You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজনৈতিক শূন্যতায় সমাজবিরোধীরা সুযোগ পেয়েছিল

টাঙ্গাইল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মান্নান এখানে বলেন যে, স্বাধীনতা উত্তরকালে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তাতেই সমাজবিরোধী ব্যক্তিরা জনগণের মনে বিভ্রান্তি বৃদ্ধির সুযোগ পায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার যাতে কর্মসূচি দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ রূপায়িত করতে পারে তার জন্যে জনাব মান্নান দেশে আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। আজ এখানে পুলিশ প্যারেড ময়দানে এক জনসভায় ভাষণদান কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, শ্রীঘ্রই পুলিশবাহিনীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করা হবে। তিনি বলেন, দেশের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই তা করা হবে। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন গণপরিষদ সদস্য জনাব শামসুর রহমান খান। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, মীর্জা তোফায়েল হোসেন এমসিএ, হাতেম আলী তালুকদার এমসিএ, বদিউজ্জামান খান এমসিএ, ফজলুর রহমান ফারুক এম সি এ ও সাবেক মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণের ঐক্য দ্বারা প্রথম পর্যায়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। অনুরূপ ঐক্যের মাধ্যমেই আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশ পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। তিনি বলেন, দেশের পুনর্গঠনের কাজের স্বার্থে সকলকে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। কলকারখানা ও মিল শ্রমিকদের পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি মোট জাতীয় উৎপাদনের ওপরই নির্ভরশীল। তিনি বলেন, সরকার জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের চারটি নীতি গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। স্বরষ্ট্রমন্ত্রী পুনরায় ঘোষণা করেন যে, গণতন্ত্র বিরোধী দলের অধিকার দিয়েছে। তবে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে একথা বলেন, এর দ্বারা এটা বোঝা যায় না যে কাউকে জাতির মূল ভিত্তিতে আঘাত হানতে দেয়া হবে। তিনি বলেন, বহুমূল্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা নসাৎ হতে দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে সাময়িক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও খাদ্য পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু জনগণের জন্য খাদ্যশস্যের ব্যবস্থা করেছেন এবং কাউকে অনাহারে মরতে দেয়া হবে না। জনাব মান্নান টাঙ্গাইল বাসীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, এই জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করে যাচ্ছে।
কাদের সিদ্দিকীর বক্তৃতা :
এর পূর্বে সাবেক মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার জনাব কাদের সিদ্দিকী তার ভাষণে জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে জনগণকে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যদি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে মানুষের শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল রূপে পুনর্গঠন করা না যায়, তাহলে স্বাধীনতা অপূর্ণ থাকবে। জনাব কাদের সিদ্দিকী দেশের ত্রিশ লাখ শহীদদের স্মরণে শহীদদিবস’ ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে শহীদের স্মরণে শহীদ দিবসের সাথে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের জন্য শহীদ দিবস পালন করা উচিত। সাবেক গেরিলা কমান্ডার ভুয়া মুক্তিবাহিনীর লোকদের গ্রেফতার ও তাদের শাস্তি বিধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগে ক্রীনিংয়ের দাবি জানান। কারণ এসব বিভাগে দালাল রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। সাবেক গেরিলা কমান্ডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি না থাকতেন, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তিনি হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন এবং তার আহ্বানেই সেই অস্ত্রশস্ত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে সমর্পণ করেছেন। তিনি জেলার বিভিন্ন স্থানে সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের গোপন তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলেন, দুষ্কৃতকারী ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র খুঁজে বের করার জন্য সরকারের ব্যাপক তল্লাশি চালানো উচিত। সম্প্রতি টাঙ্গাইলে মিছিলের ওপর বোমা নিক্ষেপের ঘটনার কথা উল্লেখ করে এটাকে সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের কাজ বলে বর্ণনা করেন।

রেফারেন্স: ৭ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!