You dont have javascript enabled! Please enable it!

তাদের দিয়েছিলাম নীতি, আদর্শ ও নির্দেশ- ঠাকুরগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু

আমার ঠাকুরগাঁওয়ের ভাইয়েরা ও বোনেরা, আমার মনে পড়ে গণ-আন্দোলনের পূর্বে আমি এখানে এসেছিলাম। কসাগাওয়া থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত অনেক সভায় আমি বক্তৃতা করেছিলাম। আমাকে যখন পশ্চিম পাকিস্তানের জালেমরা ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের মরুভূমিতে নিয়ে যায় আমি তখন জানতাম না যে, আপনাদের কাছে আবার ফিরে আসব। আমি জানতাম না আমার সোনার বাংলাকে আবার আমি দেখব। আমি জানতাম না আমার বাংলাদেশের সোনার মানুষের মুখ আমি দেখব। যে বাংলার মাটিকে আমি ভালবাসি, আর যে বাংলার মাটি আমাকে ভালবাসে, যে বাংলার মানুষকে আমি ভালবাসি, যে বাংলার মানুষ আমাকে ভালবাসে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম, আমি জানতাম, আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। ফাঁসিকাষ্ঠের আসামী হিসাবেও জেলের মধ্যে কবর খোড়া সত্ত্বেও আমি জানতাম যে আমার বাংলার মানুষ স্বাধীন হবে এবং দুশমনের হাত থেকে আমার বাংলাকে রক্ষা করবে। আমি আমার সাত কোটি লোককে যাবার বেলায় কিছুই দিয়ে যাইতে পারি নাই। তাদের হাতে আমি অস্ত্র দিয়ে যেতে পারি নাই। তাদের দিয়েছিলাম নীতি, তাদের দিয়েছিলাম আদর্শ, তাদের দিয়েছিলাম নির্দেশ। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দলমত নির্বিশেষে আমার পুলিশবাহিনী,আমার পুরানো ই. পি. আর, আমার সামরিকবাহিনীর লোকেরা, আমার বাংলাদেশের ছাত্র-যুবক- কৃষকরা বিনা অস্ত্রে সেই পাঠানদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। কিন্তু বড় রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা পাওয়া গেছে। এতো রক্ত দুনিয়ার কোনো দেশে কোনো জাতি স্বাধীনতার জন্য দেয় নাই, যা আমার বাংলার মানুষ দিয়েছে। মানুষ যে এতো পশু হতে পারে, মানুষ যে এতো অসভ্য হতে পারে, মানুষ যে এতো অমানুষ হতে পারে, যা পশ্চিমা খান সেনাদের মতে, দুনিয়ার কোথাও এ রকম পয়দা হয় নাই। আমার লক্ষ লক্ষ মা-বোনকে হত্যা করেছে, আমার লক্ষ লক্ষ ঘর-বাড়িকে জ্বালিয়ে দিয়েছে, আমার দুধের বাচ্চাকে হত্যা করেছে, আমার ধানের গুদাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমার পোর্ট, গাড়ির লাইন ভেঙে দিয়েছে, আমার টাকা আত্মসাৎ করেছে, আমার বৈদেশিক মুদ্রা লুট করে নিয়ে গেছে। আমার মানুষকে ধরে ধরে নির্দয়ের মতো অত্যাচার করে হত্যা করেছে। দুনিয়ার মানুষ। দেখেছে যে কি অত্যাচার আমার দেশের ওপর করেছে। কিন্তু টিকতে পারে নাই খান সেনারা, টিকতে। পারে নাই পশ্চিমা শোষকগোষ্ঠী, তেইশ বছর, চব্বিশ বছর পর্যন্ত আমার বাংলার পাটের টাকা, আমার । বাংলার কৃষির টাকা, আমার বাংলাদেশের মানুষের খাজনার টাকা-আমার বাংলাদেশের মানুষের যা। কন্তু ছিল সব লুটপাট করে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে গড়ে তুলেছে। এর বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম বার বার। এর বিরুদ্ধে আমি রুখে দাঁড়িয়েছি। বাংলার মানুষ আমাকে সাহায্য করেছে। বেঈমানদের কাছে তবু মাথা নত করি নাই। যাতে আমার বাংলার মানুষ দেখে তাদের নেতা মরতে পারে। সে মরলে সরাসরি মরবে, মাথা নত করে মরবে না। আমি যদি স্বাধীনতা না দেখে যাই, তারা আমার যে ৩০ লক্ষ ভাই বোনকে হত্যা করেছে, তারা এই স্বাধীনতা দেখে নাই। তারা জীবনে আর মায়ের কোলে ফিরে আসবে না। আপনারা জানেন আমার মনের অবস্থা কি? আমি যখন সকাল বেলা বের হই তখন আমার ছেলেহারা মা, পুত্রহারা বাপ, স্বামীহারা মহিলা আমার কাছে এসে বলে- ‘বাবা আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে, বাবা আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে। বাবা আমি বিধবা বিপর্যস্ত । ৩০ লক্ষ লোক! একজন দুইজন নয়। এক পয়সার একবেলা খোরাকি পর্যন্ত তারা বাংলার মাটিতে রেখে যায় নাই। বৈদেশিক মুদ্রা না হলে দুনিয়ার কোথা থেকেও কোনো জিনিস কেনা যায় । বিশ্বাস করেন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ফিরা আইস্যা আমার ইচ্ছা ছিল না যে আমি প্রধানমন্ত্রী হই। প্রধানমন্ত্রী হয়ে কি হবে আমার? যে দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষ জান দিয়া ভালবাসে একটি লোককে। তার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব কি বড় হতে পারে? আমি দেখলাম যে এক পয়সার বৈদেশিক মুদ্রা নাই, কোথা থেকে আমি খাবার আনব? কি করে আমার মানুষের মুখে খাবার দিব? কোথা থেকে আমি জিনিসপত্র কিনে আনব? দিয়ে আমি ঠাই দেব? কোথা থেকে আমি অর্থ পাব? যা দিয়ে আমি আমার মানুষকে সাহায্য করব, আমার কাছেতো এখন কিছুই নাই। আমার কাছে তো আলাদিনের চেরাগ নাই। পশ্চিম পাকিস্তানিরা সব নিয়ে গেছে। আমি বললাম আমার কাপুরুষ হলে চলবে না। আমাকে এদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এদের যদি মৃত্যু হয়, তবে আমারও মৃত্যু হওয়া প্রয়োজন। ওদের দুখে আমি দুখী, ওদের সুখে আমি সুখী। ওরা আমার ভাই, আমি ওদের ভাই। দেখি কি করা যায়, চল দু’হাত তুলে চেষ্টা করে দেখি। আমার চিন্তা হয় বাংলার মানুষ সেদিন এককোটি লোক এই বাংলাদেশ ছেড়ে, ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। একজন লোক নয়, এক হাজার দুই হাজার নয়, এক লক্ষ দুই লক্ষ নয়- এক কোটি লোক বাংলা ছেড়ে, মাতৃভূমি ত্যাগ করে আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। ভারতের জনসাধারণ তাদের সাহায্য করেছিলেন, তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, তাদের খাবার দিয়েছিলেন, তাদের স্থান দিয়েছিলেন। আমরা বাঙালিরা অকৃতজ্ঞ নই, নিশ্চয় তাদের আমরা সাধুবাদ জানাব। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ৫ লক্ষ টন খাবার দিলেন। তিনি কিছু টাকা দিলেন যা দিয়ে সরকার চালানো শুরু হয়। তিনি কিছু মালপত্র দিলেন যা দিয়ে কারখানা চালানো আরম্ভ করা হলো। তিনি কিছু লোক দিলেন যা দিয়ে রেল লাইনগুলো চালু করা হলো। আমি মানুষ। বাঙালি নেমক হারাম নয়। যখনি এবার ঢাকায় আসলেন আমি তখনই তাকে বললাম শ্রীমতি গান্ধী, তুমিতো আমাকে ৫ লক্ষ টন খাবার দিচ্ছ, কিন্তু আমার যে আরও খাবার দরকার, আমি কোথা থেকে আনব? তুমি কি আমাকে আরও খাবার দিতে। পার না? কাল যখন আমি খুলনা থেকে ফিরে আসলাম, আমি তার কাছ থেকে চিঠি পেলাম যে, জনসাধারণকে এবং তাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীকে মোবারকবাদ জানাই। জিজ্ঞেস করতে পারেন, তোমাকে আমি আরও ২ লক্ষ ৫০ হাজার টন খাবার দিব। আমি আপনাদের পক্ষ থেকে ভারতের। আমি যখন দেখলাম এদেশে কিছু নাই, ওদের যদি খাজনা আদায় করতে যাই ওরাতো শেষ হয়ে। যাবে। আমি বললাম যাও ওদের বকেয়া খাজনা সব মাফ করে দিলাম। মানুষ গরু ছাগল কিনতে পারে না। কোথায় পাবো? দাও দশ কোটি টাকা? যেখান থেকে পারি, আমি ভিক্ষা করে অনিব। সবকিছু তহনই করে নিয়ে গেছে। খাজনা না দিলে সরকার কি দিয়ে সরকার চালাবে? কে দেবে? কোথেকে দেবে? সব মাফ করে দিয়েছি। পয়সা কোথা থেকে আসবে? পাট চালান দিব। আমার। যেগুলো পোর্ট আছে চট্টগ্রাম চালনা পোট। জাহাজ আসতে পারে না ভালোভাবে। জাহাজগুলো ডুবাইয়া গেছে নদীর মুখে যাতে জাহাজ না আসতে পারে? না খেয়ে মরে যাবো তবু গোলামের গোলামী করব না। ভুলে যান! তোমরা পারলে প্রায়শ্চিত্ত। করো। জীবনভর প্রায়শ্চিত্ত করো। কিন্তু মনে রেখো যারা আমার বাংলাকে, যারা আমার মা-বোন হত্যা করেছে, যারা আমার মা-বোনকে পাশবিক অত্যাচার করেছে, তাদের বিচার হবে বাংলার বুকে। আমি যাবো রাশিয়া। ভিক্ষা দাও। আমি যাবো ভারতে, ভিক্ষা দাও। আর চোরের দল এদেশ থেকে বর্ডার পার করে দেয়। আপনারা আমার জন্য খুন হয়েছেন। আমার জন্য ৩০ লক্ষ লোক জীবন। দিয়েছেন। আমার কাছে ওয়াদা করেন যে, চোরের গোষ্ঠী নিপাত করে দিতে হবে। রাজি আছেন কিনা? আর জিনিসের দাম বাড়াবা না, তোমাদের বলে দিচ্ছি আমি মুজিবুর রহমান। ভালো মানুষ- সত্যি কথা, নরম দেল-সত্যি কথা। কিন্তু মানুষের জীবন নিয়া ছিনিমিনি খেললে মেশিনগান চালাইয়া দেবার হুকুম দেবার জন্য এক মুহূর্ত দেরি করবো না। আপনারা মেহেরবাণী করিয়া জিনিসের নাম কমান। জিনিস যদি পাওয়া যায়, তবে দাম বাড়াবে কেন? আমি তাতো বুঝি না। আপনারা দেখেছেন যে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি। ৩০ লক্ষ লোকের রক্ত কিনতে কত টাকা লাগে! তাই বাবু কইয়া দেরে কার কাছে যাব। আজ আড়াই মাস হলো। আড়াই মাস। আমি একটা দিন বিশ্রাম নিতে পারি নাই। বিশ্রাম কারে কয় আমি জানি না। আমি চিন্তা করছি, চিন্তা করলে আমি শিহরিয়া উঠি। কি করে আমার দুঃখী মানুষ, মা বোনের মুখে হাসি ফুটাবো? আর চোরাকারবারী, বদমায়েশ, বাংলার বুকে বইসা বছর বছর দাম বাড়াইয়া দেয়। আমার সংগ্রামী ভাইয়েরা, আমার বাংলার জনসাধারণ, আমর ঠাকুরগাঁওয়ের জনসাধারণ তোমরা আমাকে ভালবাসো কিনা? যদি ভালবাস তবে এই চোরাকারবারীদের শেষ করতে হবে। যেমনি আমার কথায় অস্ত্র ধরেছিলা, দরকার হলে তোমাদের আবার আমি লাঠি ধরতে বলব। চোরাকারবারী গোষ্ঠী আমি বাংলা থেকে নিপাত করে দিব। আপনারা সাহয্য না করলে পারব না। আমার শতকরা ৬০ জন পুলিশকে মাইরা থুইয়া গেছে। আমার শতকরা ৬০ জনের মতো, আমার বাংলাদেশ রাইফেলের জোয়ানদের মেরে ফেলে দিয়ে গেছে। আমি মিলিটারী দিয়ে দেশ শাসন করতে চাই না। আমি পুলিশ দিয়ে দেশ শাসন করতে চাই না। আমি চাই বাংলার জনগণের সাহায্য নিয়ে দেশ শাসন করতে। ওরা থাকবে, ওরাও বাংলার সন্তান। কিন্তু আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে আগে। আপনাদের কাজ করতে হবে। আরে, দুনিয়ায় আমি এমন মানুষ দেখি নাই। আশ্চর্য হয়ে যাই। মানুষেরতো একটু বোঝা উচিৎ যে, এতে রক্তের পরে স্বাধীনতা এসেছে। আজ চোরাকারবারীরা, ঠাকুরগাঁওয়ের ভাইয়েরা, আজ একটা কথা জিজ্ঞাসা করি আপনাদের কাছে। যারা অন্যায় করেছে নিশ্চই তাদের সাজা হওয়া উচিৎ। কিন্তু যারা নিরপরাধ তারা যেন সাজা না পায়। আপনাদের ঠাকুরগাঁওয়ে একটা প্রবলেম হয়ে গেছে, কিছু লোক এখানে এসে বাসিন্দা হয়েছিল। আমি জানি কিছু লোক খান সেনাদের সাথে মিশে আপনাদের অত্যাচার করেছে। তাদের বিচার করা হবে। তাদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু যারা নিরপরাধ, ঘরবাড়ি ত্যাগ করে চলে গেছে, তাদের থাকতে দিতে হবে, রাজি? এভাবে না, হাত তুলে বলতে হবে। আমি কি করে তাদের খাওয়াব? যাইয়া দেহী চাঁপাই নবাবগঞ্জে ৫০ হাজার উদ্ধাস্তু। একটা শহরে যদি ৫০ হাজার লোক আইসা বসে! সে দেশের লোক কে বাচাবে? সেখানে ৫০ হাজার লোক চইলা গেছে। তারা আমার কাছে আইসা কান্দে-আমরা কি করে খাওয়াব? আমরাইতো না খেয়ে মরছি। তাদের থাকতে দিতে হবে। আর যারা বদমায়েশি করছে, তাদের আমি বলে দিচ্ছি। -ঐ জেল পুরে আমি তাদের আরেক জেল করে, তাদের ভরতে হবে। আপনারা নিরপরাধ ও নিরাশ্রয় । যারা তাদের, তাদের আপনার ভাই মনে করে মার্জিতভাবে আশ্রয় দিবেন। ভাইয়েরা বোনেরা, দেশ শুধু একজনের নয়। আপনাদের কৃষির উন্নতি করতে হবে। সাত কোটি লোক, দশ কোটি টাকার বেশি আমি টাকা দিব। ওর মধ্যে কষ্ট কষ্ট করে চালাইতে হবে। দেবার পারব না। আপনারা মুজিবুর রহমানকে চিনেন, মিথ্যা কথা বলবে জাদ আমি চাই না। আমি মিথ্যা কথা বলে মানুষকে ধোকা দিতে পারব না। যা অবস্থা খান সেনারা বাংলায় করে গেছে, সে জায়গায় ফিরে আসতে আমার কমছে কম দশ বৎসর লাগলে। কিন্তু আমি। মিথ্যা কথা দেয় না। মিথ্যা পারব না। আশা করি তিন বছরে সে জায়গায় ফিরে আসতে পারব না। এই তিন বছর আমি কাউরে কিছু দেবার পারব না। যদি পান, মনে করবেন, কিছমতের জোরে পাইছেন। যদি বলেন দিতে হবে, আমি বলব আসসালামুয়ালাইকুম। আমি সেটা দেবার পারব না। আমি খাজনা মাপ কইরা দিচ্ছি। যা আমার হাতে আছে সেটা মাপ কিন্তু যা নাই দেবার পারব না। স্বাধীনতার অর্থ বিশৃঙ্খলা নয়। যুবক ভাইয়েরা গ্রামে গ্রামে যাও। লেখা-পড়া শিখ। তোমাদের ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে। ভবিষ্যতে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ভবিষ্যতে তোমাদের বড় বড় চাকুরি করতে হবে। দেশ তোমার, তাকে গড়তে হবে। লেখাপড়ার দিকে একটু মনোযোগ দাও। আপনারা জানেন যে এই যে বড় বড় ব্যাংক যা বাংলাদেশে ছিল আজ তা বাংলার ছয় সাত কোটি লোকের সম্পত্তি। এখন আর দু একজনের সম্পত্তি না। যাকে বলে ব্যাংক জাতীয়করণ। এখন এই ব্যাংকগুলো যার মধ্যে চাবি। যা নিয়ে ভুড়িওয়ালা আরও ভুড়ি পয়দা করে আর গরিব আরও গরিব হয়। এই জায়গায় আমি প্রথম আঘাত করেছি। তারা কিন্তু বসে থাকবে না। এটাকে বানচাল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করবে। আপনাদের হুঁশিয়ার হতে হবে। আমি আপনাদের সাথে, আপনারা আমার সাথে থাকবেন। যদি ভুড়িওয়ালারা রাত্রে পয়সা দিয়ে অতি বিপ্লবী কথা কয়, তাদের কেমন করে দমন করতে হয়-তা বাংলার মানুষ জানে। জানেন না? একটু ভালো করে রেডি হয়ে থাইকেন। আমি হুমুম দিয়ে বসতেও পারি তা বলা যায় না। আমি লোকটা একটু সোজা মানুষ। আমার বড় বড় কল-কারখানা। ব্যক্তিগত সম্পত্তি সব ছিল, সেগুলোকে জাতীয়করণ করে সাতকোটি লোকের সম্পত্তি করেছি। যতগুলো চটকল ছিল, সব এখন বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের সম্পত্তি। আমি জাতীয়করণ করে বাংলার মানুষকে দিয়েছি। ফসল উৎপাদন করেন, চেষ্টা করেন। আমাকে বলে যে পাম্প নাই। আমি বললাম যে পাম্প নাই, সত্যি নাই। গর্ত করো। পানি উঠাও। কাজ করো-ফসল উৎপাদন করতে হবে। ভিক্ষুকের জাত হয়ে আমি বাঁচতে চাই না। আমি মাথা নত করে কারো কাছে ভিক্ষা চাই না। আমি চাই আমার মানুষ ভবিষ্যৎ বংশধর সুখী হউক। ভাইয়েরা আমার, আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, অনেক রৌদ্রের মধ্যে কষ্ট করেছেন। আসুন আমার সঙ্গে হাত মিলান। একটা মোনাজাত করেন। যে সব ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফেরাং কামনা করেন। ভাইয়েরা আমার, অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। ওদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, সেটিই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ। সেদিনের সংগ্রাম ছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম হবে দেশ গড়ার সংগ্রাম। বাংলার মানুষ যেন পেটভরে ভাত খায়, বাংলার মানুষ যেন শান্তিতে বাস। করে, কিন্তু বাংলাদেশে যদি দুর্নীতিতে ভরে যায়, বাংলায় যদি শোষণহীন সমাজ গঠন না হয় তাহলে। আমি বিশ্বাস করি যারা শহীদ হয়ে মারা গেছে ওদের আত্মা শান্তি পাবে না। তাই আপনাদের কাছে। আমার অনুরোধ যে, আপনারা সকলে কাজ করেন, দেশকে গড়ে তোলেন। আমি বলে দিচ্ছি পরিষ্কার কথা-কিন্তু আপনারা আশা করবেন না যে তিন বৎসরের মধ্যে আমি দেব। আপনাদের নিজেদের কাজ করে খেতে হবে। আমি ভিক্ষা করে এনে যা পারি আপনাদের পৌছাবো। ডাকাতেরা যাতে না খেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আবার আপনাদের ধন্যবাদ দিয়ে ঠাকুরগাঁও ভাইদের কাছে বিদায় নিচ্ছি। খোলা হাফেজ।

রেফারেন্স: ২ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!