এবার সম্মুখসমরে মুক্তিবাহিনী, বর্গীদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়েছে
(ষ্টাফ রিপাের্টার)। মুজিবনগর, ২১শে নভেম্বর—আমাদের অসমসাহসী বীর মুক্তিযােদ্ধারা গেরিলা পদ্ধতির সুকৌশলী ও অভ্রান্ত চোরাগােপ্তা আক্রমণ চালানাের পাশাপাশি প্রচণ্ড সম্মুখসমরেও আঁপিয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের প্রায় সকল রণাঙ্গণ থেকেই তাদের বিজয় সাফল্যেরও নিত্য নতুন অগ্রাভিযানের চাঞ্চল্যকর, আনন্দদায়ক ও আশাপ্রদ সংবাদ প্রতিনিয়ত ভেসে আসছে। তাদেরকে জয়টীকা ও বিজয়মাল্য পরিয়ে দেবার জন্য বিজয়লক্ষ্মী যেন স্মিতহাস্যে ক্রমশঃ কাছে এগিয়ে আসছেন। সম্মুখ সমরে সাফল্য কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও যশােহর রণাঙ্গনে মুক্তিযােদ্ধারা প্রচণ্ড বিক্রমে পাক সেনাদের সঙ্গে মুখােমুখী যুদ্ধ। করে চলেছেন। এই যুদ্ধে পাক সেনাদের ভীষণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢাকা বেতারও এ কথার পরােক্ষ স্বীকৃতি জানিয়ে খবর প্রচার করেছে। এই সব যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি থেকে স্পষ্ট প্রমাণ মিলছে যে, বর্বর পাকসেনারা তাদের মদ-খেয়ে চাঙ্গা করা মনােবল যথেষ্ট পরিমাণে হারিয়ে ফেলেছে। জয়ের পর জয় খবরে প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী যশােহর জেলার মনিয়াপুকুর ও চৌগাছা সহজেই দখল করে নিয়েছেন। এখানে মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে উন্মত্ত পাক সেনারা জঙ্গী বিমানের সাহায্য নিচ্ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা রণাঙ্গনের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযােদ্ধারা তিনশত পাকসেনাকে খতম করে দিয়েছেন। গত রবিবার মুক্তিবাহিনী খুলনা জেলার বসন্তপুর দখল করে সাতক্ষীরার দিকে উৎফুল্ল অগ্রাভিযান চালিয়েছেন। রাজশাহী জেলার সিরাজগঞ্জ এবং রামপুরার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তারা অনায়াসে দখল করে নিয়েছেন।
মেঘনা নদীর প্রশান্ত বুকে অশান্তি সৃষ্টিকারী একটি অস্ত্রবাহী পাকজাহাজ আমাদের গেরিলা যােদ্ধারা গােলার ঘায়ে ডুবিয়ে দিয়েছেন। আরাে জানা গেছে যে, সিলেটের জাকিগঞ্জ ও আটগাঁওতে অবস্থিত পাকসেনাদের ঘাটিতে। মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড বিক্রমে আক্রমণ চালিয়ে পাক সেনাদের পশ্চাদপসারণে বাধ্য করেছে। ভারত সীমান্তে পাকসেনাদের গুলিবর্ষণ গত রবিবার থেকে পাকফৌজ পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের সীমান্তবর্তী বহু ভারতীয় গ্রামের উপর অবিরাম গােলাবর্ষণ করে চলেছে। এই সব গ্রামের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবাংলার টুঙ্গি, মতিয়ারি, বানপুর, বিষ্ণুপুর, গােবিন্দপুর ও গেদে । মতিয়ারি গ্রামের বিজয় দত্তের বাড়ীটা পাক গােলায় বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ভারত সীমান্তে অবস্থিত কাছাড়ের একটি শহর করিমগঞ্জে পাকসেনারা কামান ও মর্টার থেকে গােলাবর্ষণ করে। এর ফলে ৫ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত ও ৬ জন আহত হয়। ফলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এখানে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। যুদ্ধ কি লাগে লাগে? একটি খবরে প্রকাশ যে, পাঁচগড়ে ২ ব্যাটেলিয়ন পাকসৈন্য মােতায়েন করা হয়েছে। পাক সেনারা তাদের সীমান্তবর্তী সমস্ত এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসীরা এই আদেশ অগ্রাহ্য করলে পাকসেনারা নামাইপাড়া ও বােতাপাড়াবাদসহ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেয়। এদিকে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার বনগাঁ ও গাইঘাটা থানার সূর্যান্ত সূর্যোদয় পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে।
সাপ্তাহিক বাংলা ১১ : ৬
২৫ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯