বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা শত্রু কবলমুক্ত
(রণাঙ্গণ প্রতিনিধি) মুক্তিবাহিনীর অপূর্ব রণকৌশল ও জয়গাথা প্রচারে আজ সারা বিশ্বের বেতার-টেলিভিশন-পত্রপত্রিকা মুখর হয়ে উঠেছে। গত ২১শে নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস্-এর ঢাকাস্থ সংবাদদাতা ম্যাক্রোন ব্রাউনের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত সংবাদদাতা বলেছেন সারা বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী দুই তৃতীয়াংশ এলাকা শত্রু কবল থেকে ছিনিয়ে নিতে সমর্থ হয়েছেন। মুক্তিযােদ্ধারা আজ শহরের স্কুল-কলেজ-আদালত, হােটেল, ব্যাঙ্ক, বিদেশী দূতাবাস, দোকান-পাট প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে আছেন। স্বাধীনতার প্রতি বাংলাদেশের জনগণ ধীরে ধীরে এক অটল আত্মবিশ্বাসে রূপান্তরিত হচ্ছেন। লন্ডনের সাপ্তাহিক নিউজ উইকের সিনিয়ার এডিটর মিঃ ব্রসগ্রেভ ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকার সংবাদদাতা মিঃ হােলিংওয়ার্থের সাথে বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা এবং মুক্তাঞ্চল সফর করে সদর দফতরে ফিরে গিয়ে এক বিস্তৃত রিপাের্ট পেশ করেন। এ সম্পর্কে নিউজই উইকের এক সাম্প্রতিক সংখ্যায় (২২শে নভেম্বর) মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের একটি বিশেষ রিপাের্ট প্রকাশ পায়। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে এক লক্ষ বাঙালী গেরিলা দখলদার সৈন্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এবং এর মধ্যেই প্রায় এক চতুর্থাংশ এলাকা নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছেন। … প্রতি সপ্তাহে গ্রামাঞ্চলে গেরিলাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার পরিসর ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এ দিকে ডেইলী টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা মিঃ হােলিংওয়ার্থ ঢাকা থেকে লিখছেন বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৪০ হাজার গেরিলাযােদ্ধা খান সেনাদের ওপর আক্রমণ করে যাচ্ছেন। ঢাকা শহরে এখন বােমা বিস্ফোরণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরাতন ঢাকায় প্রতি রাত্রে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে গুলী বিনিময় হচ্ছে। একজন বিদেশী কুটনীতিবিদ সম্প্রতি ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে গিয়ে বলেছেন ঢাকা শহর এখন সূর্যাস্তের পর সম্পূর্ণ মুক্তিবাহিনীর অধীনে চলে যায়। বিবিসি থেকেও বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে অনেক শহর ও গ্রাম রাত্রিবেলায় মুক্তি বাহিনীর দখলে থাকে।
জয়বাংলা (১) ১: ৩০
৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯