You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
১২ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
শেখ মুজিব সম্পর্কিত প্রশ্নটি পূর্ব্বশর্ত্তের অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই :
গোলটেবিল সম্পর্কিত ‘ডাকে’র বৈঠক লাহোরে স্থানান্তরিত
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সংস্থার বৈঠক লাহোরে স্থানান্তরিত হইয়াছে এবং আগামী ১৫ই ফেবরুয়ারী প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে লাহোরে পুনরায় ডাক-এর মূলতবী বৈঠক অনুষ্ঠিত হইবে।
তিন দিনব্যাপী বৈঠকের শেষদিন গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের প্রস্তাব অনুযায়ী আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবী গোলটেবিল বৈঠকের পূর্ব্বশর্ত রূপে গ্রহণ করা হয় নাই। কোন কোন ডাক সদস্য এই ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের উপর চাপ সৃষ্টি করিতেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করিতে না চাহিলে তাহারা ডাক-এর পূর্ব্বশর্ত রূপে উক্ত দাবী অন্তর্ভূক্ত করিতে রাজী নহেন বলিয়া সংশ্লিষ্ট সূত্র হইতে জানা যায়।
গতকাল সকাল সাড়ে দশটা হইতে বারটা পর্য্যন্ত দেড় ঘণ্টাব্যাপী ডাক- বৈঠকে প্রধানতঃ শেখ মুজিবের মুক্তি সংক্রান্ত তথা আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের প্রশ্নে ও অন্যান্য দলের বক্তব্যের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জনাব নূরুল আমীনের বাসগৃহে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় আহ্বায়ক নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান সভাপতিত্ব করেন।
প্রকাশ, গতকল্যকার বৈঠকেও আওয়ামী লীগ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবী পুর্ব্বশর্তের অন্তর্ভুক্ত করিবার জন্য পূর্ব্বের ন্যায় দৃঢ় রহিয়াছে। উক্ত দাবী পুরণ না হইলে আওয়ামী লীগ গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করিবে না বলিয়া মত প্রকাশ করিলে গোলটেবিল বৈঠকে ডাক-এর যোগদানের প্রশ্নে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। শেষ পৰ্য্যন্ত গোলটেবিল সম্মেলনে যোগদানের প্রশ্নে ডাক কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করিয়াই পনের তারিখ পর্য্যন্ত বৈঠক মুলতবী রাখে।
গতকাল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ঢাকা ত্যাগের পূর্ব্বে বিমান বন্দরে সাংবাদিকের নিকট ইঙ্গিত করেন যে, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব নহে। এবং বলেন, ইহার সাথে সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক ও দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত রহিয়াছে। তিনি লাহোরে পৌঁছিয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিবের মুক্তির দাবী প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন বলিয়া রিপোর্ট পাওয়া গিয়াছে|
এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ যদি আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবী পূর্ব্বশর্ত্তের অন্তর্ভুক্ত করিবার জন্য চাপ সৃষ্টি বন্ধ না করে, তবে ডাক-এর পক্ষে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করার সম্ভাবনা সম্পর্কে রাজনৈতিক মহল সন্দেহ প্রকাশ করিতেছেন।
অনেকে মনে করেন যে, লাহোরে অনুষ্ঠিতব্য ডাক সম্মেলন গোল টেবিল বৈঠকে যোগদানের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করিতে পারে কিন্তু আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবীর প্রশ্নটি কি ভাবে মীমাংসা করা হইবে তাহা এখনও বলা সম্ভব হইতেছেনা, তদুপরি প্রগ্রেসিব পেপার লিমিটেডের পাকিস্তান টাইমস ও অন্যান্য পত্রিকা পূর্ব্ব মালিকের হাতে ফেরত দেওয়ার প্রশ্নটি ঢাকায় আলোচিত না হইলেও লাহোর বৈঠকে আলোচনা করিতে হইবে। এবং প্রশ্নটিও পূর্ব্বশর্তের অন্তর্ভূক্ত করার দাবী দেখা দিবে।
‘ডাক’ এর মুখপাত্র জনাব মাহমুদ আলী গতকাল বৈঠকের পর সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের দাবী সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি গোলটেবেল বৈঠকে শেখ মুজিবের উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করেন। তবে বৈঠকে আওয়ামী লীগের দাবী বিবেচনা করা হইয়াছিল কি না জিজ্ঞাস করা হইলে তিনি কোন মন্তব্য করিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।
সঙ্কট দেখা দেওয়ার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল মনে করেন যে, নবাবজাদা নসরুল্লাহ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার দাবী সম্পর্কে প্রেসিডেন্টকে রাজী করাইতে যে প্রচেষ্টা চালাইয়াছিলেন তাহা ব্যর্থ হইয়াছে।
নবাবজাদা ও পরে জনাব মাহমুদ আলী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান যে, গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের পূর্ব্বে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টের নিকট হইতে “আরও ব্যাখ্যা” গ্রহণের জন্য লাহোরে বৈঠকের স্থান পরিবর্তন করা হইয়াছে এবং আগামী ১৫ই ফেবরুয়ারী লাহোরে বৈঠক হইবে। এই ব্যবস্থার ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটক ন্যাপ সভাপতি ওয়ালী খানের সহিত ডাক নেতৃবর্গ বৈঠকের প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা করিবার সুযোগ পাইবেন।
ডাক বৈঠকে আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবী সম্পর্কে আলোচনা হইয়াছে বলিয়া নবাবজাদা স্বীকার করেন। শেখ মুজিবরকে মুক্ত করা হইবে কিনা প্রশ্ন করা হইলে তিনি বলেন যে, কে ভবিষ্যদ্বাণী করিতে পারে?
তিন দিনব্যাপী বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের দাবীর প্রেক্ষিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হইলেও গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের প্রশ্নে নবাবজাদা আশাবাদী। তিনি মনে করেন যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ইতিপূর্ব্বে উল্লেখিত পূর্ব্বশর্তসমূহ পূরণের জন্য চেষ্টা করিতেছেন।
অচলাবস্থা এড়াইবার শেষ পন্থা একদিকে যেমন নওয়াবজাদা এখন গ্রহণ করেন নাই, ঠিক তেমনই প্রেসিডেন্ট তাহার শেষ বক্তব্যও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটিকে জানাইয়া দেন নাই বলিয়া রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!