অওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল সভা সমাপ্তি অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে সংগ্রামের নায়ক, প্রেরণার উৎস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দলীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত থাকতে এবং পরবর্তী কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত দলীয় প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। জাতির জনক আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল সর্কিট হাউজ রোডে বিল্পব ও স্বাধীনতা উত্তর নবতর পরিস্থিতি, জাতীয়করণ ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ঘোষণার পটভূমিতে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের উক্ত সমাপ্তি অধিবেশনে ভাষণ দান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এবারের দুর্গ হবে শোষণের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশ গড়ার দুর্গ। আওয়ামী লীগ কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরও বলেন, গরিবকে আর শোষণ করতে দেয়া হবে না। শোষণের পথ রুদ্ধ করার ব্যবস্থা আমরা করবই । উপস্থিত আওয়ামী লীগ কাউন্সিলদের তুমুল করতালি ও স্লোগানের মধ্যে থোষণা করেন, এ দেশের সম্পদ সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সম্পদ । সাড়ে সাত কোটি মানুষই তা ভোগ করবে। শোষণের অবসানের উদ্দেশে জাতীয়করণ ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ঘোষণার পটভূমিতে দুই দিবস ব্যাপী কাউন্সিলর অধিবেশন গতকাল সমাপ্ত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অংশ হতে ১৪ শত কাউন্সিলার ও দুই হাজার ৬ শত ডেলিগেট অধিবেশনে যোগদান করেন। সম্মেলনে শোষণের অবস্থান ও দেশ গড়ার নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণা পত্র নতুন ভাবে প্রণয়ন করা হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনা করার পর ২৬ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়। সকাল ৯ হতে বেলা ২টা এবং বিকাল ৪ টা হতে রাত ৯ টা অবধি কাউন্সিল অধিবেশন চলে। দলীয় প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। কাউন্সিলের এক প্রস্তাবে দলীয় প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের কেন্ত্রীয়, জেলার সংগঠন সমূহ গঠন করার জন্য সর্বময় ক্ষমতা দান করা হয়। তুমুল করতালির মধ্যে তিনি ঘোষণা করেন, বর্তমান সরকার সাড়ে সাত কোটি মানুষের সরকার, এই সরকার শুধু আওয়ামী লীগের লোকজনের জন্য নহে। দেশের আইন শৃঙখলা বজায় রাখতে হবে এবং তাদের এদেশের সম্পদ ভোগ করার সুযোগ দিতে হবে। তিনি জানান, এদেশের সম্পদ আর ‘ভুড়িওয়ালাদের ‘ পকেটে যাবে না, তারা এদেশের মানুষকে শোষণ করতে পারবে না। শোষণ বন্ধের ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করবেন। শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও পরিষদ সদস্যদের গ্রামে গ্রামে কাঁপিয়ে পড়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
গ্রামে গ্রামে স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী গঠন করুন :
আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রত্যেক গ্রাম, ইউনিয়ন ও থানায় স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী গঠন করার নির্দেশ দেন। আগামি ২ মাসের মধ্যে দুই লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহের জন্য কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবকবাহিনীকে সৎ কর্মী নিয়োগের উপদেশ দেন। বঙ্গবন্ধু জানান, স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী গ্রামে গ্রামে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করবে, চোর ডাকাত ও দুষ্কৃতকারীদের দমনে নিযুক্ত থাকবে। পুলিশবাহিনী তাদের সহযোগিতা করবে। কৃষি ব্যবস্থার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, কৃষি উন্নয়ন সাধন করতে হবে, অধিক ফসল, ফল বৃদ্ধি করতে হবে। শুধু বিদেশ হতে খাদ্য আমদানির ওপর ভরসা করে থাকলে চলবে না।
চিঠি লিখিবে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের সাথে আমার সম্পর্ক হলো রক্তের সম্পর্ক। তোমরা দেশের ও নিজেদের অবস্থা জানিয়ে চিঠি দিও আমি তোমাদের চিঠি পড়ি। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ কর্মীদের লোভের বশবর্তী না হওয়ার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, মুসলীম লীগ এদেশের মানুষকে শোষণ করে সম্পদ গড়েছিল যা আজ নাই। তোমরা এদেশের মানুষের সাথে বেঈমানি করলে জনগণ তোমাদের সম্পদ কেড়ে নিবে। তিনি আরো বলেন, আপনারা সৎ পথে থাকলে কোনো বদনাম হবে না।
রেফারেন্স: ৮ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ