You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.05.12 | ৬-দফা বাস্তবায়নে গণআন্দোলনের মুখে শেখ মুজিবসহ বিরােধীদলীয় নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

৬-দফা বাস্তবায়নে গণআন্দোলনের মুখে শেখ মুজিবসহ বিরােধীদলীয় নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড়

খুলনা, ১০ই মে—পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমানসহ আওয়ামী লীগের ৭ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির গ্রেফতারে বন্দর শহর খুলনায় আপামর জনসাধারণের মধ্যে তীব্র বিক্ষোভ ধুমায়িত হইয়া উঠিয়াছে। নেতাদের এই গ্রেফতারে প্রতিবাদ জানানাের জন্য ১৩ই মে এখানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হইবে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের এই গ্রেফতারের নিন্দা করিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী এডভােকেট জনাব মনসুর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সেক্রেটারী জনাব এনায়েত আলী এবং সিটি আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জনাব এম. এ. বারী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তান। আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন একসময়ে গ্রেফতার করা হইয়াছে যখন তাহারা জনসাধারণের প্রাণের দাবী আদায়ে আন্দোলন শুরু করিয়াছেন। সরকারের এই কার্যকলাপ মানুষের স্বাধীন চিন্তাধারা ও বাক-স্বাধীনতার পরিপন্থী। আইনানুগ পথের আশ্রয় না লইয়া সরকার যে কর্মপন্থা গ্রহণ করিয়াছেন উহা কাপুরুষােচিত। এই বিবৃেিততে শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর আশু মুক্তি দাবী করা হয়। খুলনা জেলা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট এডভােকেট আবদুল জলিল এই ধরনের ধরপাকড়ের তীব্র নিন্দা করিয়া বলেন যে, গণ-আন্দোলন ধ্বংসের ইহা একটি দুরভিসন্ধি।

ময়মনসিংহবাসী মর্মাহত ও বিস্মিত
ময়মনসিং, ১০ই মে-ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব আখতারুজ্জামান, জামালপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট জনাব আবদুল হাকিম, সিটি আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট জনাব মকবুল আহমদ, সেক্রেটারী জনাব কমরুদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জনাব রফিকুদ্দীন ভুইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব হাতেম আলী সেক্রেটারী জনাব হাতেম আলী তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব আবদুস সাত্তার প্রমুখ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এক যুক্তবিবৃতিতে শেখ মুজিবসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতারের নিন্দা করিয়া বলেন, শেখ মুজিবর রহমান, জনাব তাজুদ্দীন আহমদ এবং খােন্দকার। মােশতাক আহমদসহ বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির গ্রেফতারে আমরা বিস্মিত এবং মর্মাহত হইয়াছি। এই ধরাপাকড়ের মধ্য দিয়া আওয়ামী লীগের ছয়-দফার প্রতি জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান সমর্থনে কর্তৃপক্ষ ঘাবড়াইয়া যাওয়ার লক্ষণই সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু তাহাদের জানা উচিত যে, দমনমূলক ব্যবস্থা দ্বারা কখনও ন্যায্য গণদাবীর কণ্ঠরােধ করা যায় না। এ প্রসঙ্গে আমরা জেলা আওয়ামী লীগের সহকারী সেক্রেটারী জনাব আবদুর রহমান সিদ্দিকীরও গ্রেফতারের নিন্দা করিতেছি এবং শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর আশু মুক্তি দাবী করিতেছি। সংবাদদাতা

সিরাজগঞ্জ মহকুমার তুমুল আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত
(নিজস্ব সংবাদদাতা) সিরাজগঞ্জ, ১০ই মে—আজ জনাব মােতাহার হােসেন তালুকদারের সভাপতিত্বে মহকুমা আওয়ামী লীগের এক বিশেষ জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মেসার্স আবদুল মােমিন তালুকদার, ডাঃ জসিম উদ্দীন আহমদ, দবির উদ্দিন আহমদ, আবদুর রউফ খান, মনসুর রহমান, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। আলােচনা প্রসঙ্গে সরকারী কার্যাবলীতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভায় গৃহীত প্রস্ত েিব আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান, খােন্দকার মােশতাক আহমদ ও তাজুদ্দিন আহমদসহ ধৃতনেতৃবৃন্দের আশুমুক্তি দাবী করা হয়। সভায় আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, অবিলম্বে মুক্তি প্রদান না করিলে সমগ্র মহকুমাব্যাপী তুমুল আন্দোলন গড়িয়া তােলা হইবে।

‘শ্রমিক-সাধারণ এ দমননীতি বরদাশত করিবে না’
(ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম অফিস হইতে) ৯ই মেশেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ ও বিরােধীদলীয় নেতৃবৃন্দ গ্রেফতারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তার ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন। বিবৃতিতে অবিলম্বে আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবী করা হইয়াছে। বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতাসহ মােট ২০ জনের স্বাক্ষরিত এই যুক্ত বিবৃতিতে আরও বলা হয়। আমরা আরও জানিতে পারিলাম যে সরকার পাকিস্তান রক্ষা আইনের প্রয়ােগ করিয়া আমাদের প্রিয় শ্রমিক নেতা জনাব জহুর আহমদ চৌধুরীকেও ঢাকায় গ্রেফতার করিয়াছেন। তিনি গত ৮/৫/৬৬ তারিখে সকালে উল্কাযযাগে ঢাকা যাত্রা করেন। প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে অংশগ্রহণের জন্যই তিনি ঢাকা গিয়াছিলেন। সুতরাং তিনি এমন কি করিয়াছেন যে, তজ্জন্য তাঁহাকে পাকিস্তান রক্ষা আইনবলে গ্রেফতার করা হইল, তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না। আমরা সরকারের এই দমন নীতির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করিতেছি।
সরকারের ভুলিয়া যাওয়া উচিত হইবে না যে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মােকাবিলা করিবার জন্যই দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগ করা হয়। কিন্তু সরকার বিরােধীদলীয় নেতৃবৃন্দের কণ্ঠরােধ করিবার জন্যই যেন এই আইন প্রয়ােগ করিতেছেন। এই ধরনের দমননীতি জনগণ বিশেষ করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-সাধারণ কিছুতেই বরদাশত করিবে না। আমরা অবিলম্বে আটক নেতৃবৃন্দের বিনাশর্তে মুক্তি দাবী করিতেছি। অন্যথায় যদি কোন অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি উদ্ভব হয়, তাহার জন্য সরকারই দায়ী হইবেন। যুক্তবিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন : মেসার্স জামশেদ আহমদ চৌধুরী, প্রেসিডেন্ট এসওয়ার্কাস ইউনিয়ন; মকবুল আহমদ সেক্রেটারী কর্ম ইষ্টার্ন লেবার ইউনিয়ন, এ, বি, এম, আনােয়ার হােসেন, সেক্রেটারী, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ কর্মচারী ইউনিয়ন; মাহবুব আলী, সাধারণ সম্পাদক পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে কর্মচারী লীগ; রহমত উল্লাহ চৌধুরী, পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে কর্মচারী লীগ নেতা মকবুল হােসেন খান, সাধারণ সম্পাদক, কর্ণফুলী পেপার মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন; জনাব ছিদ্দিক মিয়া, সেক্রেটারী, রবার এণ্ড এলাইড প্রােডক্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন; নূর আহমদ, সেক্রেটারী, পাকিস্তান টোবাকো কর্মচারী ইউনিয়ন; সফিকুল রহমান চৌধুরী, সেক্রেটারী, মটর ড্রাইভার্স ইউনিয়স; সফিকুর রহমান সেক্রেটারী, চট্টগ্রাম মাষ্টার্ড অয়েল এণ্ড ভেজিটেবল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন; নূরুল আমিন সেক্রেটারী, গােল্ডেন টোবাকো ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন; এস. এম. মহিবুর রহমান সেক্রেটারী, ন্যাশনাল সিমেন্স ইউনিয়ন; মােহাঃ ইলিয়াছ, কার্যকরী সভাপতি, ন্যাশনাল সিমেন্স ইউনিয়ন; জনাব এম. এ. ছালাম, সেক্রেটারী, আমিন জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়ন; আবু সিদ্দিক, সেক্রেটারী, সিদ্দিক অয়েল মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, মােহাঃ এয়াহিয়া চৌধুরী, সেক্রেটারী, এসাে ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। খায়রুল আনােয়ার, সেক্রেটারী, পাকিস্তান রােপ ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, বেবীটেক্সী ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, জয়েন্ট সেক্রেটারী, চিটাগাং মাষ্টার্ড অয়েল এণ্ড ভেজিটেবল টোবাকো ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন; ডাঃ আনােয়ার হােসেন, সভাপতি, আকিজ উদ্দিন টোবাকো ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন; সালেহ আহমদ চৌধুরী, সেক্রেটারী, আকিজ উদ্দিন টোবাকো ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।

দেওয়ালের লিখন হইতে শিক্ষাগ্রহণ করুন
পূর্ব পাকিস্তান বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জনাব নূরুল ইসলাম শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য নেতার গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা করিয়া বলেন, নেতৃবৃন্দকে ধরপাকড় এবং নির্যাতন করিয়া কোন আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যায় না। বরঞ্চ ইতিহাসের নজির হইতে দেখা যায় যে, নির্যাতন যত বেশী হইয়াছে গণজাগরণের দুর্বার গতিও তত শক্তিশালী হইয়াছে।
“কাজেই আমি সরকারকে অনুরােধ করি, সরকার যেন দেওয়ালের লেখন হইতে শিক্ষাগ্রহণ করিয়া ধৃতনেতৃবৃন্দসহ সকল রাজবন্দীকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেন। অন্যথায় তুমুল গণ-আন্দোলন তার স্বভাবগতির পথ বাছিয়া লইবে।”

চট্টগ্রামে প্রতিবাদ সভা ও নেতৃবৃন্দের বিবৃতি
চট্টগ্রাম ১১ই মে—শেখ মুজিবসহ অন্যান্য নেতার গ্রেফতারে গতকাল আন্দরকিল্লাস্থ জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে চট্টগ্রাম শহর ও জেলা আওয়ামী লীগের কর্মীবৃন্দ এবং যুবসমাজ ও শ্রমিকদের এক যুক্ত প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব এম, আর, সিদ্দিকী।
শহরে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকিলেও বিপুল সংখ্যক লােক সভায় যােগদান করেন। সভায় ১৩ই মে’র প্রতিবাদ দিবসে শহরের জে. এম. সেন হলে সভা, প্রতি থানা সদরদফতরে সভা ও বিক্ষোভ শােভযাত্রা বাহির করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ এই প্রতিবাদ দিবস পালনের আহ্বান জানাইয়াছে।
এই উদ্দেশ্যে কক্সবাজার, সাতকানিয়া, পটিয়া, আনােয়ারা, বাঁশখালি, রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মীরেশ্বরাই ও ডবলমুরিং এলাকায় সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের বন্দোবস্ত করা হইয়াছে।

যুক্ত বিবৃতি
সারা প্রদেশে নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম বার সমিতির সভাপতি জনাব আবুল কাসেম এডভােকেট, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব এম, আর, সিদ্দিকী, সাংগঠনিক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব আবদুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী, দফতর সম্পাদক জনাব এ, এ, হান্নান এবং সহ-সম্পাদক জনাব আবদুল ওয়াহাব যুক্তভাবে এক বিবৃতি প্রকাশ করিয়াছেন।
বিবৃতিতে তাহারা বলেন, ৬-দফার সংগ্রাম শেখ মুজিব অথবা আওয়ামী লীগের একার সংগ্রাম নহে; ৬-দফা সমগ্র পাকিস্তানবাসীর বাঁচামরার দাবী। সুতরাং নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করিয়া এই দাবীর সংগ্রাম বন্ধ করা যাইবে না। একদলকে গ্রেফতার করিলে নূতন আরেক দল এই সংগ্রামের পতাকা হাতে নিয়া অগ্রসর হইবে। সংবাদদাতা

যশােরের সর্বত্র অসন্তোষ
(নিজস্ব সংবাদদাতা) যশাের, ১০ই মেশেখ মুজিবর রহমানসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের সংবাদে যশােরের সর্বত্র নিদারুণ অসন্তোষ দেখা দিয়াছে। শহর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত ৯ই মে সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একটি প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেখ মুজিবর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকে বিনাবিচারে আটকের তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা হয় এবং অবিলম্বে শেখ মুজিবসহ সকল রাজনৈতিক নেতাকে বিনাশর্তে মুক্তির দাবী করা হয়।
সভায় অপর একটি প্রস্তাবে যশােরে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যসহ খাদ্যদ্রব্যের উর্ধ্বগতি রােধ করিবার জন্য পূর্ণ রেশনিংসহ অবিলম্বে সর্বদলীয় ভিত্তিক শহর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ফুড কমিটি গঠনপূর্বক সুষ্ঠুভাবে যাহাতে খাদ্যবণ্টন করা হয় তাহার দাবী জানানাে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্ত প্রকার সাটির্ফিকেট, শুল্ক ও ট্যাক্স আদায় বন্ধ রাখিবার জন্যও সরকারের নিকট দাবী জানানাে হয়।

জামাতে ইসলামী
পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামী আমীর মওলানা মােহাম্মদ আবদুর রহীম এক বিবৃতিতে বলেনঃ
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে দেশরক্ষা আইনেরবলে গ্রেফতার করিয়া সরকার চরম অবিমৃষ্যকারিতার পরিচয় দিয়াছেন। দেশরক্ষা আইনের সাহায্য রাজনৈতিক বিরােধিতার প্রতিশােধ গ্রহণ করা সবসময়ই নিন্দনীয় ও প্রতিবাদযােগ্য। এই আইন কেবলমাত্র জরুরী ও যুদ্ধকালীন অবস্থায় শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হইয়া থাকে; কিন্তু বর্তমান সরকার যুদ্ধোত্তরকালেও ইহাকে অন্যায়ভাবে বলবৎ রাখিয়া ইহার প্রয়ােগ করিয়া যাইতেছেন। সরকারের অনুসৃত এই নীতির আমরা তীব্র প্রতিবাদ করিতেছি। বিশেষতঃ রাজনৈতিক মতবিরােধকে ক্ষমতার সাহায্য দমন করিতে যাওয়ার মত কাপুরুষতা আর কিছুই হইতে পারে। আওয়ামী লীগের ৬-দফা আন্দোলন জনগণের সম্বন্ধেই পেশ করা হইয়াছে।
আমাদের বিশ্বাস এই যে, গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলসমূহের নিজ নিজ প্রােগ্রাম দেশবাসীর সামনে পেশ করার অধিকার একটি মানবিক, নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। এই ব্যাপারে সরকারের সাহস থাকিলে প্রকাশ্য আদালতে তাঁহাদের বিচার করিয়া আইনের শাসন কায়েম করিতে প্রস্তুত হউন।
“আমরা সরকারের নিকট জোর দাবী জানাইতেছি যে, পূর্ব পাকিস্তান। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি দান করা হউক এবং জনগণকে সকল প্রকার প্রােগ্রাম শান্তিপূর্ণ সুযােগদান করার উদ্দেশ্যে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা হউক। অন্যথায় ইহার ফলে কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সরকারই সেজন্য দায়ী হইবেন।”

দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ মে ১৯৬৬