সিলেটে মুক্তিযােদ্ধাদের বিরাট সাফল্য : কুশিয়ারা নদীর পূর্বতীরবর্তী অঞ্চল হানাদার মুক্ত
(ষ্টাফ রিপাের্টার)। | সিলেট, ২১ শে নভেম্বর—গত শনিবার সিলেট সেক্টরের বীর মুক্তিযােদ্ধারা ঈদের নামাজ আদায়ের পর। হানাদার দস্যুদের উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়ে এখানকার বিভিন্ন রণাঙ্গণে বিরাট সাফল্য অর্জন করেন। মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত সৈনিকরা জকিগঞ্জের অভ্যন্তর ভাগ পর্যন্ত ঐদিন এগিয়ে গেলে খানসেনারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সিলেট শহরাভিমুখে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। আমাদের বীর গেরিলারা রাত নটার দিকে জকিগঞ্জের শহরস্থ পাক-সামরিক ছাউনির উপর আক্রমণ পরিচালনা করলে মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত সৈনিকরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে যান এবং একঘণ্টার মধ্যেই উক্ত ছাউনির পতন ঘটাতে সক্ষম হন। ফলে কম পক্ষে ৫০ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং পলায়ন পর ১৮ জনকে মুক্তি যােদ্ধারা বন্দী করতে সক্ষম হন। কুশিয়ারা নদীর পূর্বতীর হানাদার মুক্ত আমাদের মুক্তি যােদ্ধারা পরের দিন রবিবার কুশিয়ারা নদীর পূর্ব তীর সম্পূর্ণ রূপে হানাদার মুক্ত করে নদীর পশ্চিম তীরেরও একটা বিরাট অংশ নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হন। মুক্তিযােদ্ধাদের অগ্রগতিতে এই সব এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের বীর দেশপ্রেমিকদের অভিনন্দন জানান।
আনন্দোৎসব হানাদার মুক্ত এই সব অঞ্চলের জনসাধারণ মুক্তি যােদ্ধাদের এই সাফল্যে আনন্দে উত্তেজনায় ও হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে এবং বাড়িতে বাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে বাঙলা দেশের বীর সৈনিকদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। কুশিয়ারা নদীর পূর্বতীরবর্তী হাজার হাজার মুক্তাঞ্চলবাসী নদীর পর পারে দাঁড়িয়ে এই অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলােকন করতে থাকেন। মুক্তিসেনারা আন্তর্জাতিক যুদ্ধরীতি পালন করেছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধরীতি অনুসারে নিহত পাক সৈনিকদেরকে মুক্তি যােদ্ধারা গার্ড অব অনারের মাধ্যমে পূর্ণ মর্যাদার সমাহিত করছেন। পক্ষান্তরে পাক-সেনাদের আচরণ এ ব্যাপারে যে কী অমানুষিক আজ আর সে কথা কারও অবিহিত নেই । আটগ্রাম মুক্ত সম্প্রতি সিলেট রণাঙ্গনের আটগ্রাম শত্রু শিবিরে হানা দিয়ে মুক্তিবাহিনী ১৬ জন শত্রুসেনা খতম করেছেন। এখানে প্রচণ্ড সংঘর্ষে পাকবাহিনীর দুর্ভেদ্য ঘাটি বিনষ্ট করা হয়েছে। আমাদের একজন অসীমসাহসী বীর সৈনিক সংঘর্ষে শাহাদত বরণ করে দেশমাতৃকার রূপ পরিশােধ করেছেন। অপর দুজন মুক্তিযােদ্ধা মৃদুভাবে আহত হয়েছেন। আটগ্রাম এলাকা বর্তমানে আমাদের মুক্তি যােদ্ধাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। সিলেট সাহারা ভিমুখে মুক্তি বাহিনী পরবর্তী খবরে জানা গেছে যে, আমাদের মুক্তি যােদ্ধারা শত্রু বাহিনীর সকল বাধা অতিক্রম করে সিলেট শহর আক্রমণের জন্য অগ্রসর হচ্ছেন এবং জকিগঞ্জ থেকে ২৮ মাইল অগ্রবর্তী চুরখাই ছাড়িয়ে সিলেট শহরের ১৩ মাইলের মধ্যে পৌঁছে গেছেন। আমাদের মুক্তিযােদ্ধাদের ধারণা অচিরেই তারা পাকসেনাদের দখলীকৃত সিলেট শহরের পতন ঘটাতে সক্ষম হবেন।
সাপ্তাহিক বাংলা এ ১ ৬
২৫ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯