আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবীতে বিভিন্ন স্থানে সভা
২৪ শে মে-হাটহাজারী থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এবং বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম মােটর শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক জনাব শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে গত সােমবার এক কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাকিস্তান রক্ষাবিধির অপপ্রয়ােগের প্রতিবাদ করিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে উক্ত আইনবলে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা করিয়া বক্তৃতা করেন জনাব নুরুল আলম চৌধুরী, এস, এম, ইউনুস মিয়া, বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ কর্মী। সভাপতি জনাব শফিকুল ইসলাম চৌধুরী সরকারের এই ধরপাকড়ের। তীব্র প্রতিবাদ করিয়া শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল নেতার আশু মুক্তি দাবী করেন। ইহা ছাড়া তিনি জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার ও গ্রামাঞ্চলে পূর্ণ রেশনিং প্রথা প্রবর্তনের দাবী জানান। সভায় আগামী ৭ই জুনের হরতাল দিবসকে সাফল্যমন্ডিত করার আহ্বান জানাইয়া কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
সর্বদলীয় শ্রমিক সভা
গত ২০ শে মে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ শ্রমিকদের ধর্মঘটের সমর্থনে এবং পূর্ব পাকিস্তানের বিশিষ্ট শ্রমিক ও জননেতা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জনাব জহুর আহমদ চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হ্রাসের দাবীতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংস্থার সকল শাখার এক বর্ধিত কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনাব এস. এম. রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী-দাওয়ার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাইয়া অবিলম্বে বিদ্যুৎ শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া মানিয়া লওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরােধ জানানাে হয়। অন্যথায় চট্টলার শ্রমিক সমাজ বিদ্যুৎ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী-দাওয়ার সমর্থনে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়িয়া তুলিবে বলিয়া ঘােষণা করা হয়।
পটিয়া
সম্প্রতি পটিয়া থানা আওয়ামী লীগ কার্যকরী সংসদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান ও চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব এম, এ, আজিজ এবং অন্যান্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ নেতাসহ সকল রাজবন্দীর আশুমুক্তি এবং হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানানাে হয়। অপর এক প্রস্তাবে খাদ্যমূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানাে হয়।
হয়রানি বন্ধ করার দাবী
নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও তাহাদের আশুমুক্তি দাবীতে চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ডাঃ সৈয়দুর রহমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব রহমত উল্লাহ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক মিঃ বিধান সেন এবং কোষাধ্যক্ষ মােহাম্মদ শফী এক যুক্ত বিবৃতি দিয়াছেন। বিবৃতিতে তাঁহারা বলেন ও “গত ২০ শে মে চট্টগ্রাম পাের্টট্রাষ্টের ভাইসচেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা জনাব মােহাম্মদ ইদ্রিস ও জেলা আওয়ামী লীগ কোষাধ্যক্ষ বাবু মানিক চৌধুরীকে পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার করায় আমরা বিস্মিত হইয়াছি। তাহা ছাড়াও শহর আওয়ামী লীগ কার্যকরী সম্পাদক জনাব আবদুল মান্নানের গৃহে ঐ রাত্রে পুলিশ তল্লাসী চালায়। এইভাবে নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও হয়রানির নিন্দা করার ভাষা আমাদের জানা নাই।” ইতিপূর্বেও সরকার দেশরক্ষা আইনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানসহ প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করিয়াছে। বিবৃতিতে তাহারা বলেন, “সরকার দাবী করেন যে, জনগণ তাহাদের শাসন ও নীতিকে সমর্থন করে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের মতবাদ বাধামুক্তভাবে প্রকাশ করিতে পারিতেছে। অথচ সেই সরকারই আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও হয়রানি করিতেছে।” তাহারা অবিলম্বে সরকারের এই নীতির পরিবর্তন ও নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবী জানাইয়াছেন।
Reference: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ মে ১৯৬৬