You dont have javascript enabled! Please enable it! পাক তাসের ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে | ছাগলনাইয়া মুক্ত | ফেনীর দিকে মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযান - সংগ্রামের নোটবুক

পাক তাসের ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে | ছাগলনাইয়া মুক্ত | ফেনীর দিকে মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযান

(নিজস্ববার্তা পরিবেশক)। যশাের-খুলনা-কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের শতকরা ৮০ ভাগ মুক্ত ও সকল জেলা থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন

কিশােরগঞ্জ শহর অবরুদ্ধ ও ফেনীর কাছে বহু শত্রুসেনা হতাহত ও ধৃত ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার  লাখাে  মানুষের রক্তস্রোত পেরিয়ে আজ আমরা মুক্তির নবদিগন্তে উপনীত হতে চলেছি। হানাদার পাক ‘নাজি’রা পৃথিবীর জাগ্রত বিবেকের ঘৃণা ও আক্রোশ এবং বাংলার মরণজয়ী বীর মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিপাগল জনতার দুর্বল আঘাতে তৃণখণ্ডের মতাে ইতিহাসের অন্ধকার আবর্তে তলিয়ে যাচ্ছে। নদী মেঘলা বাংলার নরােম মাটিতে জল্লাদ ইয়াহিয়ার কসাই বাহিনী লাখ লাখ বাঙ্গালীর তাজা রক্ত দিয়ে রঞ্জিত করে যে শােষণ-সৌধ নির্মাণ করেছিল মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আঘাতে তা আজ তাসের ঘরের মতাে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। রক্তাক্ত বাংলার চারদিক থেকে মুক্তিবাহিনী পাক নরপশুদের অবরুদ্ধ করে ঘায়েল করে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছেন রাজধানী ঢাকার দিকে। তাদের পেছনে হানাদারমুক্ত এলাকাগুলােতে রক্তখচিত বাংলার পতাকা পত্ পত্ করে উড়ছে। মুক্ত স্বদেশের মানুষের মনে বয়ে চলেছে বিজয়ানন্দের হিল্লোল। ফেনীর তিনদিকে মুক্তিবাহিনী। গত তিনদিনে মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে ছাগলনাইয়া থানা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে দুর্বার গতিতে ফেনী শহরের দিকে এগিয়ে গেছেন। ছাগলনাইয়া থানার দক্ষিণাংশে চাঁদগাজী ও মুন্সিরহাটে দু’টি প্রচণ্ড সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী বহু খানসেনা ও রাজাকারকে হতাহত করেছেন। মুক্তিবাহিনীর অব্যর্থ আক্রমণের প্রচণ্ডতায় ভীত সন্ত্রস্ত পাক পশুরা অনবরত পিছু হটতে হটতে এখন ফেনীতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যাবার সময় তারা বহু অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ ফেলে যায়। এখন ফেনী শহর ছাড়া সমগ্র ফেনী মহকুমা কার্যত মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বাংশ মুক্ত পাক হেলিকপ্টার ভূপাতিত

গত কয়েকদিনে মুক্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়ের উত্তর পূর্বাংশ ও তবলছরি এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে বহু খানসেনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে উক্ত এলাকা মুক্ত করেছেন। মীরেশরাইতে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ১০ জন খানসেনাকে হত্যা ও বেশ কয়েকজন খান সেনাকে আহত করেছেন। চট্টগ্রাম শহরে গেরিলা তৎপরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্টান সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে গেছে। রামগড় এলাকায় একটি পাক হেলিকপ্টারকে মুক্তিবাহিনী গুলি করে ভূপাতিত করেন।দিনাজপুরের হিলি এলাকা মুক্ত এ সপ্তাহে দিনাজপুরের অমরখানা, জগদ্দল হাট ও হিলি এলাকা মুক্ত করে মুক্তিবাহিনী অভ্যন্তরভাগে এগিয়ে চলেছেন। এখানে বহু পাক সেনা ও রাজাকার নিহত হয়েছে।

রংপুর জেলার আলােক দীঘি ও আগ্রা পুকুরে ১২ জন খান সেনাকে মুক্তিবাহিনী হত্যা করেছেন। সাতক্ষীরা মহকুমা মুক্ত মুক্তিবাহিনী গত ২২শে নভেম্বর খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমা মুক্ত করেছেন। এখানকার আক্রমণে। বহু খান সেনা নিহত ও আহত হয়। শত্রুদের বহু অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সাতক্ষীরা মুক্ত করার পর মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে খুলনা শহরের দিয়ে চলেছেন। বিলম্বে পাওয়া এক খবরে বলা হয়েছে যে, গত ১৪ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী বাগেরহাটে ৯০ জন ও বাখেরগঞ্জে ৫ জন খান সেনাকে হত্যা করেন। মুক্তিবাহিনী গত ২৩শে নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে পাক পশুদের অনেককে হত্যা করেন। বাকীরা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গেলে কানাইঘাট মুক্ত হয়।  ময়মনসিং জেলার কিশােরগঞ্জ মহকুমার শহর ছাড়া চারিদিক মুক্ত করা হয়। মুক্তিবাহিনী কিশােরগঞ্জ শহরে খান সেনাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।

আমার দেশ ॥১; ১৩

২৫ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯