খাদ্য পরিস্থিতি সন্তোষজনক
খাদ্যমন্ত্রী শ্রী ফনী ভূষণ মজুমদার সোমবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সারাদেশে পূর্ণ রেশন ব্যবস্থা চালু করাই সরকারের লক্ষ্য। দেশের বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে দেশের খাদ্য পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। খাদ্য চোরাচালানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে খাদ্যশস্যের চোরাচালান বন্ধ হয়েছে। বাসস’র খবরে প্রকাশ, সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা চালু করা সম্পর্কে তিনি বলেন, সারাদেশে সামগ্রিক রেশন ব্যবস্থা চালু করা এখনই সম্ভব হচ্ছে না। তবে ধীরে ধীরে অধিক থেকে অধিকতর শহরে সংশোধিত ও বিধিবদ্ধ রেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অতীতে দেশের সামগ্রিক জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ১২ ভাগকে সংশোধিত ও বিধিবদ্ধ রেশনের আওতাভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে ২০ ভাগ লোক রেশনের এই সুবিধা পাচ্ছে। খাদ্য পরিস্থিতির উন্নতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৭ লাখ টনের কিছু পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ১০ লাখ টন খাদ্যশস্য জুন মাসের শেষ নাগাদ এসে বাংলাদেশে পৌছাবে। এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী জানান যে, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ১ লাখ হাজার টন খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধা সত্ত্বেও খাদ্য দফতর এই সময় সারাদেশে ৪ লাখ টনেরও বেশি পরিমাণ খাদ্যশস্য বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট এক লাখ ১৮ হাজার টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আসে ২ লাখ ৩৮ হাজার টন। মে মাসে এসেছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন এবং জুন মাসে এসেছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার টন খাদ্যশস্য। তিনি জানান, ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘাটতির পরিমাণ ৩০ লাখ টন হবে বলে মোটামুটি হিসাব করা হয়েছে। খাদ্যশস্য আমদানি করেই এই ঘাটতি পূরণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী জানান যে এখন থেকে প্রায় ৬ সপ্তাহের মধ্যেই চালের দাম প্রতি মণ ৫০ টাকায় নেমে আসবে। বর্তমান মুহূর্তে চালের দাম বেঁধে দেয়া সম্ভব নয়, তবে পরিস্থিতি উন্নতি ঘটলেই চালের দাম বেধে দেয়া যেতে পারে বলেও তিনি জানান । চিনি আমদানি : খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের চিনি সঙ্কট সম্পর্কে সচেতন আছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া এবং ভারত থেকে চিনি আমদানির জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে তিনি মন্তব্য করেন, এ সমস্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা সত্ত্বেও দেশে চিনি সঙ্কট বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকবে।
রেফারেন্স: ২ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ