জনগনের কষ্ট লাঘবে আরও একটি সরকারি পদক্ষেপ
প্রধামন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোমবার জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক মে দিবসের ভাষণে নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়তি আর্থিক সাহায্য দানের কথা ঘোষণা করেছেন। বেতার ও টেলিভিশনে প্রদত্ত বক্তৃতায় তিনি শ্রমিক শ্রেণির প্রতি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েমে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য গৃহীত সরকারি পদক্ষেপগুলোর উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশের কৃষক শ্রমিক, তাঁতি, কামার-কুমোরসহ সকল নির্যাতিত মানুষের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাব। তিনি বলেন, জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে সে সম্পর্কে সরকার সচেতন। জনসাধারণের সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে আমরা বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োজিত করৰ। জনগণের দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য গৃহীত সরকারি ব্যবস্থাগুলোর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের সুদসহ সমস্ত বকেয়া খাজনা মাফ করে দেয়া হয়েছে। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা আদায় রহিত হয়েছে। লবণের আবগারী শুল্ক আদায় বন্ধ হয়েছে। নিপীড়নমূলক ইজারা প্রথা বাতিল হয়েছে। সরকার টেস্ট রিলিফ বাবদে ২৬ কোটি টাকা বণ্টন করেছেন। আরও ১০ কোটি টাকা তাকাবি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ১ লাখ ৯০ হাজার টন সার এবং ২ লাখ মণ বীজ ধান বণ্টন করা হয়েছে। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত শিক্ষায়তনগুলো পুনঃনির্মাণ এবং ছাত্র শিক্ষকদের সাহায্যদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ২৮৭ টি রেল সেতুর মধ্যে ১৭০ টির মেরামত শেষ হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, এতে সরকারের বাড়তি ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ৭০ কোটি টাকার বকেয়া খাজনা ও কর মাফ করা হয়েছে। উৎপাদন বাড়িয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, সরকারের জাতীয়করণ কর্মসূচি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে একটি বলিষ্ঠ ও দুঃসাহসী পদক্ষেপ। পুরনো পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আমরা সমাজতন্ত্রের পথ নিয়েছি। আজ আমাদের ওপর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গঠনে দায়িত্ব বর্তেছে। এই নয়া ব্যবস্থা কায়েমে শ্রমিক শ্রেণির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
রেফারেন্স: ২ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ