You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.25 | মুক্তিযােদ্ধাদের সাফল্যে জঙ্গীচক্র দিশেহারা - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযােদ্ধাদের সাফল্যে জঙ্গীচক্র দিশেহারা

সারা দেশে জরুরী অবস্থা ঘােষণা, মালিক-ভুট্টোকে পিণ্ডি তলব

(স্টাফ রিপাের্টার) মুজিবনগর, ২৩ নভেম্বর বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর সাফল্যে আতঙ্কিত পাক সামরিক চক্রের নায়ক ইয়াহিয়া খান সমগ্র পাকিস্তানে জরুরী অবস্থা ঘােষণা করেছেন। সমগ্র পাকিস্তানই দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গীশাহীর কবলিত, সেই অবস্থাতেও জরুরী অবস্থার ঘােষণা, পরিস্থিতির কী পার্থক্য ঘটবে তা এখানের পর্যবেক্ষকদের স্পষ্ট নয়। তবে, এই জরুরী অবস্থা ঘােষণার কারণ প্রসঙ্গ যেভাবে ভারতের ঘাড়ে সব দোষ চাপানাে হয়েছে তার থেকে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ প্রশ্নটিকে আবার পাক-ভারত বিরােধরূপে আন্তর্জাতিক দরকারে হাজির করাই পাকিস্তানের লক্ষ্য। বি বি সির অপপ্রচার পাকিস্তানের সঙ্গে তাল রেখে বি বি সি’র সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ঢাকার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধ আসন্ন। ঐ রেডিওর সংবাদদাতা প্রায় পাক-ভাষ্যের অনুরূপ ভাষায় বলেছেন, যশােহর রণাঙ্গনে ভারতীয় সৈন্য এবং সােভিয়েত ট্যাঙ্ক দেখা গেছে। | বি বি সি রেডিও ঢাকাস্থ সংবাদদাতা রােনাল্ড রবসন-এর সংবাদ উদ্ধৃত করে বলেছেন যশােরে জোর লড়াই চলছে। সেখানে তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। তবে ঢাকায় যে ৩০ জন বিদেশী সাংবাদিক আছেন তাদের মধ্যে ৫ জন একটি ছােট বিমানে যশােরের দিকে গেছেন। ঐ রেডিও আরও বলেছে, ভারতীয় কামানগুলি যশাের বিমান বন্দরে গােলাবর্ষণ করেছে। ঐ কামানগুলি ১৩০ মিঃ মিঃ এবং ৩০ হাজার গজ দূরত্বে এর গােলা পড়তে পারে। রাওয়ালপিণ্ডি থেকে বি বি সির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ওখানে এখন যুদ্ধের উত্তেজনা। তিনি মনে করেন বাঙলাদেশের পরাজয়ের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাক বাহিনী পশ্চিম সীমান্তে আক্রমণ করতে পারে। তবে এই আক্রমণের আগে পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উথাপিত করবে।

জরুরী অবস্থা ঘােষণায় অল্প কিছু পরেই পাক রেডিও ঘােষণা করে যে পূর্ব বাংলার পুতুল গভৱনর এ, এম, মালিক এবং জেড, এ, ভুট্টো প্রেসিডেন্টের ডাকে রাওয়ালপিণ্ডি ছুটেছেন। এরই অল্প পরে পাক রেডিও ভূট্টো ও নুরুল আমিনের দুটি বিবৃতি প্রচার করে। এই দুই নেতাই প্রেসিডেন্টের সুরে সুর মিলিয়ে মুক্তিবাহিনীর অভিযানের জন্য ভারতকে অভিযােগ করেন এবং ভারতকে চূর্ণ করার হুঙ্কার ছাড়েন।  পিপলস পার্টির নায়ক ভুট্টো শাসিয়েছেন সমগ্র উপমহাদেশে রক্তের বন্যা বইবে। পি, ডি, পি। পার্টির নূরুল আমিন ভারতকে সম্প্রসারণবাদী বলে অভিযুক্ত করেছেন। পাক-রেডিও পরাজয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে অনেক হম্বিতম্বি করে পাক-রেডিও নিজেদের সাফল্যের যে প্রচার করে তার মাঝে স্বীকার করেছে যে কয়েকটি অঞ্চল তাদের হাত ছাড়া হয়েছে। | সরকারী সূত্রের সংবাদ উদ্ধৃত করে পাক-রেডিও বলেছে লড়াই চলছে যশাের, চট্টগ্রাম এবং শ্রীহটে। এর মধ্যে যশােরে সৈন্য সমাবেশ সবচেয়ে বেশী। এ মুখপাত্র অভিযোেগ করেছে, যশােরের ওপর কামান ও পদাতিক বাহিনী যুগপৎ আক্রমণ করছে। মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের এই ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে যে, ভারতীয়রা যশাের এবং শ্রীহট্ট। অঞ্চলে কয়েকটি ছােট্ট ছােট পকেট দখল করেছে। চট্টগ্রামেও অবস্থা অপরিবর্তিত দাবি করা হয়েছে। ঐ মুখপাত্র দাবি করেন যে কুমিল্লার কাছে একটি আক্রমণ ব্যর্থ করে দেওয়া হয়। অবশ্য পাক রেডিও আর এক ধাপ গলা চড়িয়ে বলেছে কুমিল্লা অঞ্চলে তারা এক ব্যাটেলিয়ান ভারতীয় সৈন্যকে ধ্বংস করেছে। আরও অভিযােগ করা হয়েছে ভারতীয় নৌবহর পাকিস্তানের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান বেতারে আজ বিকালে প্রেসিডেন্টের এই ঘােষণার সংক্ষিপ্ত ভাষ্য প্রচার করে বলা হয়েছে যে, বৈদেশিক আক্রমণের আশঙ্কায়’ এই জরুরী অবস্থার ঘােষণা করা হয়েছে।

আজ রাতের পাক রেডিওতে প্রচার করা হয়েছে, যে এই ঘােষণা তথাকথিত আজাদ কাশ্মীরেও প্রযােজ্য। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পাক সেনা বাহিনীর নিয়মিত সমাবেশের উদ্ভুত উত্তেজনার পরিণতিতেই এই জরুরী অবস্থা ঘােষিত হােল। স্মরণীয় যে, তিনি এর আগে ১২ অক্টোবর ভারত আক্রমণের হুমকী দিয়ে দেশবাসীর প্রতি এক বেতার ভাষণ দিয়েছিলেন। তাতে পাকিস্তানের ব্যাপারে ভারত হস্তক্ষেপ করছে বলে তিনি দোহাই পেড়েছিলেন। তার হুমকী বলবৎ রাখার জন্য তিনি পশ্চিম সীমান্ত বরাবর প্রচুর সৈন্য সমাবেশ করেছিলেন। পাকসেনারা পশ্চিম সীমান্ত বরাবর এবং জম্মু কাশীর যুদ্ধবিরতি সীমা বরাবর প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধ সম্ভার জড়াে করছিল। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ভারতীয় গ্রামগুলিতে তারা নিয়মিতভাবে প্রচণ্ড গােলাবর্ষণ করে চলে। ভারত সরকারের কাছে আরও সংবাদ আছে যে, পাক-বিমান ভারতীয় বিমানপােতগুলিকে আঘাত হানবার চেষ্টা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের এই সাজো সাজো রব দেখে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার জন্য সকল অবস্থা মােকাবিলা করার জন্য সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। গত ১৫ নভেম্বর লােকসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রীজগজীবন রাম বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি।

সাপ্তাহিক বাংলা ১: ৬

২৫ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯