বাংলার মানুষ প্রয়োজন হলে আবার রক্ত দেবে
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেন যে, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উড্ডীন রাখার জন্য বাংলার মানুষ প্রয়োজন হলে আবার রক্ত দেবে। রোববার পল্টন ময়দানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দশম সম্মেলনে প্রধান আতিথির ভাষণদানকালে একথা বলেন। জনাব তোফায়েল দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, বাংলার মানুষ যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিধ্বস্ত বাংলাকে সোনার বাংলায় রূপান্তরের কাজে নিয়োজিত, যুদ্ধের ক্ষতকে মুছে ফেলে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ পরিকর ঠিক সে সময়ে মওলানা ভাসানী পতাকা বদলানোর হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বাংলার মেহনতি মানুষ সেই চক্রান্ত সফল হতে দেবে না। তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বে একটি মাত্র বৃহৎ শক্তি চীন আজো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। সেই চীনের অর্থ ও সাহায্য পুষ্ট হয়ে এদেশের মাটিতে চীনের পতাকা তুলতে দেয়া হবে না। জনাব তোফায়েল আহমেদ স্বাধীনতা সংগ্রামে তার দলের নেতাদের ও কর্মচারীদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেওয়ার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান। জনাব তোফায়েল অতীত দিনের কথা স্মরণ করে আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন যে, উনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় তিনিও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐতিহাসিক এগারো দফার সাথে নয় দফার জন্যে আন্দোলন করেছিল। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিকা ও মাত্র চার মাসের বর্তমান সরকার কী ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছেন তার নাতীদীর্ঘ বর্ণনা দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি অত্যন্ত জোরের সাথে ঘোষণা করেন যে, বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বে এদেশে শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হবেই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সম্মেলনে যেসব দাবি দাওয়া ও অভাব অভিযোগের কথা বলা হয় তা বাংলাদেশের সরকার অবশ্যই পূরণ করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। প্রতিক্রিয়াশীল সরকার নয়। এর আগে সাধারণ সম্পাদক জনাব শামসুদ্দীন মিয়া সম্মেলনে বার্ষিক বিবরণী পেশ করেন। তিনি সমিতির পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে নিহত বীর শহীদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা আজও বঞ্চিত :
তিনি এই মর্মে অভিযোগ করেন যে, বহু রক্তের বিনিময়ে আজ দেশ স্বাধীন হলেও সরকারি কর্মচারীদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাবের দরুণ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা আজ তার স্বাদ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়ে বাড়ির কাজ করবার যে জঘন্য ঔপনেবিশিক মনোবৃত্তি আজো রয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করেন। সম্মেলনে ১৯৬০ সালের এফিসিয়েন্সী ও ডিসিপ্লিন রায় বাতিল, পণ্যদ্রব্যের দাম কমানো, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত কাজে নিয়োগ না করা, ওয়ার্ক চার্জ কন্টিনজেন্ট ও কন্ট্রাক্ট পাইকারদের চাকুরির নিয়মিতকরণ, ক্ষতিগ্রস্ত কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ, কোয়ার্টারও চিকিৎসা ও ছেলেমেয়েদের পোশাক পরার দাবি জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
রেফারেন্স: ৭ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ