You dont have javascript enabled! Please enable it!

প্রথম গণপরিষদের আজ প্রথম অধিবেশন

ত্রিশ লক্ষ বাঙালির আত্মাহুতি, এক নদী রক্ত মানব ইতিহাসের করুণতম অশ্রু বন্যা ও অপরিমিত ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১০ টায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সার্বভৌম গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের মুক্ত ও নির্ভয় রাজনীতিতে গণ, প্রতিনিধিদের ঐতিহাসিক সমাবেশের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা, আকাঙক্ষা বিপ্লবী সাধনা এবং রক্ত পল্লবিত তিতিক্ষার গণতান্ত্রিক এবং বঙ্গবন্ধু বিঘোষিত শোষণ মুক্ত সমাজতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটবে। মুক্ত বাংলার গণপ্রতিনিধিরা বাঙালি জাতির সুদীর্ঘকালের আশা- আকাক্ষা ও স্বপ্ন সাধকে বাস্তবায়িত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আজ শাসনতন্ত্র রচনার কাজে হাত দেবেন। গণ-পরিষদের এই অধিবেশন তাই একটি নতুন জাতির জীবনে নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে। স্মরণযোগ্য যে, গত বছর ৩ মার্চে ঢাকায় আহুত সাবেক পাকিস্তানি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করার পরই বাংলাদেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে এই পরিষদ ভবনটি বাঙালি হত্যা ও নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বর্বর পাকিস্তানবাহিনী এখানে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা ও নির্যাতন করেছে। এখানে প্রহসন মার্শাল ল’ কোর্টও অবস্থিত ছিল। প্রথম দিনের অধিবেশন সদস্যদের শপথ গ্রহণ, স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদান ও শহীদ পরিষদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক প্রস্তাব গৃহীত হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বয়ং এই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। আসন্ন পরিষদ অধিবেশনে শুধু শাসনতন্ত্র প্রণীত হবে। শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পর বর্তমান গণ-পরিষদ আইন-পরিষদ হিসেবে গণ্য হবে। শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পর আইন পরিষদ দেশে সার্বিক পরিস্থিতি ও সমস্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করবে। স্পীকার নির্বাচনের পূর্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার জন্য রাষ্ট্রপতি প্রবীণ পরিষদ সদস্যদের মধ্য হতে একজনকে নির্বাচন করবে। রংপুরের শাহ আবদুল হালিম বর্তমান পরিষদের প্রবীণতম সদস্য বলে জানা গেছে। প্রেসিডেন্ট উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার জন্য যাকে মনোনিত করবেন তিনি স্বয়ং শপথ গ্রহণ করবেন। পরে তিনি পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন এবং স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার নির্বাচনকালে পরিষদে সভাপতিত্ব করবেন।

রেফারেন্স: ৯ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!