You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.26 | মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে আরাে ৩টি বিদেশী জাহাজ ঘায়েল - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে আরাে ৩টি বিদেশী জাহাজ ঘায়েল

সম্প্রতি ১টি গ্রীক জাহাজ সহ মুক্তিবাহিনীর দুর্জয় নৌসেনাদের আক্রমণে গত ৪ঠা থেকে ২১ই নবেম্বরের মধ্যে আরাে ৩টি বিদেশী জাহাজ ঘায়েল হয়েছে। এর মধ্যে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরবরাহকারী জাহাজ রয়েছে। মুক্তিবাহিনীর নৌ যােদ্ধারা এই জাহাজটিকে গত ৪ঠা নবেম্বর একটি মাইনের সাহায্যে বিধ্বস্ত করেছে। মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থার কর্মচারীরা এই সংবাদ স্বীকার করেছেন। তারা একথাও বলেছেন যে, জাহাজটিতে জাতিসংঘের পতাকা উড়ছিল। মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার অভ্যন্তরের যােগাযােগ ব্যবস্থা এবং নৌযান ধ্বংস করে দেবার ফলে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরে বিদেশ থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ সরবরাহ দ্রব্যাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্বয়ং মার্কিণ বৈদেশিক সাহায্য সংস্থার জনৈক প্রতিনিধি উপরােক্ত তথ্য প্রকাশ করে। বলেছেন, না পারার ফলে বহু জাহাজ আটকা পড়ে গেছে এবং পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষকে দৈনিক ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ডেমারেজ দিতে হচ্ছে। | প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের দুস্থ মানুষদের নাম করে বিদেশ থেকে আনা সাহায্য-সামগ্রী পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী আত্মস্মাৎ করে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বিরুদ্ধে এবং বাঙ্গালীদের নিধন করার কাজে ব্যবহার করছে। | প্রমাণ স্বরূপ, পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে এই ধরণের যে সমস্ত বৈদেশিক ও জাতিসংঘের সাহায্য সামগ্রী আমাদের মুক্তিবাহিনী দখল করেছিল ইতিপূর্বে তার ছবিও পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। অপর জাহাজটি একটি বৃটিশ মালবাহী জাহজ।

জাহাজটি চালনা বন্দরের অদূরে সমুদ্রের বুকে মুক্তিবাহিনীর নৌ যােদ্ধাদের গােলার ঘায়ে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় কলকাতায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জাহাজটির নাম সিটি অব সেন্ট এলবা। জাহাজটি চালনা বন্দর থেকে বাংলাদেশের পাট বােঝাই করে নিয়ে যেতে এসেছিল। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর নৌ সেনাদের আক্রমণে বন্দরে ভিড়তে পারাতাে দূরের কথা, গােলার ঘায়ে বিক্ষত অবস্থায় পালাতে পথ পায়নি। জাহাজটি পাের্ট এবং ষ্টারবাের্ড উভয় দিকেই গােলার ঘায়ে বিরাট বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে । জাহাজটি এখন মেরামতের জন্যে কলকাতার কয়লা ডাক নােঙর করে আছে।  গত ১০ই নবেম্বর সকালে কলকাতা কিং জর্জ ডক থেকে জাহাজটি চালনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। কিন্তু ১১ই নবেম্বর চালনা বন্দরের কয়েক মাইল দূরে সমুদ্রের বুকে থাকতেই মুক্তি বাহিনীর নৌযান কর্তৃক আক্রান্ত হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের জাহাজ থেকে এমন অবিরল ধারায় গােলা ও মেশিনগানের গুলী বর্ষিত হতে থাকে যে, কারাে পক্ষে বাইরে বেরিয়ে আক্রমণকারীদের লক্ষ্য করাও সম্ভব হয়নি।  ক্যাপ্টেনের আদেশে জাহাজটির মুখ পুনরায় দ্রুত কলকাতার দিকে ঘুরিয়ে নেয়া হয় কিন্তু তার মধ্যে আরও কয়েকটি গােলা ষ্টার বাের্ডের দিকে এসে পড়ে। মুক্তিবাহিনীর জাহাজ এর পরও প্রায় ৪৫ মিনিট যাবৎ সিটি অব সেন্ট এলবানসের পশ্চাদধাবন করে। জাহাজের নাবিকরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করায় কেউ আহত হয়নি, শুধু একজন নাবিকের দেহের কয়েক জায়গা সামান্য ছিড়ে যায়। | প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য নৌযুদ্ধে গেরিলাবাহিনীর তৎপরতা শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের ১৭টি জাহাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনী ডুবিয়ে দিয়েছে।

জয়বাংলা (১) [১: ২৯]

২৬ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯