাখ ৮০ হাজার টন, সেপ্টেম্বর ২ লাখ ৪০ হাজার টন, অক্টোবার ২ লাখ ৪০ হাজার টন ও নভেম্বর ১ লাখ ৬০ হাজার টন। জাতিসংঘের দলিলে বলা হয়, সেক্রেটারি জেনারেল এ মর্মে উল্লেখ করেন যে, যেসব দেশ খাদ্যশস্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবেনা, তারা অপরভাবে সাহায্য করতে পারে। যেমন পরিবহন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় বহন করতে পারে। কারণ এসব ব্যয়ও খাদ্য শস্যের মূল্যের প্রায় শতকরা ২০ ভাগ। আনরড-এর অপরাপর অত্যাবশ্যকীয় কাজ, যথা মিনিবাস কার, বার্জ ও অন্যান্য। নৌযান ব্যবহারের জন্য নুন্যপক্ষে নগদ অর্থে ১ কোটি ডলার প্রয়োজন। এ কাজের জন্য নগদ অর্থ সাহায্য খুব সহায়ক হবে। সেক্রেটারি জেনারেল আরো উল্লেখ করেন, যেসব দেশ ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের কাছাকাছি ও প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন করে থাকে, তারাই বর্তমান জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় দ্রুত সাড়া দিতে পারে। অবশ্য এর জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও পরিবহনের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে। এসব দেশ অবিলম্বে বাড়তি সরবরাহ পূরণ করতে পারলে যে সময় পাওয়া যাবে তাতে শস্য উৎপাদনকারী বড় বড় দেশ জাহাজ যোগে খাদ্যশস্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবে।৫

রেফারেন্স: ২ জুন ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!