গণপরিষদে আলোচনা
পরিষদের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদকে সার্বভৌম এবং প্রাথমিকভাবে জাতির জন্য একটি গণমূখী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের মধ্যে এর কাজ সীমাবদ্ধ থাকবে বলে উল্লেখ করেন। পরিষদের নেতা বঙ্গবন্ধু বর্তমান গণপরিষদের প্রকৃতি ও এখতিয়ার সম্পর্কে সদস্যদের বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে বলেন, দেশের জন্য একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বর্তমান পরিষদের এবং এই পরিষদকে কোনোক্রমেই পার্লামেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। পরিষদ নেতা বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যবিধি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য সদস্যবৃন্দের প্রতি আবেদন জানান। এছাড়া বিতর্কে অংশ গ্রহণের সময় পরিষদের কার্য প্রণালীবিধি পুরোপুরি মানিয়া চলার জন্য সদস্যদের প্রতি আবেদন জানান। এক পর্যায়ে যখন পরিষদের প্রায় সকল সদস্য একযোগে এই কথা বলার চেষ্টা করতে থাকেন, তখন পরিষদের নেতা বঙ্গবন্ধু তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের উচিত পরিষদের সুশৃক্ষল কার্যের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।” তিনি দুঃখ করে বলেন, ১৯৫৮ সালের পর হতে দেশে কোনো পার্লামেন্টারি রাজনীতি বিরাজমান না থাকায় আমরা পার্লামেন্টারী রাজনীতি ও রেওয়াজ ভুলে গেছি। তবে পরিষদের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব পরিষদকে নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে, পরিষদের সদস্যগণ কথা বলার অধিকার নিশ্চয়ই পাবেন। গণপরিষদের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একমাত্র সদস্যের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, এই পরিষদে কোনো বিরোধী দল নাই। তবে ন্যাপের এই সদস্যের পরিষদে কথা বলার অধিকার রয়েছে। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এছাড়া এই সদস্যের আরও কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া উচিত বলে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন। পূর্বাহ্নে গণ-পরিষদের নির্বাচনে পার্লামেন্ট হিসেবে ঘোষণার জন্য অনুরোধ জানান। জনাব ওবায়দুর রহমান জানান, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা লাভের পর তৎকালীন ভারতীয় ও পাকিস্তানের গণ-পরিষদ পার্লামেন্ট হিসাবেও কাজ করতো। গণ-পরিষদকে পার্লামেন্ট হিসাবে ঘোষণার যুক্তি হিসেবে জনাব ওবায়দুর রহমান বলেন যে, এই পরিষদের সদস্যগণ জনগণের নিকট দায়ী। অথচ এখন পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে সেইরূপ কোনো ক্ষমতা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। জনাব ওবায়দুর রহমান সরকারকে এই পরিষদের নিকট দায়ী থাকার জন্য সুপারিশ করেন। গণ-পরিষদ অধিবেশনে জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী, জনাব ওবায়দুর রহমান, দেওয়ান আবুল আব্বাস, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, জনাব তাহের উদ্দীন ঠাকুর, জনাব আশরাফ আলী, শ্রী সুরঞ্জিত, ড, আসাবুল হক প্রমুখ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
রেফারেন্স: ১১ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ