সমাজতন্ত্রের শত্রুদের রুখে দাড়ান- বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের শ্রমিক শ্রেণির প্রতি সরকারের সাথে একযোগে কাজ করে সমাজতন্ত্রের শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সমাজতন্ত্রের শক্ররা সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য অর্জনে বাধা ও জাতীয়করণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি করতে চায়। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তারা যে ভূমিকা পালন করেছেন। এখন তাদের সেই ভূমিকা রাখলে চলবে না। তাদেরও অবশ্যই উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। মনে রাখা দরকার, শিল্প উৎপাদনের সুফল সমাজের সকল শ্রেণির মানুষেরই পেতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ চাষি ভাইদেরও এর সুফলের ভাগ নিতে হবে। জাতীয় স্বার্থের প্রতিকূল দাবি-দাওয়া পেশের মনোভাব ত্যাগ করা দরকার। কারণ সমাজতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ছাড়া সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েম করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা আর পুঁজিপতি প্রভুদের ভোগের জন্যে সম্পদ উৎপাদন করতে যাচ্ছি না। এখন যা উৎপাদন হবে, তা শ্রমিক কৃষক এবং বাংলাদেশের সকল মানুষের কল্যাণে লাগবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, কিছু সংখ্যক বিদেশি চর ও দুষ্কৃতকারী স্বার্থান্বেষী মহল মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সুযোগ নিয়ে মাঠে নামতে চাইছে। এদের অতীত কাজ কারবার জনগণ জানেন। এসব সাম্রাজ্যবাদী দালাল সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকতে হবে। দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন স্থানে শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তাদের ওপর কড়া নজর রাখতে হবে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, শুধু শ্রমিকদের দৃষ্টিভঙ্গি পল্টানো নয়, সরকারি প্রশাসন যন্ত্রকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রয়োজন মিটানোর জন্য সরকারি কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, উচ্চ এবং নিম্ন বেতন ভোগী কর্মচারীদের বেতনের বিরাট ব্যবধান কমানোর জন্য বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হবে। সে জন্য সরকার একটি জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নয়া কাঠামোতে কর্মচারীরা জাতীয় পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিবেন না। কোনো অঙ্গিকার করলে প্রাণের বিনিময়ে হলেও আমি তা পালনের চেষ্টা করি। অতীতে তাই করেছি। কিন্তু আমার হাতে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নেই যে, রাতারাতি সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলবো। সমৃদ্ধির পথে কোনো শর্টকাট রাস্তা আমার জানা নেই। শতাব্দির শোষণের পুঞ্জিভুত সমস্যা আমাদের সামনে। এর সমাধানের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে সোনার বাংলা গড়ার ভিত্তি রচিত হবে। ভাবী বংশধরদের শান্তি সমৃদ্ধির পথ নিশ্চিত হবে।
রেফারেন্স: ২ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ