You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.06.01 | মানিক মিয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেনি- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

মানিক মিয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেনি- বঙ্গবন্ধু

মানিক মিয়ার মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ৩০ লাখ বাঙালিকে যারা হত্যা করতে পেরেছে, তাদের পক্ষে মানিক মিয়াকে হত্যা করা অসম্ভব কিছু নয়। বৃহস্পতিবার বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অন্যতম বীর সেনানী মরহুম তোফাজ্জেল হোসেনের (মানিক মিয়া) মৃত্যু বার্ষিকীতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আয়োজিত স্মৃতি সভায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ মন্তব্য করেন। গতকাল ছিল মানিক মিয়ার তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী। স্বাধীন বাংলার মুক্ত পরিবেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাকে স্মরণ করেছে বাংলার মানুষ। এই উপলক্ষে কারিগরি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু মানিক মিয়া হত্যার ষড়যন্ত্র উদঘাটন করতে গিয়ে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একটি গোপন চিঠি সেই সময় মানিক মিয়ার হাতে এসেছিল। একজন বাঙালি ছাত্র গোপন সূত্রে খবর পেয়ে চিঠিটা নিয়ে মানিক মিয়ার কাছে পৌছাবার ব্যবস্থা করেছিল। এতে লেখা ছিল, আপনাকে ও শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আপনারা কেউ এখন পশ্চিম পাকিস্তানে আসবেন না। মানিক মিয়া হেসে চিঠিটা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কোনো নিষেধ না শুনেই তিনি পিন্ডি গিয়েছিলেন। আর ফেরেন নি। বঙ্গবন্ধু বলেন, মানিক মিয়াকে ষড়যন্ত্র করে পিন্ডিতে ডাকা হয়েছিল। সেখানে তাকে একদিন রাত ১১টায় ডেকে নেয়া হয়েছিল। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এবং সেখানেই রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু ঘটে। বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানের জঙ্গিশাহী ষড়যন্ত্রে সিদ্ধহস্ত। ষড়যন্ত্র ওরা বহুআগে থেকেই করতে শুরু করে। ১৯৫৪ সালে লন্ডনের একটি হোটেলে বসে আইয়ুব খান যে ষড়যন্ত্র করে তারই ফলশ্রুতি ১৯৫৮ সালের সামরিক আইন। ইয়াহিয়ার বাঙালি নিধনযজ্ঞের ষড়যন্ত্রও বহু আগের। মানিক মিয়ার সাথে তার ব্যক্তিগত প্রগাড় সম্পর্কের স্মৃতি চারণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, মৃত্যু পর্যন্ত তার সাথে সুখে-দুঃখে একত্রে ছিলাম। কবে সোনার বাংলা স্বাধীন হবে, কবে এদেশের মানুষ মুক্ত হবে তাই নিয়ে তার সাথে এতদিন আলোচনা করেছি। সদস্য না থাকলেও তিনি ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রাণ কেন্দ্র। বহু বিষয় নিয়ে তার সাথে দ্বিমতও রয়েছে। কিন্তু ভুল ধরিয়ে দিলে সেই ভুলকে মেনে নেয়ার মতো উদারতা তার ছিল।
মনে প্রাণে বাঙালি : বঙ্গবন্ধু বলেন, মানিক মিয়া ছিলেন মনে প্রাণে বাঙালি। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তার সাধনা। আমরা তার এই সাধনাকে ফলবতী করতে চাই। বাঙালির মুখে হাসি ফোটাতে চাই। তাদেরকে সুখী করতে চাই। তবেই মানিক মিয়ার আত্মা শান্তি পাবে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা ছেড়ে দিয়ে দেশ গঠনের কাজে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
তাজউদ্দিন আহমদ : স্মৃতি সভায় বক্তৃতাকালে অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ মানিক মিয়ার লেখা থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান। মানিক মিয়ার সাথে তার দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তার কথায় ছিল সরলতা ও তিক্ষুতা। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের ভাষ্যকার। তার প্রতিভা ঘরে ঘরে স্বীকৃত। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করে গেছেন।
খন্দকার মোশতাক আহমদ : বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ বলেন, মানিক মিয়া ছিলেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে মানুষের মঙ্গল করতে পারবেন এই ছিল তার বিশ্বাস। তিনি বলেন, মানিক মিয়া যা বিশ্বাস করতেন, দৃঢ়ভাবে তিনি তা বলতেন এবং তা পালনের চেষ্টা করতেন। তিনি মানিক মিয়ার শিক্ষা থেকে গণতন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার ফসলকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার মন্ত্র গ্রহণের আহ্বান জানান।২

রেফারেন্স: ১ জুন ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ