রণাঙ্গন সংবাদ
বাংলার মুক্তি সংগ্রামের সুদীর্ঘ আট মাসের ইতিহাসে গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেকটি রণাঙ্গন থেকে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনীর অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও সাফল্যের সংবাদ বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র ও নির্ভরযােগ্য সূত্রে পাওয়া গিয়েছে তা যেমনি উৎসাহব্যঞ্জক ও মহিমামণ্ডিত তেমনি বাংলার স্বাধীনতা সূর্যের উদয়নের নিশ্চিত সংকেতসূচক। গত এক সপ্তাহে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশােহর, খুলনা, পটুয়াখালি, চিটাগং, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও নোয়াখালি প্রভৃতি প্রত্যেক জিলার রণাঙ্গণগুলিতে আমাদের দুর্বার সাহসী মুক্তিযােদ্ধারা অভূতপূর্ব বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে দস্যু পাক বাহিনীর বিপুল ক্ষতি সাধন করে তাদের সুরক্ষিত ঘাটিগুলি থেকে গুটিয়ে দিয়ে প্রত্যেকটি জিলার বিস্তির্ণ অঞ্চল মুক্ত রয়েছে এবং উক্ত মুক্ত অঞ্চলে স্বাধীন বাংলা সরকারের বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে মুক্তিসেনারা সদ্যমুক্ত অঞ্চল গুলিতে নিজেদের অবস্থানগুলি সুদৃঢ় করতঃ আরও অগ্রগতির জন্য শত্রুসেনার উপর প্রবল চাপের সৃষ্টি করে চলেছে। | মুক্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে পচাগড় মহকুমা, টাঙ্গাইল জেলার অবশিষ্টাংশ, সিলেট জেলার শমসের নগর, শহর নােয়াখালির পরশুরাম থানা, ছাগলনাইয়া প্রভৃতি স্থান দখল অত্যন্ত উল্লেখযােগ্য এ ছাড়াও শত্রুপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান যশােহর দুর্গ, বকশী বাজার, সুনামগঞ্জের উত্তরাঞ্চল, দর্শনা এখন মুক্তিফৌজের দ্বারা স্বাধীনভাবে অবরুদ্ধ এবং এসব অঞ্চলে শত্রুপক্ষের সঙ্গে আমাদের মুক্তিবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। এ সপ্তাহে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনীর নৌবাহিনীর গেরিলাদের অত্যন্ত তৎপর দেখা গিয়েছে। তাদের তৎপরতার ফলে শত্রুসেনাদের ৪টি জলজান সমস্ত ধনসম্ভার সহ নিমজ্জিত ও ২টি আমাদের করতলগত হয়েছে। শত্রুপক্ষের মােট তিনটি বিমান ও সতেরটি ট্যাঙ্কের ধ্বংস সাধন এ সপ্তাহের বিশেষ উল্লেখযােগ্য ঘটনা।
অগ্রদূত ॥ ১ : ১৪ ॥
১ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯