You dont have javascript enabled! Please enable it!

দেশ গড়ার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুনবঙ্গবন্ধু

 জাতির জনক ও আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, বাংলার মাটি সোনার মাটি, বাংলার মানুষ সোনার মানুষ। এটা থেকেই সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতা ও বিপ্লবোত্তর নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতির পটভূমিতে আহুত আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে শুক্রবার বক্তৃতা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, অপরিমিত ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে বিফল হতে দেয়া হবে না। যে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তার চেয়েও অধিক ত্যাগ ও কঠোর পরিশ্রমের মনোভাব নিয়ে দেশ গড়া ও মানুষের সার্বিক মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসার জন্য বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ কর্মী ও নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তুমুল করতালি ও উল্লাস ধ্বনির মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম দেশ গড়ার সংগ্রাম, দেশবাসীর অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। বিপ্লবোত্তর প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন অংশ হতে প্রায় ১৪ শত ডেলিগেট ও বহুসংখ্যক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এ উপলক্ষে কাকরাইলস্থ আওয়ামী লীগের নূতন অফিসের সম্মুখে বিরাট প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। জাতীয়করণ, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও দেশ গড়ার কর্মসূচি ঘোষণার পটভূমিতে আহুত কাউন্সিল অধিবেশনে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, কালোবাজারি, দ্রব্যের উর্ধ্বগতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও পররাষ্ট্র নীতি, যুদ্ধবন্দি, আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন ও অন্যান্য বিষয় বিস্তারিত ভাবে খোলা মন নিয়ে আলোচনা করেন। তার বক্তৃতার মাঝে তুমুল করতালি ও স্লোগান শোনা যায়। সভার প্রারম্ভে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বয়ং স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ ছাত্র, কর্মী, শ্রমিক, যুবক, নেতা ও কৃষকদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রস্তাব উত্থাপন ও ফাতেহা পাঠ করেন। পূর্বাহ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদকের লিখিত রির্পোট পেশ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, এই সরকার আওয়ামী লীগের সরকার। এটা সরকারের আওয়ামী লীগ নয়। আওয়ামী লীগ প্রধান কর্মী, নেতা ও পরিষদ সদস্যদের সর্ব প্রকার লোভ ও লালসা ত্যাগ করে দেশ গড়া ও প্রতিষ্ঠানের কাজ করার উপদেশ দেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, এ প্রদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণের জন্য তিনি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। দলীয় কর্মী ও নেতাদের আত্মকলহ ভুলে গিয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য তিনি উপদেশ দেন। কোনো কোনো পরিষদ সদস্যকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সতর্ক করে দেন। আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, তার সরকারের মূলনীতি ও স্তম্ভ হলো গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। এই নীতির ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালিত হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য ও সক্রিয় সহযোগিতা দানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মোজাফফর ন্যাপ, কংগ্রেস, শ্রমিক সংস্থা, ছাত্র সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও তার নেতাদের ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

রেফারেন্স: ৭ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!