বঙ্গবন্ধুর আরও একটি ওয়াদা পূরণ
দেশের মিলে উৎপন্ন কাপড়ের ডিস্ট্রিবিউটারশীপ, পাইকারী ডিলারশীপ ও এ ধরনের অন্যান্য এজেন্সি ব্যবস্থা বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোমবার আদেশ প্রদান করেছেন। সুষ্ঠু বণ্টনের নিশ্চয়তা বিধান এবং জনসাধারণ যাতে ন্যায্যমূল্যে কাপড় পেতে পারে, তজ্জন্য মিলে উৎপন্ন সুতীবস্ত্র এখন সারাদেশে ‘কাপড় দোকানদার সমিতির মাধ্যমে বিক্রি হবে। পণ্যদ্রব্য যাতে সরাসরি জনগণের হাতে গিয়ে পৌছে। তজ্জন্য মধ্যস্বত্ব ভোগীদের নির্মূল করার ঘোষণা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকার সোমবার লাইসেন্স প্রাপ্তকোটা ও পারমিটের মাধ্যমে সুতা বণ্টন ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন। অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকরী হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত এ আদেশ মোতাবেক এ মিলে উৎপাদন সুতা এখন থেকে রেশন কার্ডের ভিত্তিতে প্রদত্ত তাঁতিদের নিকট বাংলাদেশ ক্ষুদ্রশিল্প কর্পোরেশনের মাধ্যমে সরাসরি বণ্টন করা হবে। কাপড় বণ্টনের এ ব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধুর একটা ওয়াদা পূরণ হলো। দেশে কাপড়ের মূল্য হ্রাস করে জনগণের কল্যাণ সাধনই এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। দেশে প্রায় ৪৪ টি কাপড়কল রয়েছে। এসব কাপড়কলে মাত্র ৩ কোটি গজের মতো কাপড় উৎপাদন হয়। অথচ দেশে কাপড়ের মোট চাহিদার পরিমাণ হলো প্রায় ৯০ কোটি গজ। পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ১১ কোটি গজের মতো কাপড় রপ্তানি করতো। বাদবাকি চাহিদা তাঁত শিল্প থেকে পূরণ হত। দেশে বণ্টন ব্যবস্থার এ বৈপ্লবিক কার্যক্রমের ফলে কাপড়ের দাম কমবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে সকল কাপড়কল সুষ্ঠুভাবে চালু করতে কিছু সময় লাগবে। কারণ, দুটি কাপড়কলের সাজসরঞ্জাম এসে গেছে বলে জানা গেলেও কিছু কিছু কাপড়কল মেরামত করার প্রয়োজন আছে।
সুতা বন্টন : সুতা বণ্টনের এ নয়া ব্যবস্থা দেশব্যাপী তাঁতিদের নিকট সুষ্ঠু ও দ্রুত সুতা বণ্টনের নিশ্চয়তা বিধান করবে। গত ২৪ বছরের মধ্যে এ ব্যবস্থা এই প্রথম। এর ফলে তাঁতবস্ত্রের দাম কমবে। এবং মানও উন্নত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ তাঁত আছে। এসব তাঁতই দেশের কাপড়ের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ পূরণ করে থাকে। তবে অতীতে এসব তাঁতিরা মধ্যস্বত্বভোগী লোকের কারসাজির শিকার হন। এছাড়াও ত্রাস ও নির্যাতনের ৯ মাসকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদের বহু সংখ্যক লোককে হত্যা করেছে। প্রাথমিক হিসেবে দেখা যায়, দখলদারবাহিনীর আমলে শতকরা ৪০ ভাগ তাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার এসব তাঁতিদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। অচালু তাঁতসমূহও চালুর চেষ্টা চলছে। দেশে বড় বড় তাঁতশিল্প কেন্দ্রও রয়েছে। এর মধ্যে শাহজাদপুর, পাবনা, নরসিংদী, বাবুপুরা, কুমারখালী ও টাঙ্গাইলই হলো প্রধান। সকল তাত চালু হলে বাংলাদেশে মাসে তাঁতের জন্য ৩০ হাজার বেল সুতো প্রয়োজন হয়। এ পরিমাণের সুতো প্রায় সবই দেশের মিলেই উৎপাদন হতো। ১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ডের মতো সুতো পাকিস্তান থেকে আমদানি করতে হতো। কম করেও যে দশ লাখ তাঁতি কিছুদিন যাবৎ প্রায় বেকার হয়ে রয়েছে, এ ব্যবস্থার সাথে সাথেই তারা তৎপর হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র শিল্প কর্পোরেশনকে দেশের তাতিদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্পোরেশন তাঁতিদের রেশন কার্ড তৈরির কাজেও সাহায্য করবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কর্পোরেশন ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ লাখ রেশন অর্ডারের ফরম বিলি করেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।৫৩
রেফারেন্স: ১৫ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ