রণাঙ্গনে সকল ফ্রন্টে মুক্তি বাহিনীর দুর্বার অগ্রগতি
ময়মনসিংহে আরাে ২৪ জন খানসেনা খতম। গত ৬ই নভেম্বর জামালপুরের মিলনদহ-মাহমুদপুর এলাকায় এক সংঘর্ষের পর মুক্তি বাহিনীর হাতে ১২ জন বেঈমান হানাদার সৈন্য প্রাণ হারায় এবং ৪ জন সৈন্য গুরুতররূপে আহত হয়। এই সংঘর্ষের সময় একজন তরুণ মুক্তিযােদ্ধার অসম সাহস ও শৌর্যবীর্যের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন। এর আগে গত ২৭শে অক্টোবর অত্র জেলার মুক্তিবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে আরাে ৭ জন দস্যু সৈন্য প্রাণ হারায়। গত ২৪শে অক্টোবর অত্র জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানায় শত্রু সৈন্যের ওপর মুক্তিবাহিনী এক সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে নিহত করেন এবং ১০ জনকে গুরুতররূপে আহত করেন। রংপুরে ৮ জন রাজাকার আটক গত ৬ই নভেম্বর রংপুরের করণাই অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী এক সফল আক্রমণ চালিয়ে ৫টি রাইফেল সহ ৮ জন রাজাকারকে বন্দী করেন। দিনাজপুরে ব্যাপক তৎপরতা গত ৭ই নভেম্বর দিনাজপুরের গােসাইগঞ্জ হাটে গেরিলাযােদ্ধাদের হাতে ১ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত এবং ৩ জন গুরুতররূপে আহত হন। এ মাসের গােড়ার দিকে মুক্তিযােদ্ধারা কালীগঞ্জ-ভােটমারী এবং হাতবান্দা-ভােটমারী মধ্যে লাইন বিনষ্ট করে হানাদার সৈন্যদের রেল যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। মেহেরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে মুক্তিবাহিনী তিনদিক থেকে অভিযান চালিয়ে মেহেরপুর শহরসহ আশপাশ এলাকা অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। এছাড়া কুষ্টিয়া জেলার পঁচিশ বর্গমাইল এখন মুক্তাঞ্চল।
মুক্তিযােদ্ধারা বামনদির্ঘাটিতে খানসেনাদের ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে তাদের খুলিশাকুন্ডি পর্যন্ত তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। মেহেরপুরে অবস্থিত পাকিস্তানী সৈন্যদল আটকে পড়েছে এবং মূল ঘাটি মীরপুর থেকে তারা এখন সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গানগানি থানার উত্তর-পশ্চিম থেকে মাথাভাঙ্গা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া তারা ভৈরব নদীর পশ্চিম থেকে দর্শনা-মেহেরপুর রােডের উত্তর পর্যন্তও দখল করে নিয়েছেন। ঢাকায় ৪ জন নিহত বিবিসির এক খবরে প্রকাশ, গত ১৪ই নভেম্বর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে মুক্তিবাহিনীর দুর্ধর্ষ গেরিলাযােদ্ধাদের সাথে সারা দিন ব্যাপী বিক্ষিপ্তভাবে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে একজন পুলিশসহ ৪ জন গুলীতে নিহত হয়। বীর মুক্তিযােদ্ধারা ঢাকা শহরে কয়েকটি শত্রু অবস্থানের উপর বােমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হানাদার সৈন্যদেরকে বিব্রত করে তােলেন। চট্টগ্রামে আরও সৈন্য বুলেট বিদ্ধ বিবিসি আরাে জানাচ্ছেন যে, বাঙালী গেরিলাযােদ্ধাদের আক্রমণে চট্টগ্রামে মুমূর্ষ অবস্থায় আরাে ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাহজাদপুরে ব্যাপক তৎপরতা গত ১০ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর অসম সাহসী বীর যােদ্ধারা চোরাগােপ্তা আক্রমণ চালিয়ে খানসেনা ও রাজাকারদের ব্যাপকভাবে ঘায়েল করেন। এছাড়া গেরিলাযােদ্ধারা কাজলদীঘিতে আক্রমণ চালিয়ে ১২ জন শত্রু সৈন্যকে খতম করেন। গত ৯ই নভেম্বর রংপুর জেলার বাগেশ্বরী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে প্রায় ২০জন পাকিস্তানী। সৈন্য খতম হয় । বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড সংঘর্ষ আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন নােয়াখালীর ফেণী, পরশুরাম, সুধারাম এবং কুমিল্লার ফতেক এলাকায় প্রচণ্ড সংঘর্ষে হানাদার সৈন্যরা দারুণভাবে মার খায়।
কুমিল্লা শহরে মর্টার আক্রমণ। আমাদের রণাঙ্গন প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, গত ২৬শে অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর বীর গেরিলাযােদ্ধারা কুমিল্লার কোতােয়ালী থানায় দখলদার সৈন্যদের ঘাঁটির উপর মর্টার আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন সৈন্যকে খতম এবং ১৩ জনকে গুরুতররূপে আহত করেন। গেরিলাযােদ্ধাদের অপর একটি দুঃসাহসিক দল নােয়াখালীর পরশুরামের নিকট শত্রু অবস্থানের ওপর মর্টার আক্রমণ চালিয়ে ৭ জন দখলদার সৈন্যকে নিশ্চিহ্ন এবং ৯ জনকে গুরুতররূপে আহত করেন। এছাড়া শত্রুর একটি বাঙ্কার ধ্বংস করে দেন। সালদানদীতে ৩৯ জন শত্রু সৈন্য খতম পূর্ব রণাঙ্গন থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন যে, গত ১২ই নভেম্বর বাংলার দুঃসাহসিক গেরিলাযােদ্ধারা কুমিল্লার লক্ষ্মীপুর, মন্দাভাগ ও কাইয়ুমপুরে শক্ত অবস্থানের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন হানাদারকে খতম করেন।
জয়বাংলা (১) ০১:
২৯ ও ২৬ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯