You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের স্বার্থ সংক্রান্ত ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু- শ্রী, ডি, পি, ধর এর আলোচনা

আগামি ২৫ এপ্রিল রাওয়ালপিণ্ডিতে দূত – পর্যায়ে যে ভারত পাকিস্তান আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট জেসব বিষয় উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নীতি-নির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী, ডি, পি, ধর বুধবার ঢাকায় গণভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে সে সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও মত বিনিময় করেন। প্রস্তাবিত ভারত-পাকিস্তান আলোচনায় ভারতের পক্ষ হতে বিশেষ দূত হিসাবে শ্রী ধর কয়েক জন সহযোগীসহ যোগদান করবেন। এতদুদ্দেশ্যে শ্রী ধর ও তার সহযোগীরা আগামি ২৩ এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডি যাত্রী করছেন। দূত পর্যায় ভারত-পাকিস্তান বৈঠক সফল হলে পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জনৈক ভারতীয় মুখপাত্র (ঢাকায়) প্রসঙ্গতঃ জানান যে, উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে নিশ্চয়তাবিধান করাই ভারতের বিঘোষিত নীতি। আসন্ন রাওয়ালপিণ্ডি বৈঠকের প্রাক্কালে বাংলাদেশের রাজধানী নগরীতে শ্রী ধরের বর্তমান সফরের মূলে দুটি লক্ষ্য রয়েছে। অরত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে সেসব সম্পর্কে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করা এবং ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহে বাংলাদেশের মতামত লাভ করাই তার বর্তমান সফরের লক্ষ্য। শ্রী ধর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে এক ঘন্টা ব্যাপি একটি বৈঠকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদের সঙ্গে দুই ঘন্টা ব্যাপী অন্য একটি বৈঠকে মিলিত হন। আসন্ন ভারত পাকিস্তান আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে ভারত কীভাবে কি কথা বলবে, শ্রী ধর তাঁর গতকালের দুটি বৈঠকে সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর উপদেশ গ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর শ্রী ডি, পি ধর সাংবাদিকদের নিকট বলেন, অনেকগুলি বিষয় সম্পর্কে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু আবার এমন কতগুলি বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে যে গুলির জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর সাথে শ্রী ধরের দ্বিতীয়বার আলোচনার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো প্রকার আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে পূর্ব শর্ত হিসাবে অবশ্যই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করবে বাংলাদেশের এই বিঘোষিত নীতির পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা যাচ্ছে যে, আসন্ন রাওয়ালপিন্ডি আলোচনা ভারত-বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে।শ্রী ধর তার বর্তমান চাকা সংশ্ন শেষ করে আগামিকাল নয়া দিল্লি যাত্রা করছেন। পাকিস্তানের পক্ষে গোলাম মোস্তাফা জাতোইঃ নয়া দিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পর্য কোনো ঘোষণা প্রচারিত না হলেও আশা করা যাচ্ছে আন্ন ভারত-পাকিস্তান বৈঠকে পাকিস্তানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর রাজনীতি বিষয়ক মন্ত্রী জনাব গোলাম মোস্তফা জাতোই অভিন্ন দৃষ্টিকোণ ঃ শ্রী, ডি, পি, ধর গতরাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে ৮০ মিনিট ব্যাপী দ্বিতীয় দফা এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর বলেন যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সব বিষয়েই পূর্ণমতৈক্য রয়েছে। জনৈক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে নীতি নির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, সব সমস্যার প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের দৃষ্টিকোণ এক ও অভিন্ন। যখন আমরা কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলি, তখন আমরা কেবল ভারত ও বাংলাদেশের সমস্যা নিয়ে কথা বলি না। সারা উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রশ্নেই কথা বলি । কাশ্মীরে পাকিস্তানের অধিকার নাই ঃ রাতে গণভবনের অপেক্ষমান সাংবাদিকদের নিকট শ্রী, ডি, পি, ধর আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে পাকিস্তানের কোনো স্থিত-অধিকার নাই। তিনি বলেন, আসন্ন দূত পর্যায়ে ভারত-পাকিস্তান আলোচনায় কাশীর প্রশ্ন উত্থাপিত হলে, ভারত দৃঢ়ভাবে এই ভূমিকাই গ্রহণ করবে যে, কাশ্মীর ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি আরও বলেন, এই প্রশ্নের প্রধান বিষয় হলো পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের যে অংশটুকু দখল করে রেখেছে তা পাকিস্তানকে ছেড়ে দিতে হবে। ঢাকা উপস্থিতি ঃ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা শ্রী ডি, পি, ধর বুধবার সকালে ঢাকায় এসে পৌছান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সেক্রেটারি জনাব করিম, ঢাকাস্থ ভারত দূতাবাসের মন্ত্রী শ্রী দীক্ষিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতীয় দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা বিমানবন্দরে শ্রী ধরকে অভ্যর্থনা জানান। বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী সুবিমল দত্ত একই বিমানে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি তাঁর সরকারের সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে দিল্লি গমন করেছেন। কূটনৈতিক মহল শ্রী ধরের ঢাকা সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। ভুঠো স্বীকৃতি দানে আগ্রহীঃ ইসলামাবাদ, ১৯ এপ্রিল। আজ এখানে সরকারি সূত্রে বলা হয় যে, প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানে প্রস্তুত রয়েছেন। উক্ত সূত্রে প্রকাশ করা হয় যে, জনাব ভুট্টো কূটনৈতিক সূত্রে বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ ও বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের আগ্রহ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে অবহিত করেছেন।

রেফারেন্স: ১৯ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!