আপনারা গ্রামে ফিরে যান, টাউটদের কথায় কান দিবেন না
পূর্ত ও গৃহসংস্থান মন্ত্রী জনাব মতিয়ুর রহমান বাংলাদেশ বাস্তুহারা পুনর্বাসন সমিতি আয়োজিত নীলক্ষেত বাবুপুরা এলাকায় বাস্তুহারাদের এক সভায় ঘোষণা করেন যে, বাস্তুহারাদের গৃহ সংস্থান সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার অতি শীঘ্রই ব্যাপক ভিত্তিতে স্বল্প ব্যয়ে গৃহ নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন যে, এক বৎসরের মধ্যে বাস্তুহারা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং বাস্তুহারাদেকে গ্রামে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন যে, পূর্বের ন্যায় শহর উন্নয়ণের অযথা ব্যয় না করে বর্তমান সরকার গ্রাম উন্নয়ণ অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাছাড়া একশত বিঘার উপরে বাড়তি ভূমি সরকারি দখলে এনে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। সুতরাং কর্মসংস্থানের আশায় শহরে ভিড় না করে গ্রামে ফিরে যাওয়া। উচিত। পূর্তমন্ত্রী বলেন যে, শহরে বাস্তুহারারা যে পরিবেশে বাস করে, তা যে কোনো সরকারের পক্ষে কলঙ্কজনক। তাই সরকার ইতোমধ্যেই ৯ হাজার প্লট বণ্টনের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন যে, এক শ্রেণির টাউট বাস্তুহারাদের নামে ব্যবসা শুরু করছে। এই সকল টাউট ও মুনাফাখোর ঠকবাজদের। সম্পর্কে তিনি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। জনাব মতিয়ুর রহমান মুক্তি সংগ্রামে বাস্তুহারাদের অবদান স্মরণ করে বলেন যে, সব আন্দোলনেই তারা ছাত্রদের সাথে ছিলেন, তাই হানাদার পাকিস্তানবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে খেটে খাওয়ার জন্য তিনি বাস্তুহারাদের প্রশংসা করেন এবং তাদেরকে সবরকম সাহায্যদানের আশ্বাস দেন। আনিসুজ্জামান : সভাপতির ভাষণে দৈনিক আজাদের সম্পাদক জনাব আনিসুজ্জামান সকলের পূর্বে বাস্তুহারাদের সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, সরকারের বিঘোষিত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পদক্ষপকে বানচালের জন্য প্রচেষ্টা চলছে। তাই এক কোটি বাস্তুহারাকে এই বৈপ্লবিক সংগ্রামে শরিক হতে হবে। তিনি টাউটদের সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেন এবং ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। আমিনুল্লা : পূর্বাহ্নে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. সৈয়দ আহমদ চৌধুরী সমিতির দ্বিবার্ষিক কার্য বিবরণী পেশ করেন। সমিতির সভাপতি জনাব এ, কে, এম, আমিনুল্লা তার ভাষণে অভিযোগ করেন যে, কলাবাগান মিরপুর এলাকায় সরকার প্রতি পরিবারকে এক কাঠা করে জমি দানের কথা ঘোষণা করলেও দুই পরিবারকে এক কাঠা জমি দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন যে, এই পর্যন্ত বাস্তুহারাগণ কোনো রিলিফ পায় নাই বা তাদের জন্য পানিয় জলের ব্যবস্থা করা হয়নি। এমন কি প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলো বাস্তুহারাদের ছেলে মেয়েদের ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তিনি বলেন যে, অবশ্যই সমিতি বস্তি এলাকায় একটি স্কুল স্থাপন করেছে, কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্য পুস্তক দানের কথা ঘোষণা করা হলেও এখনো বই পাওয়া যায় নাই। বাস্তুহারাদের উৎখাত করার আগে তিনি বেআইনিভাবে জমি দখলকারীদের শাস্তি বিধানের দাবি জানান। সমিতির পক্ষ হতে পূর্ত মন্ত্রীকে মালপত্র প্রদান করা হয় ও একটি প্রতীক কুড়ে ঘর উপহার দেয়া হয়।
রেফারেন্স: ১৬ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ