জাতিসংঘ সনদ মেনে চললে বাংলাদেশে গণহত্যা কম হতো- রাষ্ট্রপ্রধান
জাতিসংঘ, বিশেষকরে কার্যনির্বাহক যদি গত ১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী আশু ব্যাবস্থা গ্রহণ করতো তাহলে বাংলাদেশে গণহত্যা অনেক কম হতো। ঢাকায় নবনিযুক্ত জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার প্রধান মি. ভিক্টোর এইচ আমব্রীখ মঙ্গলবার সকালে সকালে রাষ্ট্র প্রধান জনাব বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর চৌধুরীর সাথে বঙ্গভবনে সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপ্রধান আবু সাঈদ চৌধুরী এই চৌধুরী এই মন্তব্য করেন। ড. ভিক্টোর করেন। ড. ভিক্টোর এর সাথে ছিলেন বিদায়ী আনরড প্রধান মি. টনি হেগেন। শান্তিরক্ষক সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, গত বছর বাংলাদেশি মানুষ যখন নির্যাতনের কষ্ট জ্বালা ভোগ করছিল তখন জাতিসংঘ তাদের সনদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে এগিয়ে আসেনি। অথচ মানবাধিকারের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং মৌলিক অধিকার হচ্ছে জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লেখন। রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশে অর্থনৈতিক এবং মানবিক ভূমিকায় জাতিসংঘের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, এখানে কার্যরত জাতিসংঘের বিভিন্ন ত্রান সংস্থা তাদের তৎপরতা তরান্বিত করা উচিৎ যাতে লক্ষ লক্ষ গৃহহীন মানুষের দুরবস্থার অবসান হয়। পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের ফেরৎ আনার প্রশ্নেও তিনি ড. ভিক্টোরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ড. ভিক্টোর জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে বাঙালিদের ফেরৎ আনার ব্যাপারে চিঠি লিখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।৩১ আদর্শ ভালোবাসা দিয়ে জনগণের সেবা করুন- বঙ্গবন্ধু সারদা, রাজশাহী। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে বলেন, যথাযথ ভাবে আইন শৃঙ্খলা বজায় না রাখলে অনেক কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। স্বাধীনতা উত্তরকালে সারদা পুলিশ একাডেমির প্রথম বিদায়ী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজে লিপ্ত সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীদের নির্মমভাবে নির্মূল করার জন্য আজ পুলিশ ও ও পুলিশ অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানান। জানান। বিদায়ী কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকালীন পুলিশ ও পুলিশ অফিসারদের অফিসারদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আপনারা এক গৌরবোজ্জ্বল ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জনগণ শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতার সাথে তা স্মরণ রাখবে। মুক্তি সংগ্রামে নিজেদের রক্ত দিয়ে যে গৌরব আপনারা অর্জন করেছেন, তাকে অক্ষুন্ন রাখতে সচেষ্ট হোন। এ গৌরবের কথা স্মরণ রেখেই আপনারা কর্তব্য সম্পাদনে এগিয়ে যান। তিনি বলেন, রাজারবাগের পুলিশ শত্রুর মোকাবেলা করেছিল আদর্শ ও স্বাধীনতার জন্যে। এ স্বাধীনতার মাধ্যমে আপনাদের সম্পর্কে জনগণের ধারণার পরিবর্তন এসেছে। তারা পুলিশকে আজ ভাই হিসেবে গ্রহণ করেছে। আশা করি এ মর্যাদা আপনারা রাখবেন। আপনারা এদেশেরই সন্তান। আপনারা শাসক হবেন না। স্বাধীন দেশের পুলিশ তা হয় না। আদর্শ, মহানুভবতা ও ভালোবাসা দিয়ে আপনারা জনগণের সেবা করবেন। পুলিশ বাহিনীর সামনে যে কাজ রয়েছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে স্বাভাবিক করে তোলার জন্য আপনাদের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মূলোৎপাটনে এগিয়ে যেতে হবে। সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা জনগণের শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজে লিপ্ত রয়েছে। এদের বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে না। পুলিশ এদের কঠোর হস্তে দমনের জন্যে এগিয়ে যাবে বলে তিনি ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী আজ হেলিকপ্টারে করে পুলিশ একাডেমিতে এসে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মান্নান এবং পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব আব্দুল খালেক তাঁকে সংবর্ধনা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এ অনুষ্ঠানে ভাষন দেন।৩২
রেফারেন্স: ৯ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ