You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.05.23 | ছয় দফা দাবীর সমর্থনে এবং শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবীতে জনসভা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ছয় দফা দাবীর সমর্থনে এবং শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবীতে জনসভা

নরসিংদি, ২২শে মে—ছয় দফা দাবীর সমর্থনে এবং শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবীতে আজ স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় প্রায় সব কয়জন বক্তাই দেশবাসীর অধিকার অর্জনের মধ্য দিয়া পাকিস্তানকে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী করিয়া তােলার উদ্দেশ্যে আপােষহীন সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। সভা শুরু হওয়ার পূর্ব হইতেই আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন ছিল এবং সভা চলাকালীন এক পশলা বৃষ্টি হয়। এতদসত্ত্বেও শ্রোতাদের একই জায়গায় বসিয়া নিবিষ্ট মনে বক্তৃতা শ্রবণ করিতে দেখা যায়। এই সভায় যােগদান করার জন্য ৭/৮ মাইল দূর হইতে দলে দলে লােক নরসিংদী আগমন করে। সভার কার্য শেষ হইবার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত চারিদিক হইতে আগ্রহী শ্রোতাদের সভায় আগমন করিতে দেখা যায়। আকাশের অবস্থা খুব ভাল না থাকায় সভার কার্য যথাশীৰ্ঘ শেষ করিতে হয়। শেখ মুজিবর রহমানের অবর্তমানে জনসভায় যে বিপুল জনসমাগম হয় তা অভূতপূর্ব।

মীজানুর রহমান চৌধুরী
জনসভায় জাতীয় পরিষদ সদস্য ও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদক জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী ঘােষণা করেন যে, বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে এই দেশের জনগণ তাহাদের স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছে। সুতরাং আজও তাহারা তাহাদের সেই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সদা-প্রস্তুত রহিয়াছে। তিনি বলেন, শােষণের চির অবসান ঘটাইবার জন্য আওয়ামী লীগ তথা এদেশের প্রতিটি মানুষ শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে কুণ্ঠাবােধ করিবে না।
রাজধানী হইতে প্রায় ৩২ মাইল দূরে অবস্থিত নরসিংদীর জনসভায় জনাব চৌধুরী তাহার দীর্ঘ বক্তৃতার মাধ্যমে ৬-দফার কর্মসূচীকে এক এক করিয়া ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, সরকার কিংবা অন্য কোন মহল যদি ৬-দফাকে কোন নির্দিষ্ট দলের প্রয়ােজনে প্রণীত রাজনৈতিক কর্মসূচী বলিয়া মনে করেন, তাহা হইলে ভুল করিবেন। যাঁহারা এইরূপ মনে করেন তিনি তাহাদের ৬-দফার কর্মসূচীকে ভালভাবে বুঝিয়া লইতে অনুরােধ জানান।
জনাব চৌধুরী বলেন, আজ এ দেশের মানুষ ৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য দিকে দিকে সংগ্রাম শুরু করিয়াছে। পূর্ব বাংলার প্রতিটি ঘরে আজ ৬-দফার বাণী পৌছিয়াছে—এদেশের কৃষক, মজুর, শ্রমিক প্রভৃতি সকল পর্যায়ের লােক বুঝিতে পারিয়াছে যে, ৬-দফার মধ্য দিয়াই তাদের অধিকার স্থায়ীভাবে অর্জিত হইতে পারে।

রফিকুল হােসেন
আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা জনাব রফিকুল হােসেন দৃপ্তকণ্ঠে ঘােষণা করেন যে, পাকিস্তানের জনতাকে সার্বজনীন ভােটাধিকারের অযােগ্য ঘােষণা করিয়া ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তানের বুনিয়াদকেই আঘাত করিয়াছেন। যাদের ভােটে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল তারাই যদি আজ ভােটের অযােগ্য হয় তবে পাকিস্তান দাঁড়ায় কোথায়? আর সেই জনতার পক্ষে কাশ্মীরীদের গণভােটের মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী করা কি হাস্যাস্পদ শুনায় না?

ওবায়দুর রহমান
দলের সমাজসেবা সম্পাদক জনাব ওবায়দুর রহমান বলেন যে, ৬-দফার মধ্য দিয়া দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খই প্রতিফলিত হইয়াছে। তাই ৬-দফাকে বাস্ত বায়িত করার দায়িত্বও আজ দেশবাসীকেই গ্রহণ করিতে হইবে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব সামছুল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন। নরসিংদী শ্রমিক ইউনিয়নের তরফ হইতে ৬-দফার প্রতীকরূপে ৬-এর ফুল দিয়া সহিত একটি ফুলদানী আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান। চৌধুরীকে উপহার দেওয়া হয়। সভাশেষে প্রস্তাব পাঠ করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব বজলুর রহমান। সভায় গৃহীত এক প্রস্ত বে ৬-দফা দাবীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। অপর এক প্রস্তাবে শেখ মুজিবর রহমানসহ অন্যান্য রাজবন্দীর মুক্তির দাবী জানানাে হয়। সভায় অবিলম্বে খাদ্য পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য হ্রাস করার জন্য দাবী জানানাে হয়। বিড়িশ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের জন্য টেণ্ডুপাতা আমদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবী জানাইয়া এক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩ মে ১৯৬৬