সিলেটে হার্মাদেরা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ
(ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি) জকিগঞ্জ, ২৫শে নভেম্বর পাক তস্করদের তথাকথিত শক্ত ঘাঁটি জকিগঞ্জ-আটগ্রাম থেকে হানাদার দস্যু এবং তাদের তাবেদার ও পদলেহী কুলাঙ্গারদের সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদ করে দুর্ধর্ষ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুক্তিযােদ্ধারা (ফ্রিডম ফাইটার্স) প্রচণ্ড বেগে সিলেট শহর অভিমুখে এগিয়ে চলেছেন। বঙ্গশার্দুলদের দুর্বার অগ্রাভিযানের মুখে শত্রুদের সমস্ত প্রতিরােধ ব্যর্থ হচ্ছে এবং তাদের আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত প্রতিরক্ষা বুহ্য ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। হানাদারবাহিনী শহরের অদূরে গােলাপগঞ্জের কাছে শক্তি সংহত করছে। এখানেই তারা মুক্তিবাহিনীর পথরােধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে মুক্তিবাহিনীর বীর জোয়ানেরা হানাদারদের দূরপাল্লার কামানের মুহুর্মুহঁ গােলাবর্ষণ এবং বিমান আক্রমণ প্রতিহত করে ছাগলিবাজার অতিক্রম করে চুড়খাই পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছে এবং হানাদারদের মুখােমুখি অবস্থান করেছে। এখানেও একটি প্রচণ্ড সংঘর্ষ ঘটে যেতে পারে। উভয়পক্ষই মােকাবেলার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। অন্যদিকে তামাবিল হয়ে বঙ্গশার্দুলদের অপর একটি দল বিরাট শক্তি নিয়ে শালুটিগর অভিমুখে এগিয়ে আসছে দুর্বার বেগে। ছাতক, জৈন্তাপুর, কুলাউড়া প্রভৃতি অঞ্চলেও মুক্তিবাহিনী হানাদারদের কোনঠাসা করে রেখেছে। শত্রুরা সর্বত্র অগ্রবর্তী ঘাঁটি ছেড়ে পিছু হটে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তারা চতুর্দিক থেকে এমনভাবে অবরুদ্ধ হয়ে আছে যে, পিছনে হটে যাওয়ার কোন সুযােগও তাদের জুটছে না। লাতু, বড়লেখা বিয়ানীবাজারে হানাদার দস্যুরা এমনি ত্রিশঙ্কু অবস্থান সম্মুখীন।
শত্রুদের যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন। শমশেরনগর বিমান বন্দর ও তৎসংলগ্ন সামরিক ছাউনিতে হানাদার দস্যুরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শত্রুরা অনবরত তাদের সদর দফতরে শক্তি বৃদ্ধির জন্য জরুরী বার্তা প্রেরণ করছে। কিন্তু নতুন সৈন্য প্রেরণের কোন পথই আর খােলা নেই। রেলপথ বিচ্ছিন্ন সড়কপথ বিধ্বস্ত! জলপথ বিপদ সঙ্কুল। একমাত্র পথ উন্মুক্ত ছিল আকাশে। কিন্তু সে পথও এখন রুদ্ধ হয়েছে। শালুটিগর ও শমশেরনগরের | বিমান ঘাঁটি দুইটিই মুক্তিবাহিনীর দূরপাল্লার কামানের আয়ত্তে এসে যাওয়ায়। তাই প্রকৃতপক্ষে সমগ্র সিলেটেই শত্রুরা এখন অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। তাদের রসদ ও অস্ত্র-বারুদ সরবরাহ এবং লােকবল বৃদ্ধির সব পথই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজেই সিলেট শহরের পতনও অনিবার্য এবং অত্যাসন্ন। তবে হানাদাররা যদি জনপদ ধ্বংশের ঝুকি নিয়ে ব্যাপক বিমান হামলার পথ বেছে নেয় তাহলে তাদের অবস্থান সাময়িকভাবে মজবুত হবে। কিন্তু তাতেও চরম বিপর্যয় রােধ করা সম্ভব হবে না। কেননা মুক্তি বাহিনী ইতিমধ্যে বিমান হামলা প্রতিরােধের ক্ষমতাও অর্জন করছে। চলতি অভিযানেই তার কয়েকদফা প্রমাণ মিলেছে।
মুক্তবাংলা এ ১: ১০
২৭ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯