আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, জাতীয়তাবাদ আমাদের আদর্শ। তিনি বলেন, এটা স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলমন্ত্র এবং এই জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কেউ কেউ তাকে চরম উগ্র জাতীয়তাবাদ বলতে পারেন। কিন্তু আমাদের এই জাতীয়তাবোধ জিইয়ে রাখতে হবে। বাঙালি জাতির জনক আরও বলেন, জাতীয়তাবোধ ছাড়া বিশ্বের কোনো জাতি স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। “গণতন্ত্র আমরা দিই” আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সরকারের নীতির উল্লেখ করে বলেন, আমরা মানুষকে গণতন্ত্র দিবই। তার পূর্ণ নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবেন। শেখ মুজিবুর রহমান জানান, গণতন্ত্রের অর্থ যা খুশি তাই করা নয়। তিনি আরও জানান, গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ করে কেউ যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের এজেন্ট হিসেবে দেশের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত হতে চান, তাকে সেই লাইসেন্স দেয়া যেতে পারে না।
প্রত্যেক ইউনিয়নে সমবায় দোকান খোলা হবে
কালোবাজারী ও দ্রব্যের উচ্চমূল্যের উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, তারা দেশের মায়ায় জনগণের পাশে দাঁড়াতে বা সাড়া দিতে পারেন নি। তিনি জানান, সরকার দেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে ১টি করে ন্যায্যমূল্যের সমবায় দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমবায় ভিত্তিতে পরিচালিত এইসব দোকান হতে ন্যায্যমূল্যে জিনিসপত্র জনসাধারণের মধ্যে বিক্রয় করা হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, আগামি ৭ দিনের মধ্যে জিনিসপত্রের মূল্য হ্রাস করা হলে পাইকারী বিক্রেতার লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
দখল করা বাড়ি-গাড়ি ফেরত দিতে হবে
আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেআইনিভাবে দখল করা বাড়ি-গাড়ির কথা উল্লেখ করে বলেন, এটা তাদের ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় তাদের জেলে যেতে হবে বলে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলারদের জানান।
প্রত্যেক মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হবে
আওয়ামী লীগ প্রধান কাউন্সিলারদের আরও জানান, প্রত্যেক মহকুমাকে ভবিষ্যতে জেলায় রূপান্তরিত করা হবে। প্রয়োজনবোধে কোনো কোনো মহকুমাকে পুনর্গঠন করা হবে। আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে
দেশের আমলাতান্ত্রিদের সাবধান করে জাতির পিতা বলেন, তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তিনি জানান, আমলাতান্ত্রিদের মনোভাব পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যা এই সুযোগ গ্রহণ করে মানসিকতা পরিবর্তন পূর্বক এদেশের মানুষের সেবক হিসাবে কাজ করতে ব্যর্থ হলে ছক্কার খোলা কলিকা সবই বদলাতে হবে।
‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভিত্তিতে সোনার বাংলাকে নতুন করে গড়তে হবে
গণহ সমাজ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একতাবদ্ধ হয়ে সোনার বাংলা গড়তে হবে। অনন্ত সংগীত ও গণ শিক্ষায়তনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুবসমাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রি অধ্যাপক ইউসুফ আলী উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন যে, যুব সমাজকে শুধু ডিগ্রি লাভের মোহকে পরিত্যাগ করে কারিগরি শিক্ষা ও জ্ঞান লাভেরর মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে হবে। আমি আশা করি, এই শিক্ষায়তন দেশের মানসিকতা ও সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করতে সক্ষম হবে। শিক্ষায়তনটির অন্যতম প্রিস্তপসক জনাব আমিনুল হক বাদশা প্রতিষ্ঠানটির সদস্যবৃন্দের কাছে শিক্ষায়তনটিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতীক হিসেবে গড়ে। তোলার আবেদন জানান। সভাপতির ভাষণে জনাৰ আশরাফ উজ্জামান প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং কতিপয় সুবিধা অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন। সভাশেষে শিক্ষায়তনেরই ছাত্র ও শিক্ষকদের দ্বারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
রেফারেন্স: ৭ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ