You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তি যুদ্ধ দিকে দিকে

(স্টাফ রিপাের্টার) মুজিবনগর, ২৩শে নভেম্বর আজ এখান থেকে প্রকাশিত বাঙলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরের এক সংগ্রাম বুলেটিনে বলা হয়েছে যে, মুক্তিবাহিনী গেরিলাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে গত দুদিনে পাক ফৌজ তাদের অবস্থানগুলি থেকে দ্রুত পিছু হটে যাচ্ছে। বিগত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেড়শত পাক সেনা মুক্তিবাহিনী গেরিলাদের হাতে খতম হয়েছে বলে জানান হয়েছে।  পশ্চাদপসরণকারী পাক সেনারা প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালাচ্ছে। সেই সবই এখন মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা দখল করে নিয়েছে। গত কয়েকদিন মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকফৌজ বহু জায়গায় পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে প্রচারিত এক সংবাদ বুলেটিনে বলা হয় যে, বাঙলাদেশের বিভিন্ন অংশ প্রায় ৮ হাজার বর্গমাইল এলাকা শত্রু মুক্ত হয়েছে এবং মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। মুক্তিফৌজ রংপুর এবং দিনাজপুর জেলার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। শ্রীহট্ট জেলার বালা এবং নৌকুচি থানা এলাকা মুক্তিফেীজের দখলে এসেছে  বাঙলাদেশ মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা ঢাকা জেলার বিভিন্ন মহকুমা শহরের ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহন করেছেন। ঢাকার অন্যতম মহকুমা শহর মুন্সিগঞ্জ থেকে গেরিলা আক্রমণের ফলে পাকবাহিনী পলায়ন করেছে। গেরিলাদের আক্রমণে বেশ কিছু পাকবাহিনী নিহত হয়েছে। গেরিলাদের এই সাফল্যের পর স্থানীয় অধিবাসীগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল করেন। বি বি সি থেকে প্রচারিত সংবাদেও এই ঘটনার আজ উল্লেখ করা হয়েছে। | ১১ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার কমলপুরে পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালান। উভয় পক্ষই মর্টার সহযােগে পরস্পরকে আক্রমণ করেন। মুক্তিবাহিনীর ক্ষিপ্র আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনীর ৩জন খতম ও ১২ জন জখম হয়। অপর এক অভিযানে মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার চিওড়া অঞ্চলে ২ জন পাক সৈন্যকে খতম ও তিনজনকে জখম করেন।

গত ৫ই ও ৬ই নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার হরিণগােলা অঞ্চলে গেরিলা তৎপরতা চালানাের ফলে ৭ জন শত্রু সৈন্য নিহত ও ৮জন আহত হয়। এ জেলাতেই গেরিলাদল এর পূর্বে আরেক আক্রমণ চালিয়ে হুগলী চা বাগানে ৫জন শত্রুসৈন্যকে খতম ও ৫ জনকে জখম করেন। | ৮ই নভেম্বর, তারিখে কুমিল্লার কোতােয়ালী থানার কাটেশ্বরে পাক সৈন্যরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছিল। সে সময় তড়িৎ গতিতে আক্রমণ চালিয়ে বীর মুক্তি যােদ্ধারা ২০জন শত্রুসৈন্য খতম করেন। বিলম্বে প্রাপ্ত এক খবরে জানা যায় যে, ৫ই নভেম্বর সদ্যমুক্ত বিলােনিয়া এবং পরশুরাম অঞ্চলে পাকবাহিনী এক জোর আক্রমণ চালায়। মুক্তিফৌজ পাকবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালালে এক তীব্র সংঘর্ষ বাধে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে তাল সামলাতে না পেরে পাক বাহিনী পিছু হটে যায়। এই সংঘর্ষে ক্যাপটেন সহ ৮ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর ২ জন সৈনিক শহীদ হন। দু’দিন বাদে শত্রুর দুই কোম্পানী  সৈন্য ঐ অঞ্চলে আবার হামলা চালায়। অসীমসাহসী মুক্তি যােদ্ধারা প্রবল বিক্রমে দখলদার বাহিনীর উপর পাল্টা আঘাত হানে। দুইঘণ্টা ব্যাপী মুক্তিযােদ্ধারা কৌশলের সাথে মর্টার ও মেশিনগান নিয়ে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুদের বিতাড়িত করেন।

এই সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৩৫ জন পাকিস্তানী সেনা খতম হয় এবং মেসিনগানসহ বহু গােলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। বাংলাদেশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ থানা এবং পাবনা জেলার রায়গঞ্জ থানা সম্পূর্ণ শক্র কবল মুক্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ ও ঢাকার মধ্যবর্তী সমস্ত ব্রীজ ও কালভার্ট উড়িয়ে দেবার ফলে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ জেলা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে শত্ৰু-বাহিনীর চলাচলে এক দারুণ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।  সম্প্রতি বাংলাদেশের বীর মুক্তি যােদ্ধারা প্রবল এক আক্রমণ চালিয়ে ঢাকা জেলার মুন্সিগঞ্জ থানাটিও মুক্ত করেছেন।

কুমিল্লা থেকে প্রাপ্ত এক খবরে প্রকাশ অসম সাহসী বীর যােদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে বিরােনীয়া রেল স্টেশনটি মুক্ত করেছেন এবং সে অঞ্চলে এখন স্বাধীন বাঙলার পতাকা উড্ডীন রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার সন্নিকটস্থ মনােহরদীতে পাক সামরিক অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী জিসিও সহ ২৫ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করেছেন। মুক্তিবাহিনী এই সংঘর্ষে ২টি মেশনিগান ও একটি দুরবীন সহ ৫৫টি রাইফেল হস্তগত করেছেন। এর কিছুদিন আগে মনােহরদী সংলগ্ন হাতীরদিয়া এলাকায় মুক্তিবাহিনী গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে ৮ জন পাক সৈন্যকে খতম করেন। নােয়াখালী জেলার হাজতখােলাতে মুক্তি বাহিনীর এক অভিযানে ৩৫জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। এই সংঘর্ষে অসমসাহসী একজন মুক্তিযােদ্ধা আত্মােৎসর্গ করেন। কিছুদিন আগে মুক্তিবাহিনী পাবনা বগুড়া সংলগ্ন শহরটায় এক আক্রমণ চালিয়ে লেঃ কর্ণেল রহমত খান ও সুবাদার নওয়াব আলি সহ বহু পাকসৈন্য খতম করেন।

সাপ্তাহিক বাংলা ১: ৬ 

২৫ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!