৬-দফার প্রণেতার মুক্তি
লালমনিরহাট, ২ শে মে-পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমগ্র লালমনিরহাটে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিক্ষোভের ঝড় বহিতেছে। এক সপ্তাহ ধরিয়া এখানে বিরােধী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারে তীব্র নিন্দা করিয়া বিভিন্ন সভায় প্রস্তাব গৃহীত হইতেছে এবং তাহাদের আশু মুক্তি দাবী করা হইতেছে। প্রায় দিনই বিকাল ৫টায় স্থানীয় মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে বিরাট জনসভার আয়ােজন করা হইতেছে। এই সভাগুলিতে হাজার হাজার লােক প্রিয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবী জানাইয়া প্রায় প্রত্যেক দিনই লালমনিরহাটে বিক্ষোভ মিছিল বাহির করিতেছে। বিক্ষোভকারী জনতা শেখ মুজিব জিন্দাবাদ”, “রাজবন্দীদের মুক্তি চাই”, “অত্যাচার ও নির্যাতন দ্বারা মানুষের বাঁচার দাবী রােখা যায় না।”, “৬-দফা জিন্দাবাদ”, “দেশপ্রেমিকদের স্তব্ধ করার পন্থা টিকবে না” প্রভৃতি ধ্বনি প্রদান করে।
সন্দ্বীপ
(ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম অফিস হইতে) সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম), ১৯ শে মে-পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ঘােষণা মােতাবেক গত ১৩ই মে প্রতিবাদ দিবস’ উপলক্ষে সন্দ্বীপ থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শেখ মুজিবর রহমান ও চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব এম, এ আজিজসহ অন্যান্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ নেতার আটকের প্রতিবাদে সন্দ্বীপে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল শেখ মুজিবের মুক্তি চাই; এম, এ আজিজের মুক্তি চাই; আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মুক্তি চাই; দমন নীতি চলবে না; হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা; পূর্ণ রেশনিং চালু কর; দ্রব্যমূল্য কমাও; শহীদ সােহরাওয়ার্দী-জিন্দাবাদ; আওয়ামী লীগজিন্দাবাদ প্রভৃতি ধ্বনি দিতে দিতে সন্দ্বীপ টাউন প্রদক্ষিণ করে। বিকাল ৪টায় সন্দ্বীপ পাঁচদিঘীর ময়দানে শফিকুল আলমের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়।
সভায় অবিলম্বে শেখ মুজিব ও অন্যান্য প্রাদেশিক নেতা এবং চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব এম, এ আজিজসহ সকল রাজবন্দীর আশুমুক্তি, শেখ সাহেবের উপর হইতে সকল মামলা প্রত্যাহার, চাউল ও নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে গ্রামাঞ্চলে পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন ও সরকারী উদ্যোগে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নির্ধারনের জোর দাবী জানানাে হয়। এই প্রতিবাদ সভায় ৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য আমৃত্যু সংগ্রামের দৃঢ়সংকল্প ঘােষণা করা হয়।
মুন্সিরহাট
মুন্সিরহাট (নােয়াখালী), ১৯শে মে—আজ এখানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় শেখ মুজিবর রহমানসহ আটক সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করা হয়। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাদির স্থায়ী সমাধানকল্পে ৬-দফার আশু বাস্ত বায়নের দাবী জানাইয়া সভায় একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সভায় নােয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব নুরুল হক এম, পি, এ ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব এস. এম. হুদা নেতৃবৃন্দের আশুমুক্তি, জরুরী অবস্থার অবসান, ও দেশরক্ষা আইনের অপব্যবহারের তীব্র নিন্দা করিয়া বক্তৃতা করেন। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল নেতার আশু মুক্তি, জরুরী অবস্থার অবসান, দেশরক্ষা আইনের অপপ্রয়ােগের তীব্র নিন্দা, নােয়াখালী জেলার দুঃখ মুহুরী ও সিলােনিয়া নদীর সংস্কার সাধন, সমগ্র দেশে পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন ও সীমান্তবাসীদের উপর অযথা হয়রানির দাবী করিয়া সভায় কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
দৈনিক ইত্তেফাক, ২২ মে ১৯৬৬