You dont have javascript enabled! Please enable it!

রণাঙ্গনের খবর

কুমিল্লা মুক্তিসেনারা পূর্ব রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান শালদাননদী এলাকা দখল করিয়া লওয়ায় কাইউমপুর রক্ষার জন্য পাক সেনারা মরিয়া হইয়া চেষ্টা চালায়। মুক্তি সেনারা গত ১৫ই নভেম্বর কাইউমপুরের উপর প্রচন্ড আক্রমণ চালাইয়া ১৫ জন শত্রুসেনাকে খতম করে। পাক সেনারা অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি চান্দিনা হইতে পিছু হটিয়া গিয়াছে। কুমিল্লা জেলার নবীনগর ও বাঞ্চারামপুর থানার বিস্তীর্ণ এলাকায় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিযােদ্ধারা হানাদার বাহিনীর সহিত অনেকগুলি মুখােমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ইহার মধ্যে কয়েকটি তীব্রতর সংঘর্ষে ইব্রাহিমপুরে ১৫ জন, গােপালপুর ও শ্রীরামপুরে ২০ জন এবং ভােলাচঙ্গে ১০ জন শক্রসেনা খতম হয়। এই সব সংঘর্ষে একজন মুক্তিসেনা শহীদ ও ৩ জন আহত হন।  ১৬ ঘণ্টা তীব্র লড়াইয়ের পর গত ১৯শে নভেম্বর বীর মুক্তিযােদ্ধারা আখাউড়া হইতে ৪ মাইল দূরে সিলেট ও কুমিল্লার সন্ধিস্থল মুকুন্দপুর স্টেশন হইতে শত্রুসেনাদের তাড়াইয়া দেয়। মুকুন্দপুর, পাকিস্তানী। দখলদার বাহিনীর একটি শক্ত ঘাটি ছিল।

এই লড়াইয়ে শত্রু পক্ষে ২০ জন খতম হয় ও অন্যূন ২৯ জন নিয়মিত ও আধা-সামরিক বাহিনীর জোয়ান বন্দী হয়। ময়মনসিংহ সম্প্রতি বাজিতপুর থানার সচরাচর বাজারে পাকসেনা ও রাজাকারদের ঘাটি গেরিলারা আক্রমণ করিলে পাকসেনারা রাজাকারসহ উর্ধ্বশ্বাসে পালাইয়া যায়। পাকসেনারা প্রচুর অস্ত্রপাতি ও রসদ ফেলিয়াই চম্পট দেয়। এই ঘাটিতে শয়তানরা আশ-পাশের অনেক গ্রাম ও বাজার লুট করা সম্পদ জমা রাখিয়াছিল। মুক্তি যােদ্ধারা এখান হইতে লুটের মালসহ ৩ লক্ষ নগদ টাকা উদ্ধার করে। গত ৬ই নভেম্বর বীর গেরিলারা ভৈরবের কাছে কালিপ্রসাদ রেল স্টেশনে রাজাকারদের একটি ঘাটি আক্রমণ করিয়া ১৬ জনকে খতম করে। ৩০ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। গেরিলারা ৪০টি রাইফেল হস্তগত করে। দিনাজপুর গত ১৭ই নভেম্বর গেরিলা মুক্তিযােদ্ধারা আকস্মিকভাবে আক্রমণ চালাইয়া দিনাজপুর জেলার পানিগাছ গ্রামে পাকসেনাদের একটি সুদৃঢ় ঘাটি দখলে করিয়া লয়।  গত ১৫ই নভেম্বর দেবীগঞ্জ থানার কালুরহাট গ্রামের কুখ্যাত পাক দালাল দেলােয়ার হােসেন। চৌধুরীকে গেরিলারা খতম করে। এই দালালের মৃত্যুতে গ্রামবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়াছে। গত ১৩ই নভেম্বর দিনাজপুর জেলার হাড়িভাসা হাটে মুক্তি যােদ্ধাদের পুঁতিয়া রাখা মাইন বিস্ফোরণের ফলে ৩ জন শত্রুসেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। রাজশাহী গত ১৬ই নভেম্বর বীর গেরিলা যােদ্ধারা রাজশাহী জেলার গােদাগারি এলাকায় পাক সেনাদের ঘাটি অবরােধ করিয়া প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ফলে ৬ জন শত্রুসেনা খতম ও ৪ জন আহত হয়। একই সময় গেরিলারা দক্ষিণ খেটকিবাড়িতে ৩ জন হানাদার দুশমন খতম করে। কুষ্টিয়া গত ১২ই নভেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা কুষ্টিয়ার আলমডাঙ্গার পাক সেনাদরে ঘাটিতে আক্রমণ চালায়। ফলে ১৭ জন শত্রুসেনা নিহত হয়।  গত ১৪ই নভেম্বর খােদাইপুরে পাক-সেনা ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে এক তুমুল সংঘর্ষে শত্রু পক্ষে ১ জন ক্যাপ্টেন সহ ১৩ জন খতম হয়।  একই দিনে গেরিলা মুক্তি যােদ্ধারা আঙ্গুলবেড়িয়া পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও করে ও ১২ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশকে খতম করে। নাটসি ও গাগারিও যােগাযােগ পথে গেরিলাদের দ্বারা ঘটানাে এক বিস্ফোরণের ফলে ১১ জন পাকসেনা ও ১ জন রাজাকার খতম হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১ : ২১।

২৮ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!