৬-দফার আন্দোলন স্তব্ধ করা যাইবে না
৬-দফার ভিত্তিতে আপামর দেশবাসীর প্রাণের দাবী-দাওয়া আদায়ের যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হইয়াছে, উহাকে স্তব্ধ করিয়া দিবার জন্য জেলজুলুম, গ্রেফতারী ও নির্যাতন-নিগ্রহের প্রতিবাদে গােটা প্রদেশ বিক্ষোভমুখর হইয়া উঠিয়াছে। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ ও বিরােধী দলীয় রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের গ্রেফতারের নিন্দা জ্ঞাপন এবং অবিলম্বে তাহাদিগের মুক্তির দাবীতে গত শুক্রবার সমগ্র প্রদেশে প্রতিবাদ দিবস পালন করা হয়। এইদিন ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত প্রদেশেও জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে অযুতকণ্ঠে অবিলম্বে ধৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবী ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়। দেশের প্রতিটি স্তরের প্রতিটি মানুষ এইদিন সভা ও শােভাযাত্রায় শরীক হইয়া যে শপথ ঘােষণা করে তাহা হইলঃ “সর্বজন স্বীকৃত ও অভিনন্দিত ৬-দফা আদায়ের নিয়মতান্ত্রিক আন্দালনকে কিছুতেই স্তব্ধ করা যাইবে না। যে-কোন ত্যাগের বিনিময়েও বঞ্চিত দেশবাসীর এ আন্দোলন চলিতে থাকিবে। এ আন্দোলনের শেষ হইবে ৬-দফার পূর্ণ বাস্তাবায়নের পর।”
খুলনা
(বিশেষ প্রতিনিধি) খুলনা, ১৩ই মে—পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান, জনাব তাজুদ্দিন আহমদ, খােন্দকার মােশতাক আহমদ, জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী, জনাব মুজিবর রহমান এবং আবদুল আজিজের গ্রেফতারের প্রতিবাদে অদ্য অপরাহ্নে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে খুলনা পৌরময়দানে একটি নজিরবিহীন বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ইহাতে সভাপতিত্ব করেন শহর আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট জনাব মমিনুদ্দীন আহমদ।
এই উপলক্ষে খুলনা পৌর ময়দানটি একটি বিরাট জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সারা মাঠে কোথাও তিলধারণের স্থান ছিল না। এমনকি পার্শ্ববর্তী রাস্তাসমূহ এবং দালানকোঠার ছাদেও শ্রোতৃবৃন্দ অভূতর্ব ভিড় জমায়। এই জনসভা দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর্যন্ত চলে।
জনসভার পর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ একটি বিরাট মিছিল বাহির করে। উহাতে হাজার হাজার লােক যােগদান করেন। মিছিলকারীরা শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে এবং শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের দাবী করিয়া বিভিন্ন ধ্বনি দেন। জনসভার সভাপতি জনাব মমিনুদ্দীন এই ঐতিহাসিক প্রতিবাদ সভায় অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভাষায় বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন যে, জুলুম, অত্যাচার, ধরপাকড়, এমনকি গােলাগুলীও আমাদের ছয়-দফা দাবী আদায়ের সংকল্প হইতে বিচ্যুত করিতে পারিবে না। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতার করিয়া আমাদের সংগ্রামকে আরও জোরদার করা হইয়াছে। এবং জনসাধারণকে সচেতন করিয়া তােলা হইয়াছে, ঢাকার পল্টন ময়দানে জনসভা, খুলনা-চট্টল, রাজশাহীর জনসভাই উহার প্রকৃষ্ট নজির। উপস্থিত হাজার হাজার শ্রোতার তুমুল করতালির মধ্যে তিনি জনগণকে প্রচন্ড গন-আন্দোলনে। ঝাঁপাইয়া পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
ছয়-দফা দাবীকে সকল প্রকার অবিচারের প্রতিষেধক বলিয়া উল্লেখ করিয়া খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী এডভােকেট মনসুর আলী বলেন যে, দেশের স্বাভাবিক অবস্থায় দেশরক্ষা আইনবলে শেখ মুজিবসহ কয়েকজন শীর্ষস্তানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করিয়া সরকার ন্যায়নীতি বিরুদ্ধ কাজ করিয়াছেন এবং এই আইনের পবিত্রতা নষ্ট করিয়াছেন।
এই জনসভায় জনাব মােহাম্মদ আলী, সালাউদ্দীন ইউসুফ, আলী তারেক, এ, ফিরােজ নূনসহ কয়েকজন স্থানীয় নেতা ও কর্মীও বক্তৃতা করেন। সভাশেষে গৃহীত প্রস্তাবে অবিলম্বে শেখ মুজিবসহ অন্যান্য নেতার মুক্তি, জরুরী আইন ও দেশরক্ষা আইন বাতিলের দাবী এবং ৬-দফার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাইয়া কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় গৃহীত অন্যান্য প্রস্তাবে প্রদেশব্যাপী পূর্ণাঙ্গ রেশনিং প্রবর্তন, টেন্ডুপাতা অর্ডিন্যান্স বাতিল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আলী আহমদের মুক্তি দাবী করা হয়। আর একটি প্রস্তাবে পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনে সংবাদপত্রের অনুমােদন বাতিলের জন্য ক্ষমতা গ্রহণ প্রচেষ্টার নিন্দা করা হয়।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ, ১৩ই মে—আজ এখানে বিপিন পার্কে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান, তাজুদ্দিন আহমদ, খােন্দকার মােশতাক আহমদ প্রমুখের গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। ইহাতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জনাব রফিকুদ্দীন ভুইয়া এবং অন্যান্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বক্তৃতা করেন। সভায় দেশের উত্তরাঞ্চলে দেশরক্ষা আইনে শেখ মুজিবসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতারের কঠোর প্রতিবাদ জানানাে হয় এবং তাঁহাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবী করা হয়। সভায় ছয়-দফা দাবীর প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের পুনরাবৃত্তি করিয়া শান্তিপূর্ণভাবে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালাইয়া যাওয়ার সংকল্প প্রকাশ করা হয়। সভায় অবিলম্বে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের দাবী করা হয়। প্রদেশের খাদ্য সঙ্কট ও নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এই অবস্থার মােকাবিলা করার জন্য সরকারের প্রতি প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব কার্যকরী করার আহ্বান জানানাে হয়।
সভার অপর এক প্রস্তাবে টেন্ডুপাতা অর্ডিন্যান্স বাতিল করিয়া অবিলম্বে ৭ লক্ষ বেকার বিড়িশ্রমিকের কর্মসংস্থানের আহ্বান জানানাে হয়। সভা শেষে জনতা আওয়ামী নেতাদের মুক্তি দাবী করিয়া এবং ছয়-দফার প্রতি সমর্থনের পুনারবৃত্তি করিয়া ধ্বনি তােলে।
রাজশাহী
রাজশাহী, ১৩ই মে—আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়রানির প্রতিবাদে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আহূত জনসভায় বক্তৃতাকালে জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব কামরুজ্জামান ঘােষণা করেন যে, কোন প্রকার অত্যাচারই পাকিস্ত নের জনগণকে ছয়-দফা দাবী আদায়ে নিরস্ত করিতে পারিবে না। ছয়-দফা দাবীকে তিনি নির্যাতিত জনগণের “মুক্তি সসদ” বলিয়া অ্যাখ্যায়িত করিয়া বলেন যে, ইহা গণমনে তৃরিত প্রভাব বিস্তার করিয়াছে। তিনি বলেন যে, ছয়-দফার বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের কিছু বলার থাকিলে জনসভায় হাজির হইয়া তাহা ব্যাখ্যা করা উচিত। কারণ, জনগণই রাজনৈতিক সমস্যার সর্বোত্তম নিয়ামক।
সভায় শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর আশু মুক্তি এবং দেশরক্ষা আইন ও জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের দাবী করা হয়। সভায় ১০ লক্ষ বিড়িশ্রমিকের অবিলম্বে কর্মসংস্থানের জন্য টেন্ডুপাতা অর্ডিন্যান্স বাতিলের আহ্বান জানানাে হয়। এই জনসভায় বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জনাব গােলাম রাব্বানী এবং আরও কয়েক ব্যক্তি।
বরিশাল
বরিশাল, ১২ই মে—অদ্য এখানে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবর রহমানসহ অন্যান্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ নেতার এই জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁহারা আটক থাকায় এই জনসভায় শরীক হইতে পারেন নাই। ফলে এই সভা প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয় এবং আটক নেতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য প্রেসিডেন্টের চেয়ার খালি রাখা হয়।
সভায় জনাব রফিকুদ্দীন আহমদ, জন্নাব আবদুল বারেক (সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য), জনাব আমিনুল ইসলাম চৌধুরী (সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য), জনাব নুরুল ইসলাম, জনাব লকিতুল্লাহ প্রমুখ স্থানীয় নেতা বক্তৃতা করেন। তাঁহারা সকলেই ছয়-দফা কর্মসূচী ব্যাখ্যা করেন এবং শেখ মুজিবসহ অন্যান্য আওয়ামী নেতার গ্রেফতার ও হয়রানির নিন্দা করেন। জনাব রফিকুদ্দীন আহমদ বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, ১০ কোটি মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ও আইনের অপপ্রয়ােগ বন্ধের জন্য আওয়ামী লীগ আন্দোলন করিতেছে। শাসকচক্র রাজনৈতিক স্বার্থে প্রশাসন যন্ত্র ব্যবহার করিতেছে। তিনি বিগত বৎসরসমূহের ইতিহাস হইতে শিক্ষাগ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জনান।
তিনি আওয়ামী লীগের ছয়-দফা কর্মসূচী ব্যাখ্যা করিয়া বলেন যে, আমাদের সমস্যা সমাধানের ইহাই একমাত্র পথ এবং সরকারের কোন প্রকার জুলুমই ১০ কোটি মানুষের এই প্রাণের দাবীকে দাবাইয়া রাখিতে পারিবে না।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব নুরুল ইসলাম ছয়-দফা কর্মসূচীর বিস্তারিত ব্যাখ্যাদান করেন এবং এই সমস্ত দাবী-দাওয়া আদায়ের জন্য শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি শেখ মুজিবসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার হয়রানির সমালােচনা করিয়া বলেন যে, ইহাতেই প্রমাণিত হয় যে, ছয়-দফা হইতেছে ১০ কোটি মানুষের প্রাণের দাবী। জনাব মঈনুল হক চৌধুরী বলেন যে, ছয়-দফা হইতেছে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির প্রতীক। জনাব আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন যে, ছয়-দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নের মধ্যে দেশ আরও শক্তিশালী হইবে। তিনি এই প্রশ্নে দেশে গণভােটে অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন।
প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব আজহার উদ্দিন আহমদ বলেন যে, সরকার ছয়-দফার সমর্থকদের পাইকারী-হারে গ্রেফতারের ক্ষেত্র প্রস্তুত করিতেছেন। কিন্তু ছয়-দফা হইতেছে জনগণেরই দাবী-দাওয়া। তাই জনগনকে ইহা বাস্তবায়নের জন্য আগাইয়া আসিতে হইবে।
জনাব লকিতুল্লাহ বলেন যে, যুদ্ধের সময়ই দেখা গিয়াছে যে, শক্তিশালী কেন্দ্র বা তথাকথিত শক্তিশালী ব্যক্তিরা কার্যতঃ অপপ্রয়ােজনীয় বা শক্তিহীন।
সভাশেষে শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করিয়া প্রস্তাব গ্রহণ। করা হয়। সভাশেষে জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিলও বাহির করে।
বগুড়া
‘প্রতিবাদ দিবস’ উপলক্ষে গত শুক্রবার বগুড়া এডওয়ার্ড পার্কে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব বি, এম ইলিয়াসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব হাবিবুর রহমান ও জনাব হাফিজুদ্দীন প্রমুখ।
সভায় অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি, জরুরী আইন প্রত্যাহার, টেন্ডুপাতা অর্ডিন্যান্স বাতিল ও প্রদেশব্যাপী পূর্ণ রেশনিং চালু করার দাবী জানানাে হয়।
লালমনিরহাট
জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে গত শুক্রবার লালমনিরহাটে প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়।রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভােকেট নুরুল হক, জনাব আবুল হােসেন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম জে, এম, সেন হলে অনুষ্ঠিত এক সভার মাধ্যমে গত শুক্রবার চট্টগ্রামের জনসাধারণ প্রতিবাদ দিবস পালন করেন। শহরে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও অন্যান্য কার্যসূচীর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নাই। চট্টগাম জেলা। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডঃ সৈয়দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় অবিলম্বে শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করা হয়। ডঃ আনােয়ার হােসেন চৌধুরী, জনাব রহমতুল্লাহ চৌধুরী, জনাব এম, এ মান্নান, মালিক চৌধুরী প্রমুখ সভায় বক্তৃতা করেন। পটিয়া থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পটিয়াতে ব্যাপক গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিবাদ দিবস পালিত হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। পটিয়ার জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব বদিউল আলম।
সিলেট
“প্রতিবাদ দিবস” উপলক্ষে গত শুক্রবার সিলেট রেজিষ্ট্রার ময়দানে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আবদুল হাই-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য জনাব জালাল উদ্দীন আহমদসহ কতিপয় নেতা বক্তৃতা করেন। এখানে উল্লেখযােগ্য যে, আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতারের পর হইতে এখানে প্রত্যহ বিক্ষোভ প্রদর্শন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হইতেছে।
কুমিল্লা
প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার কুমিল্লা টাউন হল ময়দানে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন বক্তা ৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য যে-কোন ত্যাগ স্বীকারের সঙ্কল্প ঘােষণা করেন।
কুমিল্লা টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভােকেট দলিলুর রহমান।
টাঙ্গাইলে প্রতিবাদ দিবস পালনের আয়ােজন করা হইলেও শেষ পর্যন্ত মাইক ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় কার্যসূচী বাতিল করিতে হয় বলিয়া জানা গিয়াছে।
কিশােরগঞ্জ
(টেলিফোনযােগে প্রাপ্ত) শেখ মুজিবর রহমান এবং অন্যান্য নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত শুক্রবার স্থানীয় রথখােলা ময়দানে অনুষ্ঠিত বিরাট জনসভায় জলদগম্ভীর স্বরে প্রত্যেকটি বক্তা সরকারী নির্যাতনমূলক নীতির কঠোর সমালােচনা করিয়া এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন যে, যদি সরকার গ্রেফতার করিয়া সন্তুষ্ট হইতে চান, তবে সরকারী কারাগার ভর্তি করিয়া তুলিবার জন্য এই দেশের নির্যাতিত হাজার হাজার লােক প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে। সভায় আওয়ামী লীগ, নেজামে ইসলাম এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দ দৃপ্তস্বরে ঘােষণা করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য দাবীর সংগ্রামে এদেশের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া অগ্রসর হইবে। কিশােরগঞ্জের স্মরণাতীতকালের এই বৃহত্তম জনসভায় ৬-দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং নেতৃবৃন্দের বিনাশর্তে আশু মুক্তি দাবী করা হয়।
চৌমুহনী
নােয়াখালী, ১৩ই মে—আজ এখানে ৬-দফার প্রণেতা শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে চৌমুহনীতে একবিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন থানা আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব মােহাম্মদ আক্কাস। নােয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব নুরুল হক এম. পি. এ মহকুমা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব সাখাওয়াত উল্লাহ (উকিল), চৌমুহনী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জনাব আলী আক্কাস সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমানাের জন্য প্রতিরক্ষাবিধি ব্যবহারের তীব্র নিন্দা করিয়া বক্তৃতা করেন। সভায় ৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করা হয়।
সভায় শেখ মুজিব ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও ৬-দফা দাবী মানিয়া লওয়ার জন্য জোর দাবী জানাইয়া কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থার দাবী ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির দাবী জানানাে হয়।
সভাশেষে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থার দাবীসহ বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে শহর প্রদক্ষিণ করে।-সংবাদদাতা
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ, ১৩ই মে—আজ প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষে স্থানীয় কলেজ ময়দানে এক বিরাট জনসভা হয়। সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব মােতাহার হােসেন।
শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদ জ্ঞাপনের জন্য আহূত উক্ত সভায় বক্তৃতা করেন মেসার্স দবির উদ্দিন আহমদ, আবদুর রউফ খান, আবদুল মমিন তালুকদার ও ডঃ জসিমউদ্দীন। সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে দেশরক্ষা বিধির অপব্যবহারের তীব্র নিন্দা করিয়া ৬-দফার প্রণেতা শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাসহ সকল রাজবন্দীর আশু মুক্তি দাবী করা হয়।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে দেশে তীব্র সঙ্কট দেখা দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া পূর্ণ রেশনিং প্রথা প্রবর্তন, নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের গগনচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি রােধের কার্যকরী ব্যবস্থা, বিড়ি পাতা অর্ডিন্যান্স বাতিল করিয়া উক্ত পাতা আমদানী করিয়া দেশের বিড়ি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান করার দাবী জানানাে হয়। সভায় অবিলম্বে জরুরী অবস্থার প্রত্যাহার দাবী করা হয়। সভায় ৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারের সংকল্প গ্রহণ করা হয়।-সংবাদদাতা
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ মে ১৯৬৬