You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঢাকা বিচ্ছিন্ন মৃত পাকিস্তানে জরুরী অবস্থা বিমান ভূপাতিত ও ট্যাঙ্ক ধ্বংস ও এলাকার পর এলাকা মুক্তি

(রণাঙ্গন প্রতিনিধি প্রেরিত)। মুক্তিবাহিনী সকল রণাঙ্গনে দুর্বার বেগে এগিয়ে চলেছে। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইন্সের সকল আভ্যন্তরিণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং মুন্সিগঞ্জ থানা সহ প্রায় তিনটি থানায় স্বাধীনতা  পতাকা উড্ডীন হয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ মুক্তিবাহিনীর মৃত্যুঞ্জয়ী গেরিলাযােদ্ধারা সমগ্র বাংলাদেশে শত্রু সৈন্যের ওপর উপর্যুপরি প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। মুক্তি বাহিনীর অসম সাহসী যােদ্ধারা যশাের, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, চাটগাঁ, নােয়াখালী, কুমিল্লা প্রভৃতি রণাঙ্গনে খান সেনাদের ওপর তীব্র থেকে তীব্রতর আঘাত হেনে চলেছে। আমাদের তরুণরা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা রেখে গত ২১শে নভেম্বর যশাের ক্যান্টনমেন্টের হানাদার। সৈন্যের ওপর সামনা সামনি চালিয়ে আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেন। মুক্তিবাহিনীর অপূর্ব রণনৈপূণ্য ও সাহসিকতাপূর্ণ আক্রমণে যশােরে পাকিস্তানী সৈন্যদের ৪টি মাঝারী ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়। একটি পাকিস্তানী বােমারু বিমান হানাদার পদাতিক বাহিনীকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে সেই মােক্ষম মুহূর্তে গেরিলা যােদ্ধাদের বিমান বিধ্বংসী কামানের অব্যর্থ গােলায় পাকিস্তানী বােমারু বিমানটি। ভূপাতিত হয়। এর আগে মুক্তিবাহিনী কক্সবাজার ও নােয়াখালির পরশুরামে ২টি হানাদার বিমান। ভূপতিত করেন। এছাড়া মেঘনা নদীতে ৩টি জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর প্রচন্ড চাপে দক্ষিণে খুলনা-যশাের থেকে উত্তরে রংপুর-সিলেটে পাকিস্তানী সৈন্যদের। দখলীকৃত ১০টি শক্তিশালী ঘাটি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর তীব্র অভিযানের চাপে খুলনা রণাঙ্গনের সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ ভােমরা ও কলারােয়া; রংপুরের জগদ্দল, অমরখানা, বড়কাটা, হাতীবান্ধা ও রায়গঞ্জ, যশােরের চৌগাছা এবং সিলেটের জাকীগঞ্জ ও সাতগ্রাম এলাকা সম্পূর্ণভাবে আমাদের করায়ত্ত হয়েছে।

সিলেটে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে শত্রুরা এখন শহরভিমুখে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে কুষ্টিয়া জেলায় মুক্তিবাহিনীর দুর্জয় অভিযানের মুখে বিপর্যস্ত পাকিস্তানী সৈন্যরা আরও পশ্চাদভাগে ছুটে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া জেলা ও যশােরের সীমান্তবর্তী সহস্রাধিক বর্গমাইল এলাকা সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত করেছেন। ঢাকা বেতারের স্বীকৃতি দখলীকৃত ঢাকা বেতার থেকে গত ২২শে নভেম্বর রাত ১১ঃ২০ মিনিটের বুলেটিনে এই সংঘর্ষের বিকৃত। খবর পরিবেশন করা হয়। এই সংঘর্ষে প্রতিপক্ষ কিঞ্চিৎ সাফল্য অর্জন করে।’ কুমিল্লায় ব্যাপক আক্রমণ মুক্তিবাহিনীর দুদ্ধর্ষ বীর যােদ্ধারা পূর্ব রণাঙ্গনের কুমিল্লাতেও সফল অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। কুমিল্লার হাজিগঞ্জ থানা, ফরিদগঞ্জ, রামাহানপুর, সাহাপুর অঞ্চলে দখলদার সৈন্যদের ওপর চোরাগােপ্তা আক্রমণ করে পিছু হটিয়ে দিয়েছেন। মুক্তিবাহিনী এদিকে খুলনা জেলার বসন্তপুর দখল করেছেন এবং সাতক্ষীরার দিকে এগিয়ে চলার অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। রাজশাহীতে তৎপরতা রাজশাহী জেলার মিরাজগঞ্জ এবং রামপুরার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও এখন মুক্তিবাহিনীর দখলে। ২১জন সৈন্য বন্দী। কুমিল্লার রণাঙ্গনে আখাউড়া রণাঙ্গনের মুকুন্দপুর রেল স্টেশন ও প্রায় ৮ বর্গমাইল এলাকা মুক্তিবাহিনী।  পাকিস্তানী সৈন্যের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। এ রণাঙ্গনে ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য ৮ জন রাজাকার ও ৮জন পাকিস্তানী রেঞ্জার মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দী হয়।

জয়বাংলা (১) : ১: ২৯

২৬ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!