You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক পাকিস্তান
১০ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে মুজিবকে মুক্তি না দিলে আওয়ামী লীগ বৈঠকে যোগ দেবে না
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবরকে মুক্তি না দিলে ৬- দফা পন্থী আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত আলোচনা বৈঠকে যোগ দেবে না। গতকাল রোববার ৬ দফা পন্থী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহক কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দলের অস্থায়ী সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য ছাড়াও এম এম এ এবং এম পি এ গণ যোগদান করেন।
এই সভায় প্রস্তাবিত ১৭ই ফেব্রুয়ারী পিণ্ডিতে রাজনৈতিক আলোচনা বৈঠকে যোগদান সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, আলোচনা বৈঠকে যোগদানের পূর্বশর্ত হিসেবে আগরতলা মামলা তুলে নিয়ে শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দিতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তিদান, সকল গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার ও সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া জরুরী অবস্থাও দেশ হতে তুলে নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ মহল হতে জানা যায় যে, সভায় সদস্যগণ এই অভিমত প্রকাশ করেন যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার না করে যদি শুধু শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয় তাহলে আওয়ামী লীগ বৈঠকে যোগদানে রাজী হবে না।
তারা মনে করেন যে মামলায় অভিযুক্ত থেকে বন্দী অবস্থায় খোলামন নিয়ে এধরনের আলোচনা বৈঠকে কেউ যোগ দিতে পারে না। একজন মুক্ত ও একজন বন্দীর মধ্যে খোলাখুলি কোন আলোচনাও হতে পারে না। তা ছাড়া এই শর্তগুলো পূরণ করার জন্য সংবিধানের রদবদলের কোন দরকার নেই। প্রশাসনিক নির্দেশ বলেই এইসব দাবী পূরণ করা যেতে পারে।
এই সভায় সাম্প্রতিক গুলিবর্ষণে নিহতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারীর হরতালকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্যও সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান হয়। কার্যনির্বাহক কমিটির এই বৈঠক মুলতবী রাখা হয়েছে।

শেখ মুজিবের সাথে আলোচনা
গতকাল সৈয়দ নজরুল ইসলাম খোন্দকার মোশতাক আহমদ ও মোল্লা জালালুদ্দিন আহমদ শেখ মুজিবর রহমানের সাথে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে মিলিত হন। তারা নওয়াবজাদা নসরুল্লার সাথেও এক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হবেন।
আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রদত্ত এক প্রেস রিলিজে বলা হয় যে, গতকাল শেখ মুজিবর রহমানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহক কমিটির বৈঠকে ইত্তেফাক মুদ্রণালয় নিউনেশন প্রিন্টিং প্রেসের বাজেয়াফত করণ আদেশ প্রত্যাহার করায় গভীর সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, ইত্তেফাক প্রকাশের অনুমতি দান ছাত্র-শ্রমিক ও জনগণের এক কথায় দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনেরই জয় সূচিত হয়েছে।
ইত্তেফাক সম্পাদক তার পত্রিকার মাধ্যমে জনগণের যে সেবা করেছেন তার জন্য তাকে অভিনন্দন জানান হয় এবং প্রেস বাজেয়াফত করার দরুন তার যে লোকসান হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দানের দাবী জানান হয়।
সভায়, ইত্তেফাক ঢাকা টাইমস ও পূর্বাণীতে নিযুক্ত পেশাদার সাংবাদিকদের এবং নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারীদের পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ থাকাকালীন পুরো বেতন দানের জন্যও সরকারের নিকট দাবী জানান হয়।
আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী এম, এন, এ গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে ১৪ই ফেব্রুয়ারী পূর্ণ হরতাল এবং ১৬ই ফেব্রুয়ারী ৬ দফা দিবস পালনের জন্য দলের সকল ইউনিটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!