নজরুল বাঙালির স্বাধীন সত্তার রূপকার- বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, কবি নজরুল বাংলার বিদ্রোহী আত্মা ও বাঙালির স্বাধীন ঐতিহাসিক সত্তার রূপকার। কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার এক বাণীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীন বাংলার পবিত্র মাটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের চারণকবি মহা বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম দিবস পালিত হচ্ছে। এটা অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলার শেষ রাতের ঘন অন্ধকারে নিশীথ-নিশ্চিন্ত দ্রিায় বিপ্লবের রক্তলীলার মধ্যে বাংলার তরুণেরা শুনেছে-রুদ্র বিধাতার অট্টহাসি। শুনেছে কাল ভৈরবের ভয়াল গর্জন। নজরুলের জীবন, কাব্য সঙ্গীত এবং নজরুলের কণ্ঠে প্রচণ্ড সামুদ্রিক জলোচ্ছাসের মতো। অগ্নিশিখার মতো। পরাধীন জাতির তিমিরাচ্ছন্ন অন্ধকারে বিশ্ব বিধাতা নজরুলকে এক সতন্ত্র ছাচে গড়ে পাঠিয়েছিলেন এই পৃথিবীতে। তিনি আরো বলেছেন, সাহিত্য ও সম্মানের সু-উচ্চ শিখরে নজরুলকে পথ করে উঠতে হয়নি, পথ তাকে হাত ধরে উর্ধ্বে তলেছে। মহা অভ্যাগতের মতো তার আগমন নন্দিত হয়েছে। সে এসেছে ঝড়ের মাতম তুলে। বিজয়ের বেশে। তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় নন্দিত হয়েছিল কবি:
“আয়রে চলে আয়রে ধুমকেতু,
আধারে বাঁধ অগ্নি সেতু,
দুর্দিনের এই দূর্গ-শিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।
অলক্ষণের তিলক রেখা
রাতের ভালে হোক না লেখা
জাগিয়ে দেবে চমক মেরে
আছে যারা অর্ধ-চেতন। ”
শেখ মুজিবুর রহমান নজরুল জন্মোৎসবে তার বাণীতে বলেন, সমাজতন্ত্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, পরাধীনতার বিরুদ্ধে নজরুলের অগ্নিমন্ত্র বাঙালিদের চিত্তে জাগিয়েছিল মরণজয়ী প্রেরণা। আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুকঠিন সংকল্পে। বঙ্গবন্ধু বলেন, শুধু বিদ্রোহ ও সংগ্রামের ক্ষেত্রেই নয়-শান্তি ও প্রেমের নিকুঞ্জেও কবি বাংলার অমৃত কণ্ঠ ‘বুলবুল’। দুঃখের বিষয়- প্রতিভার অবদান সম্পর্কে তেমন কোনো আলোচনাই হলো না। বাংলার নিভৃত অঞ্চলে কবির বিস্মৃত প্রায় যে সব অমূল্য রতন এখনও ছড়িয়ে আছে, তা পুনরুদ্ধারের যেকোনো প্রচেষ্টাই প্রশংসাযোগ্য। মনে রাখতে হবে বিদ্রোহী কবির এমন এক সময় আবির্ভাব যখন মধ্যাহ্ন সূর্যের মতো বাংলা সাহিত্যের আকাশে রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব-প্রতিভা সারাদিক পরিব্যপ্ত করে রেখেছিল। কাব্যের অনুভুতি, চেতনা, ছন্দ, সুর ও প্রকাশের যে পথ দৃষ্টিতে পড়ে, সে পথের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিশ্ব কবি। কিন্তু নজরুল কাব্যের স্বকীয়তায় আপন মহিমায় ভাস্বর। বৈপ্লবিক কাব্য জগতে যেন দাঁড়িয়ে আছেন স্বতন্ত্র ও একটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে। বাণীতে বঙ্গবন্ধু কবির সৃষ্টির পূর্ণ মূল্যায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশের বিদগ্ধ সমাজকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নজরুল একাডেমি এ কাজে অগ্রণী হয়েছে যেনে আশ্বস্ত হয়েছি। নজরুল জন্ম দিবসের উৎসবের রেশ স্তিমিত হওয়ার সাথে সাথে এ কাজে বিদগ্ধ সমাজের সমাজ পূর্ণোদ্যমে আত্মনিয়োগ করবেন বলে আশা রাখি। উল্লেখ্য, নজরুল একাডেমি আয়োজিত নজরুল জন্মোৎসব উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী এ বাণী দিয়েছেন বলে একাডেমির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়।৮৩
রেফারেন্স: ২৪ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ