You dont have javascript enabled! Please enable it!

নতুন পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের দুৰ্বার অগ্রগতি

(রণাঙ্গন প্রতিনিধি) মুজিবনগর, ২৩শে নভেম্বর-পূৰ্ব্ব, পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণ, দেশের সকল রণাঙ্গনে এবং সমগ্র অভ্যন্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যায়ে উন্নতি হয়েছে চুড়ান্ত লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। গেরিলা পদ্ধতির চোরাগােপ্তা আক্রমণের ধারা আজ সম্পূর্ণরূপে এক নতুন ও তীব্র প্রত্যাঘাতের বাঁকে মােড় নিয়েছে। আজকের যুদ্ধকে আজ আর কিছুতেই সন্ত্রাসবাদী হামলা বলে চিহ্নিত করার উপায় নেই—এ যুদ্ধ স্বাধীনতার যুদ্ধ উপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে স্বদেশিকতার যুদ্ধ। স্বাধীনতা সংগ্রামের অষ্টম ও নবম মাসের কান্তিকালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গতি প্রকৃতি দুই-ই পাল্টে গেছে। শ্লথগতির গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধ আজ রূপ নিয়েছে সম্মুখ সমরের তীব্রতায় দীর্ঘদিন আঘাত খেয়ে বাঙলার মুক্তিযােদ্ধারা আজ প্রত্যাঘাত হানতে শুরু করেছে—খানসেনারা তখন ঘাটি ছেড়ে পালাবার পথ পাচ্ছেনা। চলতি সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন রণাঙ্গনে কমপক্ষে ১৩টি পাকিস্তানী সেনা ছাউনি দখল করে নিয়েছেন। পশ্চিম রণাঙ্গনের যশাের ক্যান্টনমেন্ট অবরুদ্ধ, উত্তর পূর্ব রণাঙ্গনের সিলেটের পতন আসন্ন দক্ষিণ রণাঙ্গনের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর সর্বত্র জোর লড়াই অব্যাহত রয়েছে। কুমিল্লার সানন্দা নদী অঞ্চল হানাদার মুক্ত। দেশের অভ্যন্তর ভাগে গােটা টাঙ্গাইল দেশ এবং ময়মনসিংহ জেলার প্রায় সবটাই  মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে এদিকে পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম রণাঙ্গনের মুক্তিযােদ্ধারা একযােগে যশাের ও খুলনার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। খানসেনারা তখন বিমান বাহিনী ব্যবহার করতেও বড় একটা সাহস পাচ্ছেনা কারণ মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে দূর পাল্লার বিমান বিধ্বংসী কামান সহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের বড় একটা অভাব এদিকে ঢাকা শহর থেকে জানমাল নিয়ে পশ্চিমা প্রভুরা সব হাওয়াই জাহাজে পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ফলে ঢাকাসহ পাক অধিকৃত সমস্ত শহরাঞ্চল এখন তীব্র সন্ত্রাস দেখা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের ধারণা আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে বাঙলাদেশের দশটি জেলা শহর সহ অন্ত তঃ দুটি পাক ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটাতে সক্ষম হবেন।

সাঞ্জাহিক বাংলা ১: ৬।

২৫ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!