You dont have javascript enabled! Please enable it!

উপজাতীয়দের প্রাণে প্রাণে জাগরণের ছোঁয়া ঃ চট্টগ্রামের অরন্যানী

পাহারা দিচ্ছেন দুর্ধর্ষ ধনুর্ধর টিপরা বাহিনী।

দক্ষিণ পূর্ব রণাঙ্গণ থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি কর্তৃক প্রেরিত) বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব রণাঙ্গনে বীর মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রচণ্ড মার খেয়ে ভীত সশস্ত্র পাক-হানাদার বাহিনী তাদের ঘাটি ছেড়ে শুধুই পিছু হঠার চেষ্টা করছে। মুক্তিবাহিনীর দামাল ছেলেরা শত্রুকে খেদিয়ে দিয়ে একের পর এক মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলছেন আর সেখানে অতন্ত্র প্রহরীর মতাে তীর ধনুক হাতে প্রহরা দিচ্ছেন পার্বত্য অঞ্চলের মং উপজাতীয় টিপরা। বাহিনী। বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামের বীর সেনানী এই উপজাতীয়দের দীর্ঘ দিন ধরে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল জীবনের প্রতি পদক্ষেপে । শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, এমন কি অর্থনীতিতেও তারা ছিল অনেক পিছিয়ে। কিন্তু কে? আজ তাে আর তারা পিছিয়ে নেই? কোন প্রলােভন, কোন মােহই তাদের আজ সরিয়ে রাখতে পারেনি বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরােভাগ থেকে।

অবশ্য পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকার উপজাতীয়দের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে তাদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টির অনেক অনেক প্রচেষ্টাই করেছিল পাকবাহিনী। আইয়ুবী আমলের লেজুর বৃত্তিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মংশাে গ্রু এবং দাদার সুযােগ্য ভ্রাতা পরিষদ সদস্য আউং শশা প্রু কে লেলিয়ে দিয়ে ছিলাে চাকমাদেরকে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে। কিন্তু না পারেনি। বহু সংখ্যক চাকমা মেয়েকে অপহরণ করে পশ্চিম পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করার পর সদলবলে রুখে দাঁড়ায় চাকমা উপজাতীয়রা। অপর দিকে সংগ্রামের শুরু থেকেই রামগড়ের টিপরাবাহিনী ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে একাত্ম। মং রাজা গত এপ্রিল-মে মাসে শত্রু কবলিত রামগড় ছেড়ে মুক্তাঞ্চলে চলে গেলে তার সুযােগ্য অনুগামী টিপরারা ধনুক হাতে জঙ্গলে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। আড়াল থেকে আক্রমণ চালিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তুলে হানাদার সৈন্যদের। পরে মুক্তিবাহিনীর ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির সাথে তারাও এগুতে থাকে তাদের ধনুক নিয়ে। এক একটি করে নতুন মুক্তাঞ্চল গড়ে ওঠে আর ধনুকধারী টিপকারা সেখানে ঘাঁটি ঘেড়ে বসে। প্রস্তুত হয়ে থাকে পাকসেনাদের পরবর্তী আক্রমণের সম্মুখে প্রবল প্রতিরােধ গড়ে তােলার প্রস্তুতি নিয়ে। দিন যায়, রাত কাটে। উপজাতীয় টিপরাদের সেদিকে মাথা ঘামাবার যাে নেই। অতন্দ্র প্রহরীর মতাে লেগে আছে তারা শত্রু নিধনের কাছে। কোথায় শত্রু, কতজন শত্রু, তাদের অবস্থান প্রভৃতি জানাবার জন্য অহরহ তারা যােগসূত্র রক্ষা করে চলেছেন বাঙ্গালী মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে। পরবর্তী আক্রমণের জন্যে মুক্তিসেনাদের নিয়ে যাচ্ছেন পথ দেখিয়ে।

সাপ্তাহিক বাংলা ১:৬

২৫ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!