রণক্ষেত্রে শিবিরে
(অভিযান রণাঙ্গন প্রতিনিধি) ঢাকা, কুমিল্লা, নােয়াখালী ও চট্টগ্রাম রণাঙ্গন নােয়াখালীতে এখন মরণপণ লড়াই চলছে ভাড়াটিয়া দখলদার সেনা ও বাঙলার অসমসাহসী বীর মুক্তিবাহিনীর সাথে। ফুলগাজী, আনন্দপুর ও চাঁদগাজী বাজার এখন মুক্তিফৌজের দখলে। পরশুরাম থানায় উড়ছে স্বাধীন বাংলার তেরঙ্গা পতাকা। কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানা মুক্ত করেছেন মুক্তিবাহিনী খানসেনাদের কবল হতে। ঢাকার সাথে কুমিল্লার নৌ যােগাযােগের প্রধান পথের পাশেই এই চান্দিনা বাজার। সেজন্য মুক্তিবাহিনীর কাছে এই বাজারটির সামরিক গুরুত্ব যথেষ্ট। কুমিল্লা জেলার অন্যান্য কয়েক জায়গা হতেও পাক দস্যুরা বিতাড়িত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে মুখোমুখি এক সংঘর্ষে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এখানে ১৩ জন রাজাকার রাইফেল, গােলাবারুদ নিয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার কমলপুরে জংগী অবস্থানের উপর মর্টার আক্রমণ চালিয়ে ১২ জন শত্রুসৈন্যকে খতম করেছেন। চট্টগ্রাম জেলায় তারা আর একটি সফল আক্রমণ চালিয়ে ৭ জন দখলদার সেনাকে হত্যা করেছেন। বলে খবর এসেছে। কুমিল্লা জেলার চিওড়া অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা তৎপরতার ফলে ২ জন শত্রুসৈন্য খতম ও ৩ জন জখম হয়। কারমাইল বাজার এলাকায় ও মুক্তিবাহিনী ৮ জন পাক দস্যুকে খতম ও তাদের ১২ জন সঙ্গীকে আহত করেছেন। চাপাতলা এলাকায় ছয়শত পাকিস্তানী দস্যুর একটি শক্ত ঘাঁটিতে অতর্কিতে হানা দিয়ে মুক্তিবাহিনী বহু পাকসেনাকে সমন সদনে প্রেরণ করেছেন বলে জানা গেছে। ৬ ঘণ্টা ব্যাপী ঐ তুমুল সংঘর্ষে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি একেবারেই নগন্য বলে খবর এসেছে। মুক্তিবাহিনী রঙ্গিচরা অঞ্চলেও অপর একটি অভিযান চালিয়ে ৩১ জন পাকসৈন্যকে খতম করেন।
নােয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া অঞ্চলে মুক্তিফৌজ তড়িৎগতিতে পাক সামরিক অবস্থানের উপর আক্রমণ চালালে বহু পাকিস্তানী সৈন্যের মৃত্যু হয়। ঢাকা শহর এখন দখলীকৃত বাঙলাদেশ হতে কার্যতঃ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, আমাদের অকুতােভয় গেরিলা বাহিনী সারা শহর এলাকায় তাদের গেরিলা কার্যক্রম বাড়িয়ে তােলার ফলে শত্রুসৈন্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ঢাকা থেকে শুরু হয়েছে সমস্ত বিদেশীদের অপসারণ। গত সপ্তাহে দুই দুইবার কাফুজারী করে পাক জল্লাদরা আবার ঢাকায় গণহত্যা চালিয়েছে কিন্তু কিছুতেই পার পাচ্ছেনা পাকিস্তানী পশুরা। প্রতিদিনই কিছু কিছু পাকদস্যু সাবাড় হচ্ছে আমাদের বীর গেরিলাদের হাতে।| সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, নােয়াখালীর ফেণী শহরটি মুক্তিবাহিনী অবরােধ করে রেখেছেন। ঐ জেলার বসিরহাট এলাকায় প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর মুক্তিফৌজ ঐ অঞ্চলটি দখল করেছেন। ঐ যুদ্ধে ১৫০ জনেরও অধিক পাকদস্যকে খতম করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিলােনিয়া ও আনন্দপুরের মধ্যে ১১ মাইল রাস্তায় ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন মুক্তিফৌজ। এখানে ১৫তম বেলুচ রেজিমেন্টের অর্ধেক সৈন্যকে খতম করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে কসবাতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানাে হয়েছে।
Reference:
অভিযান ॥ ১ : ২ | ২৫ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯